কীভাবে আপনার নিজের মোবাইল শপ শুরু করবেন
মোবাইল ফোন এখনএকটি জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যমের ডিভাইস। সারাবিশ্বে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ার ফলে এই সংখ্যা দিন দিন ব্যাপকভাবে বাড়ছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মানুষ পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে খুব সহজেই যোগাযোগ করতে পারে। এছারাও নিজের ব্যাবসার কাজে সাংবাদিকতার কাজে, অনলাইন ব্যাংকিং করার কাজ সহ একটি কম্পিউটারে যা সব কাজ করা যায় তা এখন একটা স্মারট মোবাইল ফোনেই করা যাচ্ছে। দিনে দিনে সব জায়গায় আধুনিকায়নের ছোয়া লাগছে। তাই সামনে এমন একটা সময় আসছে যে সময়ে সবার হাতে একটি করে স্মারট মোবাইল ডিভাইস থাকবে। তাই মোবাইল ফোন হতে পারে আধুনিক ব্যবসার একটি অন্যতম খাত। এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে তুমিও হয়ে যেতে পারো একজন সফল উদ্যোগক্তা।
কিভাবে শুরু করবে?
ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন দোকান বা শোরুম। এরপর প্রয়োজন হবে ট্রেড লাইসেন্স ও দোকান সাজানো প্রচার প্রচারণা সহ আরও আনুষঙ্গিক কিছু কাজ। আসো ধাপে ধাপে বিষয়গূলো দেখেনেই। দোকানের সাজসজ্জার জন্য খরচ হবে ৪০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। এর পরই সেট কেনার পালা। প্রাথমিকভাবে এক লাখ টাকার সেট কিনলেই হবে। শুরুতে কম দামি সেট বিক্রি করাই
দোকান বা অফিসের জায়গা ভাড়া করুনঃ
ব্যবসা যদি সম্পূর্ণ ঘরোয়া না হয়, তবে দোকান বা অফিসের জায়গা ভাড়া করো। যদি খুচরা বিক্রির দোকান হয়, তবে কিছু বিষয় লক্ষ রাখবে। যেমন মানুষের সহজ যাতায়াত, আরামে বাজার করতে পারে—এতটুকু খোলা জায়গা রাখা, শারীরিক ও আর্থিক নিরাপত্তা এবং অন্যান্য কারণ যেগুলো গ্রাহকদের আরামে শপিং করা থেকে বিরত রাখে। মনে রাখবে, যদি তোমার ব্যবসার জন্য অফিস বা দোকানের প্রয়োজন না হয়, তবে কোনো জায়গা ভাড়া করতে যাবে না। কারণ, এটা তোমার প্রতি মাসে অতিরিক্ত খরচ বাড়াবে।
দোকান করার অনুমদন নিতে যা প্রয়োজনঃ তুমি যে দোকানটি করছো সেটির ব্যাবসা পরিচালোনার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন হবে ট্রেড লাইসেন্স এর। ব্যবসা চলার কিছুদিন পর জিএসটি করিয়ে নিতে হবে। তুমি যদি বিভিন্ন মোবাইল কম্পানির ডিলার হতে চাও তবে এসব কাগজ পত্রাদির প্রয়োজন পরবে। তাছারা নির্ভেজাল ও ঝামেলামুক্ত হয়ে ব্যাবসা পরিচালনা করতে চাইলে এসবের তো দরকার আছেই।
মোবাইল ছাড়াও আর যা বিক্রি করতে পারো?
মোবাইল ফোনসেট ছাড়াও দোকানে মোবাইল চার্জার, ব্যাটারি, ডেটা ক্যাবল, মেমোরি কার্ড বিক্রি করতে পারো। এ ছাড়া ফোন সেটের কেসিং, ডিসপ্লে প্রটেক্টর, ব্যাক কাভার, ট্যাটু এসবো আজকাল ভালচলে। চাইলে সাথে একটা ফোন রিচারজ করার ব্যাবস্থাও রাখতে পারো। এতে করে তোমার ব্যাবসারই লাভ হবে।
প্রাথমিক প্রচারণা ও ক্রেতা সংগ্রহ কি করে হবে?
সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে গেলে তোমার এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে দোকানের যাত্রা শুরু করাও। সেইসাথে শুরুর দিন থেকে প্রথম কয়েক মাস ক্রেতাদেরকে বিশেষ সুবিধার দাও যাতে তারা বেশ আকৃষ্ট হয় এতে করে তোমার দোকানের প্রচার প্রচারণা বেশ ভালো হবে। তোমার দোকানের প্রথম ১০০ জন ক্রেতাকে নিয়ে করতে পারো কৃতজ্ঞতা স্বারকের ব্যবস্থা যা তোমার দোকানের প্রচারণাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেবে।
এছাড়াও, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোমার ব্যাবসার একটি আইডি খুলেও ফ্রিতে প্রচার প্রচারণা করতে পারো। সেক্ষেত্রে তোমার প্রতিদিনের কাজের আপডেট গুলো পোস্ট করলেই অনেকাংশেই ক্রেতারা অকৃষ্ট হয়ে যাতে পারে। অন্যদিকে তোমার দোকানের নামে একটি ফেসবুক পেজ খুলে তোমার এরিয়াতে তোমার দোকানের বিজ্ঞাপন বুস্ট করে দিতে পারো যেটি আরও ভালো ফল বয়ে আনবে।
কর্মী সংগ্রহঃ
অন্ততপক্ষে দোকানে একজন কর্মীর দরকার আছে । আর সেই কর্মী যদি মবাইল সেট বিপণন এর কাজে, স্ক্রিন প্রটেক্ট্রর লাগানর কাজে দক্ষ হয় তাহলে তো কথাই নেই। তরতরিয়ে বড় হবে তোমার ব্যাবসা। কিন্তু এরকম কর্মী খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন তবুও নিজের স্বার্থে একবার খোঁজ করে দেখতে পারো যদি পাও তবে বিক্রির জন্য একজন বিশ্বস্ত কর্মী নিয়োগ দাও এবং তার সাথে তুমি নিজেও একটু যোগান দাও।
ব্যাবসার ওয়েবসাইট করোঃ
এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং এটা আপনাকে মানুষের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা দেবে। একটি ভালো ওয়েবসাইট তৈরির জন্য যেমন ভালো ডেভেলপার প্রয়োজন, তেমনি তথ্য সমন্বিত করার জন্য একজন ভালো কনটেন্ট রাইটারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। একটি ভালো ওয়েবসাইট আপনাকে বছরে হাজার টাকা বাজারজাতকরণ খরচ থেকে বাঁচিয়ে দেবে।
তোমার বিজনেস কার্ড করোঃ
নতুন ব্যবসা শুরু করতে গেলে অনেক মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে। পরিচিত–অপরিচিত সবাইকে জানাতে হবে যে আপনি এই ব্যবসায় আছেন। এ জন্য বেশি করে বিজনেস কার্ড অর্ডার করুন। এটা আপনার পেশাদারত্বের প্রতি বিশ্বাসযোগ্যতা আনবে।
মোবাইল সেট ও এক্সেসোরিস সস্তা দামে কোথায় পাওয়া যায়?
তুমি যদি খুব কম পয়সায় এগুলো জোগার করতে চাও তবে পাইকারি বাজার তোমার জন্য উপযুক্ত স্থান। তুমি সেখানে কম দামে ভালো মানের মোবাইল ফোন ও এক্সেসরিস কিনতে পারবে। ব্রান্ডেড মোবাইল কেনার জন্য কোন নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের অথরাইজ ডিলারদের সাথে যোগাযোক করতে পার।
আজকাল অনলাইন মারকেটপ্লেস গুলোতেও তুমি মোবাইলের এক্সেসরিস খুব কম দামে কিনতে পারবে। আর অনলাইন কেনাকাটার সবথেকে বড় সুবিধে হলো তোমাকে ওরা ঘরের দরজায় সব বয়ে দিয়ে যাবে। যদি তোমার হাতে খুব অল্প পয়সা থাকে তবে সে সব কম দামের মোবাইল এক্সেসোরিস কেনো যেগুলোর চাহিদা গ্রাহকের কাছে বেশী।
চাহিদাসম্পন্ন ব্র্যান্ড ও দরদামঃ
বর্তমানে বিভিন্ন নামকরা ব্রান্ডের সঙ্গে বাজার দখল করেছে কিছু চায়নিজ ব্র্যান্ড। শাওমি, রিয়েলমি, ওয়ানপ্লাস, আইফোন, স্যামসাং, এসব ব্র্যান্ডের সেটের চাহিদাই বেশি। স্মারটফোন ৬ হাজার রুপি থেকে শুরু করে ১ লাখ রুপি পর্যন্ত আছে। অন্যান্য ব্র্যান্ডের চায়নিজ বাটন সেট এক হাজার ২০০ থেকে ৩০০০ রুপির মধ্যেই পাওয়া যাবে। প্রায় সব ব্র্যান্ডেই ছয় মাস থেকে এক বছরের বিক্রয়োত্তর সেবা দিয়ে থাকে।
মোবাইল ও এক্সেসোরিসের ব্যাবসার পুজি কেমন লাগে?
এই ব্যাবসায় পুঁজি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেনোনা তোমাকে মোটামুটিভাবে দোকানটা ডেকোরেশন করতে হচ্ছে। যদি তোমার নিজের দোকান করার জায়গা থাকে তবে এটি তোমার জন্য প্লাস পয়েন্ট আর না থাকলে তোমাকে দোকান নিতেও টাকা খরচ কর্যতে হবে। এরপর মোবাইল ও এক্সেসোরিস কেনার পালা। তুমি যদি খুব কম পয়সায় এগুলো জোগার করতে চাও তবে পাইকারি বাজার উপযুক্ত স্থান। তুমি সেখানে কম দামে ভালো মানের এক্সেসরিস কিনতে পারবে। যদি তোমার হাতে খুব অল্প পয়সা থাকে তবে সে সব কম দামের মোবাইল ও এক্সেসোরিস কেনো যেগুলোর চাহিদা গ্রাহকের কাছে বেশী।
যাইহোক, যদি ১টা কাজের ছেলে রেখে দাও তবে তাদের মাসিক বেতনেরও দরকার আছে। সব মিলিয়ে, প্রথম প্রথম তোমাকে ২ থেকে ২.৫ লাখ রুপি তো খরচ করতেই হবে। আর যদি তুমি নিজেই কাজ জানো তবে কাজের ছেলের বেতনটা বেচে গেলো। সেক্ষেত্রে তুমি আজই ব্যাবসাটা শুরু করে দিতে পারো।
লাভ কেমন
সাধারণভাবে প্রতিটি ফোনসেটেই ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত লাভ করা সম্ভব। আর চার্জার ও ব্যাটারির এবং অন্যন্য এক্সেসরিসের ক্ষেত্রে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ লাভ। এছারাও যপদি তুমি বেশী দামের মোবাইল বিক্রি করতে পারো তবে লাভ আরও বৃদ্ধি পাবে। সেক্ষেত্রে বাশী দামের মোবাইল দোকানে রাখার পুঁজি না থাকলে গ্রাহকের কাছ থেকে আগ্রিম কিছু টাকা নিয়ে মোবাইলটা এনে দিলে।
মোবাইল ফোনের চাহিদা তো দিন দিনবেড়েই চলছে আর সামনে আরও বেশী বৃদ্ধি পাবে এটাও নিশিচভাবেই বলা যায়। তাছারা মানুষ আজকাল নিত্যনতুন ফোনপেলেই হাতের পুরান ফোনটিকে বদলে নতুন আরেকটি ফোন চটজলদি কিনে ফেলে। তাই ধরাই যায় এই ব্যাবসার বাজার সবসময় আছে। তাই এই ব্যাবসায়িক পরিকল্পনাটি কাজে কাগিয়ে আজই হয়ে যাও একজন সফল উদ্যোক্তা।