কিভাবে ড্রাইভিং স্কুলের ব্যবসা শুরু করবেন?
স্বনির্ভর হওয়ার সময়ে দাঁড়িয়ে আজ প্রায় অনেক মানুষই অন্যান্য কাজের মতো ড্রাইভিংও শিখে রাখার কথা ভাবছে।আর সেই বিষয়ে তারা সরকার অনুমোদিত ড্রাইভিং স্কুলের ওপরই নির্ভর করতে চায়। কয়েকটি ব্যাপার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে নিয়ে আপনিও অনায়াসে ড্রাইভিং স্কুলের ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। যেমন আপনার রাজ্যে ড্রাইভিং স্কুল খোলার কি কি নিয়ম আছে ,আপনার এলাকায় কাদের ড্রাইভিং স্কুল আছে,আপনার ব্যবসাকে কীভাবে প্রচার করবেন ইত্যাদি। যদি এই সব নিয়ম মেনে আপনি ড্রাইভিং স্কুল খুলতে পারেন তাহলে এই ব্যবসায় সাফল্য অবশ্যম্ভাবী।
যেকোনো ব্যবসা শুরুর থেকে দাঁড় করাতে অবশ্যই অনেক পরিশ্রমের প্রয়োজন, কিন্তু নিম্নলিখিত ১০ টি ধাপের মাধ্যমে আপনার ড্রাইভিং স্কুলের ব্যবসা শুরু করার পথ অনেকটাই সহজ হবে।
ড্রাইভিং স্কুল শুরুর ১০ টি ধাপঃ
একনজরে দেখে নেওয়া যাক ড্রাইভিং স্কুল শুরু করার ১০ টি ধাপ
১। নিজস্ব রাজ্যে ড্রাইভিং স্কুল আইনিকরনের ব্যাপারে জানুন
২। ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট তৈরি করুন
৩। নিজের প্রতিযোগীদের জানুন
৪। আপনার ড্রাইভিং স্কুলের বিভিন্ন পরিষেবা এবং মূল্যের তালিকা বানান
৫। ড্রাইভিং প্রশিক্ষকের লাইসেন্স দেখুন
৬। আপনার পরিষেবার পরিকল্পনা করুন
৭। ব্যবসার প্রচার
৮। ওয়েবে নিজের উপস্থিতি গড়ে তুলুন
৯। আপনার গ্রাহকদের ইতিবাচক পর্যালোচনা করতে বলুন
১০। সুসংহত থাকুন।
চলুন এবার উপরোক্ত ধাপগুলি সম্পর্কে একটু বিস্তারিতভাবে জানা যাক।
১। নিজস্ব রাজ্যে ড্রাইভিং স্কুল আইনিকরনের ব্যাপারে জানুনঃ
প্রথমেই আপনার জায়গায় ড্রাইভিং স্কুল খোলার ব্যাপারে সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করুন। যেমন কি কি নথি আপনাকে জমা দিতে হবে বা কত টাকা খরচ হবে অথবা আপনার ব্যবসা শুরু করার অনুমতি পেতে কতদিন সময় লাগবে ইত্যাদি। এই সকল ব্যাপারে সঠিক তথ্য থাকলে ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনি একটি ধাপ এগিয়ে যাবেন।
২। ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট তৈরি করুনঃ
এখন যখন আপনি জানেন আপনার ব্যবসা আইনিকরন করতে কত টাকা খরচ হবে তখন আর কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আপনি খুব সহজেই আপনার ব্যবসা শুরু করার জন্য নুন্যতম কত মূলধন প্রয়োজন তা হিসেব করতে পারবেন।
- ড্রাইভিং শেখানোর জন্য আপনাকে গাড়ি কিনতে হবে কিনা এবং কটা কিনতে হবে?
- আপনার অফিসের জন্য কি জায়গা ভাড়া লাগবে?
- গাড়ির রক্ষনাবেক্ষনের খরচ
- পেট্রোল/ ডিজেল খরচ
- ব্যবসার প্রচারের জন্য বিজ্ঞাপনের খরচ
ব্যবসা শুরুর আগে একটা বাজেট করা থাকলে মূলধন জোগাড় করা অনেকটাই সহজ হয়।
৩। নিজের প্রতিযোগীদের চিনুনঃ
পরবর্তী ধাপ হল নিজের প্রতিযোগীদের চেনা। আপনি যত ভালো করে আপনার প্রতিযোগীদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন তত ভালো আপনি তাদেরকে চিনতে পারবেন।এবং ব্যবসায় তাদের দুর্বল জায়গা খুঁজে নিজেকে আর ভালো করে প্রস্তুত করতে পারবেন এবং অনায়াসে তাদেরকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যেতে পারবেন। আপনার এলাকায় কটা ড্রাইভিং স্কুল আছে এবং তারা কি কি পরিষেবা দিচ্ছে তা জেনে আপনি কি কি পরিষেবা গ্রাহকদের দেবেন তার একটি ধারণা করতে পারবেন।
৪। আপনার ড্রাইভিং স্কুলের বিভিন্ন পরিষেবা এবং মূল্যের তালিকা বানানঃ
যেহেতু আপনি পূর্বের ধাপ ইতিমধ্যেই বিশ্লেষণ করেছেন তাহলে আপনার একটা স্পষ্ট ধারণা আছে ঐ এলাকাতে আপনার প্রতিযোগীরা গ্রাহকদের কত টাকার বিনিময়ে কি কি পরিষেবা দিচ্ছে । ব্যবসা শুরু করার সময় সম্ভাব্য গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে গেলে আপনাকে বিনামূল্যে বা ছাড়ে কোন পরিষেবা দিতে হতে পারে। যেমন ১ মাসের মধ্যে ভর্তি হলে ১০% ছাড় অথবা ১ মাসের জন্য ডেমো ক্লাস বিনামূল্যে। তবে আপনার লক্ষ্য হওয়া উচিৎ আপনি যেন ব্যবসার প্রথম দিন থেকেই লাভ করতে পারেন।
৫। ড্রাইভিং প্রশিক্ষকের লাইসেন্স দেখুনঃ
আশা করা যায় এই মুহূর্তে আপনি ড্রাইভিং স্কুল খোলার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সকল তথ্য জানেন- যেমন আপনি কি কি পরিষেবা দেবেন , আপনার অফিসের জন্য জায়গা লাগবে কিনা, আপনি কোন জায়গার গ্রাহকদের লক্ষ্য করছেন, ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে আপনার বাজেট কত।এরপর আপনি আপনার প্রশিক্ষকদের লাইসেন্স এর ব্যবস্থা করলে পরেই ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।
৬। আপনার পরিষেবার পরিকল্পনা করুনঃ
এখন যখন আপনি ব্যবসা শুরু করার জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত তখন আপনি আপনার গ্রাহকদের কি কি পরিষেবা দিতে চাইছেন সেই ব্যাপারে পরিকল্পনা করে নিতে হবে। ধরুন আপনি ১৮ দিনের একটা ক্লাসের কথা ভাবলেন, সপ্তাহে ৩ দিন করে ৬ সপ্তাহের জন্য। আর যারা শনিবার বা রবিবার ছাড়া আসতে পারবেন না তাদের জন্য আলাদা একটা পরিষেবার কথা ভাবলেন। শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য একটা ব্যাচ তৈরি করতে পারেন। এইভাবে সম্ভাবনীয় সকল প্রকার বিষয় ভেবে নিয়ে একটা তালিকা প্রস্তুত করুন এবং তাদের মূল্য নির্ধারণ করুন।
৭। ব্যবসার প্রচারঃ
এখন আপনার মূল লক্ষ্য হল প্রথম গ্রাহক খোঁজা ।এই জন্য আপনার ব্যবসার প্রচারের প্রয়োজন। আপনি অনেক উপায়ে ব্যবসার প্রচার করে থাকতে পারেন,তবে তাদের মধ্যে অন্যতম কয়েকটি কে নীচে তুলে ধরা হল
- গুগল
- সামাজিক মাধ্যম ( সোশাল মিডিয়া )
- উচ্চ বিদ্যালয় , কলেজের সামনে বিজ্ঞাপন দেওয়া
- এলাকার পরিচিত অন্য কোন ব্যবসার সাথে অংশীদার হওয়া
৮। ওয়েবে নিজের উপস্থিতি গড়ে তুলুনঃ
আপনার ব্যবসাকে জনসাধারণের মাঝে তুলে ধরার জন্য সামাজিক মাধ্যমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কয়েক বছর আগেও একটা ব্যবসাকে প্রচার করার জন্য লোকমুখই যথেষ্ট ছিল কিন্তু এই সময়ে দাঁড়িয়ে আমাদের যেকোনো বিষয়েই কোন তথ্যের প্রয়োজন হলে আমরা সামাজিক মাধ্যমেই আগে তার খোঁজ করি। আর যেহেতু বিনামুল্যেই সামাজিক মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খোলা যায় তাই তার সুবিধা নেওয়াই যেতে পারে। এর মাধ্যমে আপনি সম্ভাব্য অনেক গ্রাহকদের খুঁজে পাবেন। অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যখন কেউ আপনার ব্যবসার নাম দিয়ে বা “ড্রাইভিং স্কুল + আপনার এলাকার নাম” দিয়ে গুগল করছে তখন আপনার স্কুলের নাম সার্চ ইঞ্জিন-এ দেখাচ্ছে কিনা।
৯। আপনার গ্রাহকদের ইতিবাচক পর্যালোচনা করতে বলুনঃ
আপনি যখন নিজের ব্র্যান্ডটি তৈরি করছেন, মনে রাখবেন অনলাইন পর্যালোচনাগুলি আপনাকে সহায়তা করবে। বাবা-মা, কিশোর, বয়স্ক ছাত্র এবং অন্য যে কোনও গ্রাহকদের আপনাকে অনলাইনে ইতিবাচক পর্যালোচনা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করুন। আপনার অনলাইন খ্যাতি উন্নত করার সাথে আপনি আপনার প্রতিযোগিদের থেকে নিজেকে এগিয়ে রাখতে পারবেন। এছাড়াও, আপনার অনলাইন পর্যালোচনাগুলির উন্নতির সাথে সাথে আপনি নিজের পরিষেবার মূল্য বাড়াতে সক্ষম হবেন – সর্বোপরি, আপনি নিজের এলাকায় নাম করা এক ড্রাইভিং স্কুল হিসেবে নিজের ব্যবসাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন।
১০। সুসংহত থাকুনঃ
আপনি যখন এই জায়গায় পৌঁছে গেছেন তখন আপনি সাফল্যের দিকে অনেকটাই এগিয়ে এসেছেন। আপনার গ্রাহকদের তালিকা ঠিক করে রাখুন। এইজন্য আপনি অনেক রকমের সফটওয়্যারের সাহায্য নিতে পারেন। এইভাবে সমস্ত নথি এক জায়গায় করে রাখলে খাজনা দেওয়ার সময় আপনার অনেক সুবিধা হবে।
এইভাবেই আপনি আপনার ড্রাইভিং স্কুলের ব্যবসা শুরু করতে পারেন। অনেক সময় দেখা যায় ১ জন কর্মচারী ( মালিক নিজেই) নিয়ে কোন ড্রাইভিং স্কুল চলছে আবার কখন দেখা যায় একটা ড্রাইভিং স্কুল বহু কোটি টাকার ব্যবসায় পরিণত হয়েছে । ড্রাইভিং স্কুল শুরু করার পথ খুব একটা সহজ না হলেও একবার শুরু করতে পারলে সাফল্য আসবেই। ড্রাইভিং শেখানোর পাশাপাশি এটাও খেয়াল রাখতে হবে যেন কোন দুর্ঘটনা না ঘটে এবং আপনার গ্রাহকদের কোন আঘাত না লাগে। গ্রাহকদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে যদি তাদের ভালো পরিষেবা দিতে সক্ষম হন তাহলে এই ব্যবসার মাধ্যমে আপনি আপনার পরিবারের সাথে একটি সুন্দর জীবনযাপন করতে পারবেন।