কীভাবে একটি আনুষাঙ্গিক (অ্যাকসেসরিজ) ব্যবসা শুরু করবেন?
নিম্নলিখিত পরামর্শগুলি সেইসকল উচ্চাকাঙ্ক্ষী উদ্যোক্তাদের জন্য উপযুক্ত, যারা কোনও আনুষাঙ্গিক ব্যবসা শুরু করার কথা চিন্তা করছেন। আপনার উদ্যোগটি শুরু করার আগে আপনি এই পরামর্শগুলি অবশ্যই বিবেচনা করে দেখুন।
আনুষাঙ্গিক ব্যবসা কীভাবে শুরু করা যায় সে সম্পর্কে আমরা কয়েকটি মূল্যবান তথ্য একত্রিত করেছি।
একজন ফ্যাশনিস্টার জন্য অ্যাকসেসরিজ এর ব্যবসা হল এক আদর্শ সুযোগ। অনেক মহিলার ক্ষেত্রে, অ্যাকসেসরিজই তাদের সাজকে সম্পূর্ণ করে তোলে। হ্যান্ডব্যাগ, টুপি, স্কার্ফ, গহনা, বেল্ট এবং আরও অনেক কিছু – একটি সফল ফ্যাশন অ্যাকসেসরিজ দোকান পরিচালনা করার প্রধান অংশ। যেহেতু অ্যাকসেসরিজের মাধ্যমে একি পোশাকে বিভিন্ন ভাবে পরা যায় তাই অধিকাংশ মানুষই প্রায়শয়ই অ্যাকসেসরিজ কিনে থাকে।
অ্যাকসেসরিজ ব্যবসার একটি চমৎকার দিক হ’ল তারা অন্যান্য ফ্যাশন-ভিত্তিক উদ্যোগগুলির তুলনায় সাধারণত অর্থনৈতিক প্রভাবের ওপর অনেকটাই কম নির্ভরশীল। যখন আর্থিক সঙ্কট দেখা যায় ক্রেতারা ব্যয়বহুল পোশাক কেনার পরিবর্তে নিত্যনতুন অ্যাকসেসরিজ কিনে নিজদেরকের সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে চায়।
আজকে মানুষ যেই ধরণের জিনিষ পচ্ছন্দ করছেন আজ থেকে ৬ মাস বাদে তা পচ্ছন্দ নাও করতে পারেন। ফ্যাশন খুবই তাড়াতাড়ি বদলায়। সেই কারণে পরবর্তী প্রবণতাগুলি কিরকম হবে তার পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষমতা আনুষঙ্গিক ব্যবসায়িক মালিকদের মৌলিক দক্ষতাগুলির মধ্যে অন্যতম হওয়া উচিৎ।
প্রথম ধাপঃব্যবসার পরিকল্পনা
একটি সফল ব্যবসার জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল একটি স্পষ্ট পরিকল্পনা থাকা। ব্যবসা কে বড় করে তোলার পিছনে এবং ব্যবসার ক্ষেত্রে অজানা অনেক কিছুকে জানার জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনার ভূমিকা অনস্বীকার্য।
-
পাইকারি না মূল পণ্যদ্রব্য?
সাধারণত দুই রকম ভাবে অ্যাকসেসরিজের ব্যবসা করা যেতে পারে । এক, বিভিন্ন খুচরো ব্যবসায়ীদের থেকে পাইকারি দরে জিনিষ কিনে বিক্রি করা হয়। এই ক্ষেত্রে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী জিনিষ আনা হয়।
দুই, যেখানে মালিক নিজেই অ্যাকসেসরিজ ডিজাইনার । দোকানে শুধুমাত্র তার নিজের ডিজাইন করা অ্যাকসেসরিজই থাকে। ম্যানুফ্যাকচারিং কোনও ছোট দোকানের জন্য ঘর থেকেই পরিচালনা করা যেতে পারে বা বৃহত্তর ক্ষেত্রে আউটসোর্স করা যেতে পারে। এই ক্ষেত্রে মূল উদ্দেশ্য হল ক্রেতাদের কাছে নিজের সৃষ্টিকে তুলে ধরা।আপনার যদি ডিজাইনের প্রতি আগ্রহ থাকে তাহলে সব থেকে ভালো উপায় হল আপনি নিজের ডিজাইন এবং কিছু পাইকারি জিনিষ দুই-ই দিয়ে নিজের অ্যাকসেসরিজ ব্যবসা শুরু করুন।
-
ব্যবসা শুরুর জন্য কত টাকা প্রয়োজন?
আপনার স্থানীয় শপিং মলে কোনও দোকান বা কিওস্ককে ভাড়া নেওয়ার জন্য কত খরচ হয় সেই বিষয়ে খোঁজ নিন; ফ্যাশন অ্যাকসেসরিজের পাইকারি দর কত সেই ব্যাপারে জানুন; অনলাইন দোকান খুলতে গেলে তার অন্তর্নিহিত ব্যয়ের তুলনা করুন; অনুরূপ অ্যাকসেসরিজ আপনার প্রতিযোগীরা কোন মূল্য দিচ্ছে তা লক্ষ্য করুন; এবং দোকানে কীভাবে গহনা এবং অ্যাকসেসরিজ প্রদর্শন করবেন তা গবেষণা করুন, এছাড়া আপনার দোকানের কর্মীদের জন্য কত ব্যয় হবে, আপনি কীভাবে আপনার ব্যবসায়ের বাজারজাত করবেন এবং প্রচার করবেন এবং কীভাবে আপনি আপনার জিনিসপত্রগুলি সঞ্চয় এবং বিতরণ করবেন সেই ব্যাপারে পরিকল্পনা করুন।
-
নিজের প্রতিযোগীদের চিনুনঃ
পরবর্তী ধাপ হল নিজের প্রতিযোগীদের চেনা। আপনি যত ভালো করে আপনার প্রতিযোগীদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন তত ভালো আপনি তাদেরকে চিনতে পারবেন।এবং ব্যবসায় তাদের দুর্বল জায়গা খুঁজে নিজেকে আর ভালো করে প্রস্তুত করতে পারবেন এবং অনায়াসে তাদেরকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যেতে পারবেন।
-
আপনার সম্ভাব্য গ্রাহকদের ক্রয়ের পদ্ধতি গবেষণা করুনঃ
আপনার লক্ষ্য বাজারের সম্ভাব্য গ্রাহকদের আনুষাঙ্গিকগুলির পছন্দ এবং তাদের ক্রয় এবং ক্রয়ের আচরণগুলি বুঝে তা গবেষণা করুন। এইখান থেকেই, আপনি আপনার ব্যবসায়ের প্রচার ও ব্র্যান্ড করার সর্বোত্তম পদ্ধতিগুলি নির্ধারণ করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, আপনার সম্ভাব্য গ্রাহকরা বিভিন্ন সাইটগুলিতে পাওয়া ফ্যাশন ব্লগ বা ভিডিওতে পণ্য পর্যালোচনা বা টিউটোরিয়ালের ভিত্তিতে তাদের ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সেই ক্ষেত্রে, আপনি বিভিন্ন পোশাকের সাথে কীভাবে আপনার আনুষাঙ্গিকগুলি ব্যবহার করা যেতে পারে তার অনলাইন টিউটোরিয়াল তৈরি করতে পারেন এবং এগুলি কোনও ব্লগ বা ভিডিও সাইটে পোস্ট করতে পারেন।
-
অনলাইন অনুসন্ধানঃ
আপনি ফ্যাশন অ্যাকসেসরিজ পাইকারীই বিক্রি করুন বা নিজের ডিজাইন করুন না কেন আগে অনলাইন অনুসন্ধান করার চেষ্টা করুন। আপনি যা ডিজাইন করবেন বা যা কিনবেন না কেন, সেগুলি প্রাসঙ্গিক হওয়া উচিত এবং আপনার সম্ভাব্য গ্রাহকদের পচ্ছন্দ মতো হওয়া প্রয়োজন। ব্যবসা শুরুর সময় একাধিক পরিমাণে কানের দুল, নেকলেস, ব্রেসলেট, স্কার্ফ, রিং, হ্যান্ডব্যাগ, ওয়ালেট, বেল্ট এবং চুলের জিনিসপত্র কিনে রাখবেন।
দ্বিতীয় ধাপঃআইনি স্বত্তা গঠন করা
আইনি স্বত্তা গঠন করার মাধ্যমে আপনি আপনার ব্যবসাকে আর এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। কেউ যদি আপনার ব্যবসার বিরুদ্ধে কোন মামলা করে আইনি স্বত্তা গঠন করা থাকলে আপনি ব্যক্তিগতভাবে দায়বদ্ধ থাকবেন না।
তৃতীয় ধাপঃকরের নথিভুক্তকরন
পরবর্তী ধাপ হল আপনার ব্যবসাকে করের জন্য নথিভুক্তকরন করা।
চতুর্থ ধাপঃব্যাংক এ কারেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলা এবং ক্রেডিট কার্ড এর জন্য আবেদন করা
ব্যবসার সমস্ত লেনদেন করার জন্য কারেন্ট অ্যাকাউন্ট থাকা খুবই প্রয়োজনীয়। এর ফলে আপনার ব্যাক্তিগত টাকা এবং সম্পত্তি সুরক্ষিত থাকবে। এবং কারেন্ট অ্যাকাউন্ট থাকলে ব্যবসার হিসেবনিকেশ করতে আর খাজনা দিতে অনেক সুবিধা হবে।
ব্যবসার জন্য একটা আলাদা ক্রেডিট কার্ড থাকলে সমস্ত খরচ এক জায়গায় থাকে যার ফলে পরবর্তী তে ব্যবসার জন্য টাকা বিনিয়োগের প্রয়োজন হলে সুবিধা হয়।এবং ব্যবসার জন্য ক্রেডিট কার্ড থাকলে আপনার ব্যাক্তিগত খরচও আলাদা করা সম্ভব হয়।
পঞ্চম ধাপঃব্যবসার হিসেবরক্ষণ
ব্যবসার সব খরচ এবং আয়ের উৎস সঠিকভাবে লিখে রাখলে তা ব্যবসাকে বুঝতে অনেক সাহায্য করে।এবং পরবর্তীতে তা করের হিসেব করতেও অনেক সুবিধা করে।
ষষ্ঠ ধাপঃপ্রয়োজনীয় অনুমতি এবং লাইসেন্স প্রাপ্ত করা
আপনার ব্যবসায় যাতে কোন অসুবিধার সৃষ্টি না হয় বা আপনার ব্যবসা যাতে অবৈধ হিসেবে বিচার্য না হয় সেই কারণে প্রয়োজনীয় সকল অনুমতি এবং লাইসেন্স প্রাপ্ত করুন।
সপ্তম ধাপঃব্যবসার বীমাকরন
আপনার ব্যবসাকে সঠিক ভাবে চালু রাখার জন্য যেভাবে অনুমতি এবং লাইসেন্স দরকার সেইভাবেই বীমার ও প্রয়োজন। ব্যবসার বীমা থাকলে অনেক ক্ষতির থেকে ব্যবসাকে রক্ষা করা সম্ভব হয়।
অষ্টম ধাপঃ নিজের ব্র্যান্ডকে সঠিকভাবে বর্ণনা করা
আপনার ব্যবসা কেমন এবং আপনার ব্যবসাকে সবাই কীভাবে গ্রহন করছে তাই আপনার ব্র্যান্ডকে নির্ধারণ করবে এবং প্রতিযোগীদের থেকে আপনাকে এগিয়ে রাখবে।
নবম ধাপঃওয়েবে উপস্থিতি স্থাপন করা
ব্যবসার প্রচারের জন্য সবথেকে ভালো উপায় হল কোম্পানির নিজস্ব ওয়েবসাইট থাকা। এমন অনেক সাইট আছে যেখান থেকে আপনি খুব সহজে নিজের ব্যবসার ওয়েবসাইট খুলতে পারবেন। এছাড়া সামাজিক মাধ্যমও প্রচারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ। আপনি আপনার ব্যবসার একটা ফেসবুক পেজ খুলে সন্তুষ্ট ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারবেন। সেই পেজ-এ তাদের আপনার এজেন্সি সম্পর্কে ইতিবাচক পর্যালোচনা করতে বলুন যার মাধ্যমে আপনি নতুন গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে পারবেন।
আপনার পণ্য সরবরাহ এবং চাহিদা বুঝতে একটি সিস্টেম তৈরি করুন। আপনি অনেকরকম সফটওয়্যারের সাহায্য এই ক্ষেত্রে নিতে পারেন। সিস্টেমটি আপনাকে উপযুক্ত পরিমাণের পরিমাপ নির্ধারণ করতে সহায়তা করবে। অতিরিক্ত ইনভেন্টরি আপনার ব্যবসাকে আর্থিকভাবে ক্ষতি করতে পারে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ না থাকার কারণে আপনার গ্রাহকরা অন্য কোথাও সন্ধান করতে যেতে পারে যার ফলে আপনার গ্রাহক হাতছাড়া হবে।