ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসা একটি বহুল চাহিদাসম্পন্ন এবং জনপ্রিয় ব্যবসা। সমস্ত শ্রেণীর মানুষের মধ্যেই এই ব্যাবসার চাহিদা ক্রমশ বিস্তারিত হচ্ছে। এই ব্যবসাকে সফল করতে চাই যথেষ্ট পরিশ্রম এবং সঠিক পরিকল্পনা। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এর নানান দিক রয়েছে তবে নতুন ব্যবসার উদ্যোগীরা প্ৰথমে বেছে নিতে পারেন ইভেন্টের সাজসজ্জার দিকটি। এই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যাবসার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ইভেন্টের সাজসজ্জা। এই ব্যবসা বাড়িতে বসে কিভাবে করা যাবে এবং এই ব্যাবসার সুযোগ ,পরিকল্পনা , পুঁজি বিনিয়োগ সমন্ধিত সমস্ত রকম তথ্য এই সংকলনটির মাধ্যমে জানানো হবে।
এই ব্যাবসার সুযোগ ব্যবস্থা:
এই ব্যবসা দুরকম উপায়ে শুর করা যেতে পারে, প্রথমত যৌথ ভাবে দ্বিতীয়ত স্বাধীন ভাবে । সমস্ত অনুষ্ঠান এর কর্মসূচি সবসময় এক পক্ষ থেকে পরিকল্পিত হওয়া বাধ্যতামূলক নয়, কোন কোন সময় ক্রেতারাও তা আগে থেকে পরিকল্পনা করে রাখতেই পারেন। এই ব্যবসার ক্ষেত্রে পরিষেবার গুণগত মান ব্যবসায় সাফল্য এনে দেয়। আপনার ব্যাবসার বিচার এবং পুনঃমূল্যায়ন এর উপর নির্ধারিত হয় আপনি কত সংখ্যক অর্ডার গ্রহণ করছেন তার ভিত্তিতে। যে কোনো বিয়ে বাড়ি ,জন্মদিন এবং ব্যবসায়িক কোন ক্ষেত্রে এরকম অনেক সুযোগ পাওয়া যায় এই ব্যবসায়।
ইভেন্ট সাজসজ্জা ব্যাবসার পরিকল্পনা:
প্রস্থতিকরনের খরচ:
- প্রথমত যে জায়গাতে ইভেন্ট হবে সেই জায়গার গবেষণা ভাল ভাবে করতে হবে অর্থাৎ সেই জায়গাটি সম্পর্কে একটি সঠিক ও সম্যক ধারণা থাকা আবশ্যিক। কারণ এটা আপনার ব্যাবসার লাভদায়ক অংশ। আপনার ব্যবসা আপনার জন্য কত খানি ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দেবে তা মূলত এটির উপরই নির্ভরশীল।
- দ্বিতীয়ত আপনার ব্যাবসার আয়তন এবং প্রয়োজনীয় জিনিসের একটি তালিকা প্রস্তুত করুন। আপনার বিনিয়োগ এর ক্ষমতা অনুযায়ী যে কোনও জিনিস কিনতে বা ভাড়া নিতে পারেন। এই ব্যাবসার ক্ষেত্রে সাজসজ্জার জন্য বিশেষ কিছু জিনিস বা সামগ্রী আগে থেকে কিনে রাখার প্রয়োজন হয় না। অর্ডার এবং অনুষ্ঠান এর ধরন অনুযায়ী জিনিস কিনতে হয়। এই ব্যাবসা ন্যূনতম পুঁজির সাহায্যে শুরু করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে আপনার অফিসের খরচ ও হবে খুবই যৎ সামান্য।
বাড়িতে /ছোট অফিসে বসেই পরিকল্পনা:
এই ব্যাবসা চালানোর জন্য জায়গার প্রয়োজনীয়তা খুবই সামান্য। আপনারা জানবেন এই ব্যাবসার জন্য নিজস্ব কোনও বড় অফিস এর প্রয়োজন হয়না, যেটুকু শুধু ক্রেতাকে প্রদর্শনীর জন্য অতি আবশ্যক সেই টুকুই এই ব্যবসার জন্য প্রয়োজন। তবে যাইহোক এই ক্ষেত্রে আপনি কোন গুদাম ঘর ভাড়া করতে পারেন যেখানে আপনি আপনার ব্যাবসার জিনিস রাখতে পারেন শুধু একটি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে গুদাম ঘরের অবস্থান যেন কোনও ভাবে আপনার ব্যবসাকে প্রভাবিত করতে না পারে।
আপনার প্রাণবন্ত অভ্যর্থনা এবং মনোরম পরিবেশ আপনার ব্যবসাকে ক্রেতাদের কাছে আরও বেশি করে গ্রহণযোগ্য করে তুলবে।
শ্রমিক এর প্রয়োজনীয়তা:
এই ব্যাবসায় শ্রমিক এর বিশেষ ভাবে প্রয়োজন। শ্রমিকের সংখ্যা পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকলে ইভেন্ট এর কর্মসূচি যথাযত সময়ে সম্পন্ন করা যায় যেটা ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং আপনার ব্যবসার জন্য যথেষ্ট লাভজনক হিসাবে উপস্থাপিত হয়। আপনি কিছু নিজস্ব ডিজাইনার ও রাখতে পারেন যা আপনাকে সাজসজ্জার ক্ষেত্রে নতুন পরিকল্পনা দিতে পারে। কারন মনে রাখবেন যে যায়নি আপনার কাজে যত অভিনবত্ব দেখাবেন ততই আপনার কাজটি সকলের কাছে আরও বেশি করে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে এবং আপনি ততই ব্যবসায় শ্রী বৃদ্ধি করতে থাকবেন।
সংগ্রহ ও সরাঞ্জাম:
আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র সংগ্রহ এই ব্যাবসার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বল্প খরচের জিনিসগুলি কিনে কাজ চালানোই ভাল এবং বেশি দামের জিনিসগুলির ক্ষেত্রে অহেতুক বেশি বিনিয়োগ না করে তা ভাড়া নেওয়াই অপেক্ষাকৃত লাভজনক হয়। যেমন সিঁড়ি ,আলো, পিন, আরো ছোট খাটো জিনিস যা সর্বদাই আপনার কাজে প্রয়োজন পড়বে সেগুলি কিনে নেওয়াই ভাল। পরে ক্রেতার পছন্দ অনুযায়ী জিনিস এর বদল হতেই পারে।
সাজসজ্জার জিনিস পরিচর্যা:
এই ব্যাবসা চালানোর জন্য সব থেকে অন্তিম এবং গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটি হল সাজসজ্জার জিনিসের পরিচর্যা। আপনাকে এই বিষয়ে একটি জিনিসের প্রতি সদা সচেতন থাকতে হবে এবং সেটি হলো আপনি যত বার ধরেই সাজ সজ্জার জিনিস ব্যবহার করছেন না কেন তা প্রতি বার যেন যথেষ্ট পরিচ্ছন্ন রাখা হয় এবং পরবর্তী কালে পুনরায় তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতার মন নিয়ে যেন কোন প্রকার প্রশ্ন চিহ্ন না
ওঠে। এটার জন্য আপনাকে বেশ কিছু বিনিয়োগ করতে হবে।
সাজসজ্জার মূল্য নির্ধারণ করা :
সাজসজ্জার মূল্য নির্ধারণ করা এই ব্যবসার ক্ষেত্রে একটি কঠিন কাজ এবং তা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণও বটে। ব্যাবসার প্রথম দিকে ক্রেতার পছন্দ অনুযায়ী কাজ করে যখন আপনি নিজের জায়গা তৈরি করতে পারবেন তখন নিজের নির্দিষ্ট মুল্য ক্রেতার সামনে রাখতে পারেন। কিছু ডিসকাউন্ট কিংবা আকর্ষণীয় কিছু অফার আপনার ব্যবসাকে আরও বেশি লাভজনক করবে। মনে রাখবেন এই মূল্য বা পারিশ্রমিকের ব্যাপারটি এই প্রতিযোগিতামূলক বাজারে আপনার বিভিন্ন প্রতিদ্বন্দ্বীর থেকে আপনাকে অনেকটাই এগিয়ে রাখবে। অবশ্যই খেয়াল রাখবেন আপনার পরিষেবা সহজলভ্য এবং সস্তার করে তুলতে কোন ভাবেই যেন গুনগত মানের সাথে আপোষ না করা হয়।
অর্ডার গ্রহণের পর:
আপনি অর্ডার গ্রহণের পর বেশ কিছু জিনিস দেখে নেওয়া আপনার ব্যবসার পক্ষে খুবই প্রয়োজনীয়।
*প্রথমত ইভেন্ট এর সময় সবং স্থান
*দ্বিতীয়ত সাজসজ্জার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন আজকাল বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যদিও কৃত্রিম ফুলের ব্যবহার বেশি হয় কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী আপনাকে অবশ্যই প্রকৃত ফুলের ব্যবহারও করতে হতে পারে , সেক্ষেত্রে আগে থেকেই এসব ব্যবস্থা করতে হবে।
*ইভেন্ট এর জন্য পর্যাপ্ত শ্রমিকের ব্যবস্থা। যারা সময়ের মধ্যে ভাল ভাবে কাজের দেখাশোনা করতে পারে এবং এই বিষয়ে কাজে যথেষ্ট দক্ষ ও পটু ।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাবসার প্রচার :
আজকের দিনে সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের জীবনে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। আমরা প্রায় প্রত্যেকে নানান সামাজিক মাধ্যমের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িত আছি। আপনি সোশ্যাল মিডিয়াতে এই ব্যাবসার প্রচার করতে পারেন। আপনি নিজের ব্যাবসার সমস্ত তথ্য ,মূল্য ইত্যাদি এখানে প্রকাশ করতে পারেন যা ক্রেতার পক্ষে সহজে বোধগম্য হয় এবং তা যথেষ্ট আকর্ষণীয়ও হয়ে ওঠে। সকল বয়সের ক্রেতাদের মধ্যে আপনার ব্যবসাকে পৌঁছে দিতে হবে যাতে খুব সহজেই তা ছড়িয়ে পড়ে এবং আপনার ব্যবসার যথেষ্ট প্রচার ঘটে।
নতুন টেকনোলোজির প্রয়োগ:
নতুন নতুন টেকনোলোজি আপনার ব্যবসাকে সফলতার শিখরে পৌঁছে দেবে । যেমন নতুন সাজসজ্জার জন্য আলো ,অন্যান্য দ্রব্যসামগ্রী, ইভেন্ট পরিচালনা করার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা যা আপনাকে অন্যের থেকে পৃথক হিসাবে প্রতিপন্ন করতে সাহায্য করবে। আপনার সৃজনশীল মানসিকতাই আপনার ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। এক্ষেত্রে আপনি কোন পরামর্শকের সাহায্যও নিতে পারেন।
সারমর্ম:
আপনার পরিষেবাই আপনার ব্যবসাকে আরও সাফল্যমন্ডিত করে তুলতে পারে। ক্রেতার পছন্দকে ভীষণ ভাবে গুরুত্ব দেওয়াই আপনার প্রধান ও একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত।
সামাজিক যোগাযোগ রাখা এবং উচ্চ মনের সাজসজ্জার জিনিস রাখাই হল ক্রেতাকে হাতে রাখার আসল চাবিকাঠি। আপনার ব্যবহার এবং বিশ্বস্ততা হল সুবকিছুর উর্ধে যা আপনার ব্যবসা কে সুদীর্ঘ পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।