জুয়েলারির ব্যবসায় কীভাবে শুরু করবেন সে সম্পর্কে টিপস
জুয়েলারি একটি ছোট ব্যবসার ধারণা। নিয়মিত আয়ের জন্য তুমি এই জুয়েলারি ব্যাবসা নিয়ে কাজ করতে পারো। এটি আমাদের ভারতে প্রচলিত এবং ভাল আয় করা যায় সেরকম বা লাভজনক ব্যবসার ধারণাগুলির মধ্যে অন্যতম একটি ধারণা। যারা একটি সুষ্ঠ ও সুন্দর ব্যবসার ধারণা খুঁজছ, তারা অর্থ উপার্জন করার জন্য এটি শুরু করতে পারো।
যেহেতু আমাদের ভারতে অলংকারের প্রতি মেয়েরা বিশেষভাবে আকৃষ্ট হয়ে থাকে। তাই সোনার গহনা ব্যবসায় পরিচালনা এদেশে প্রচলিত প্রবণতা অনেক বেশী। এটি এখন একটি জনপ্রিয় ব্যবসা যা সকল মানুষ পছন্দ করে বিশেষতঃ মহিলারা প্রায়ই জুয়েলারি পরতে ও এবং কিনতে পছন্দ করেন। দেশে এই ব্যাবসায় দিন দিন আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। যে কোন শিক্ষিত ব্যক্তি এই ব্যবসাটি চালাতে পারেন। আপনি যদি একটি নতুন স্নাতক পাসকৃত ব্যাক্তি হোন আপনিও পেশা হিসাবে এই ব্যবসাকে নিতে পারেন। কারণ আপনি যে বর্তমানে চাকুরী খুজচ্ছেন টাকা উপার্জনের লক্ষ্যে, জুয়েলারির এই ব্যাবসা সেই সমস্যা সমাধান করতে পারে।
কিভাবে শুরু করবে?
জুয়েলারি ব্যাবসা সম্পর্কে তুমি কিছুই জানো না বা তোমার ধারণা যদি কম থাকে তাহলে তুমি অন্যদের জুয়েলারী কারখানা বা ব্যবসা দেখতে পারো এবং কি ভাবে তারা ব্যাবসা পরিচালনা করছে তাও দেখতে পারো।
বিভিন্ন রকমের গয়না তৈরি করতে কী কী পদক্ষেপ গ্রহন করতে হয় তাও তোমার জানা হয়ে যাবে, যা তোমাকে নতুনভাবে এই ব্যাবসা শুরু করতে সহায়তা করবে।
আপনি যদি গোল্ড প্লেটেড জুয়েলারি ব্যাবসার দোকান গুলো ঘুরে দেখেন তাহলে বাংলাদেশে এর ব্যবসায়ের প্রবণতা কেমন তা জানতে পারবেন, দেখতে পারবেন ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মনোভাব।
সুতরাং, এই ভাবে উৎপাদন কারখানা এবং গয়না দোকান পরিদর্শণ করে, তুমি জুয়েলারী ব্যবসা চালানোর সামগ্রিক ধারণা পাবে। আর একটি নতুন ব্যাবসা শুরুর আগে এই অভিজ্ঞতা তোমার অনেক কাজে আসবে।
এজন্য জুয়েলারি ব্যাবসায় দোকান শুরু করতে চাইলে বা উৎপাদন কারখানা তৈরি করার আগে, তোমাকে এর উৎপাদন প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি এবং এই ব্যবসাটির ক্রয় ও বিক্রয়ের প্রবণতার নানা দিক সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।
কিভাবে জুয়েলারির কারখানা কেন করবে?
তুমি যদি সত্যিই এই ধরনের ব্যবসা পরিচালনা করতে চাও এবং শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকো তাহলে প্রথমে তোমাকে জুয়েলারি উৎপাদনের একটি কারখানা স্থাপন করতে হবে, পণ্য উৎপাদনের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
যেহেতু তুমি নিজেই উৎপাদনকারী এবং বিক্রেতা হবে, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যবসাটি লাভজনক হবে। তাই প্রথমে তোমাকে একটি জুয়েলারি উৎপাদনের কারখানা স্থাপন করতে হবে।
উৎপাদিত পণ্যের মান বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সে দিক থেকে গোল্ড প্লেটেড জুয়েলারি তৈরির ক্ষেত্রে তোমাকে সরাসরি দেখভাল করতে হবে। তোমার সরাসরি তত্ত্বাবধানে সমস্ত ভাল মানের জিনিস উৎপাদন করতে পারলেই তুমি এর বাজারজাত করতে বিশেষ সুবিধা পাবে। এখানে, তুমি পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে, যা ব্যাবসার সুনাম তৈরির জন্য সবচেয়ে বড় প্রয়োজন।
আর যেহেতু এটি তোমার নিজস্ব ব্যবসা। তাই পণ্যের গুণমানের নিশ্চিত করাও তোমার একটি গুরুত্ত্বপূর্ণ দায়িত্ব। শুধুমাত্র তোমার নিজেস্ব তত্ত্বাবধানই এটি নিশ্চিত করতে পারো। তুমি নিজের উদ্যোগের মাধ্যমে পণ্যগুলো তৈরি করতে পারেলে তবেই উন্নত মানের পণ্য উৎপাদন সম্ভব।
দোকান কেমন হবে?
কারখানার মাধম্যে গোল্ড প্লেটেড জুয়েলারী তৈরি করে তুমি এটি খুচরা বাজারেও বিক্রি করতে পারবে। এতে করে তুমি হতে পারো উৎপাদনকারী, পাইকারি বিক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতা। পাইকারি ব্যাবসার পাশাপাশি এই গয়না বিক্রির জন্য এক বা একাধিক দোকান প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।
এখানে, তুমি ভাল মানের পণ্য বিক্রির ব্যাপারে যথেষ্ট আস্থাশীল থাকতে পারো, যেহেতু তুমি নিজেই পণ্য তৈরি করছেন। উৎপাদন থেকে বিক্রি পর্যন্ত তুমি যদি পণ্যের গুনগত মান নিশ্চিত করতে পারো এবং তবে আশা করি, পাইকারি এবং খুচরা ব্যবসা উভয় ক্ষেত্রে আপনি মুনাফা করতে সক্ষম হবে।
এছাড়াও তুমি চাইলে শুধু দোকান দিয়ে কোন পাইকেরী ব্যবসায়ী বা কারখানা থেকে জুয়েলারী পণ্য কিনে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারো। এতে করে তোমাকে কারখানার ব্যয় বহন করতে হচ্ছে না। অন্য দিকে তুমি যদি সবর্ণের জুয়েলারির ব্যবসা পরিচালনা করতে চাও তবে জুয়েলারী কারখানা স্থাপন করা সবথেকে ব্যদ্ধিমানের কাজ হবে। এছাড়াও, ইমিটেশন এর জুয়েলারি বিক্রি করলে যে কোন পাইকার বা কারখানা থেকে পণ্য নিয়ে ব্যবসা করতে পারো।
কর্মী নিয়োগ প্রয়োজন আছে কি?
জুয়েলারী ব্যাবসায় তুমি যদি কারখানার সাথে সাথে পাইকারি ও খুচরা ব্যাবসা করবেন বলে ঠিক করো, তবে তা একা সম্ভব নয়। এই জন্য তোমাকে কিছু কর্মী নিয়োগ করতে হবে।
আর এই ক্ষেত্রে নিয়োগকৃত নতুন কর্মীদের জুয়েলারী ব্যবসার বিষয়ে জ্ঞান থাকা উচিত। যদি মনে করো যে নতুন নিয়োগকৃত কর্মীরা সবাই এই ব্যাবসায় নতুন তাহলে তুমি তাদের প্রশিক্ষিত করিয়ে নিতে পারো এবং তাই করা উচিত।
আর তোমার ব্যবসা যদি আরও বড় হয় তবে তো তোমার অধিক কর্মীর দরকার পড়ছে। তাই কারখানা, দোকান, মার্কেটিং, সেলস ম্যান সকল কর্মী আলাদা আলাদা করতে পারো। অন্যদিকে তুমি নিজেই যদি কাজ জানো তবে খুব ছোট একটা কারখানা এবং বিপণন এর জন্য তার সাথেই একটা দোকান অর্থাৎ দোকান এবং কারখানার জায়গা একসাথে করে নিজেই জুয়েলারী তৈরী ও বিক্রি করতে পারো।
কেমন পুঁজি বিনিয়োগ করা লাগতে পারে?
যদি ইমিটেশনের জুয়েলারি নিয়ে কাজ করতে চাও তবে তোমাকে খুব বেশী পুঁজি বিনিয়োগ করা লাগবে না। মাত্র ১০ থেকে ১৫ হাজার রুপি ইমিটেশনের জুয়েলারীর জন্য আর দোকান যদি নিজস্ব না থাকে তবে তার ভারার জন্য আরও কিছু পুঁজি বিনিয়োগ করতে হতে পারে। এছাড়াও তোমার দোকানের ডেকোরেশন তো রয়েছেই।
স্বর্ণের জুয়েলারী নিয়ে কাজ করতে চাইলে তোমাকে আরও বেশী বিনিয়োগ করতে হতে পারে। সেক্ষেত্রে তোমাকে ৪ থেকে ৫ লক্ষ পুঁজি বিনিয়োগ করা লাগতে পারে। তবে যে কোন ব্যবসাই খুব ছোট করে শুরু করতে তেমন কিছুর প্রয়োজন হয় না।
কেমন আয় হতে পারে?
ইমিটেশনের জুয়েলারির জন্য তুমি ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত পণ্য ভেদে আয় করতে পারবে। অন্যদিকে তুমি যদি সোনার জুয়েলারি নিয়ে কাজ করো আর যদি নিজেই কারিগর হও তবে যে কোন জুয়েলারির জন্য মুজুরি তো থাকছেই। অন্য দিকে তোমার বিক্রির উপরেও খুব ভালো লাভ থাকবে।
জুয়েলারী ব্যাবসার ধারনা একটি জনপ্রিয় ও সত্যিই লাভজনক ব্যবসা হবে। মানুষ জুয়েলারী পরতে পছন্দ করে। সুতরাং, তারা প্রায়ই এই পণ্য গুলো ক্রয় করে থাকে। এই প্রবণতা উপর নির্ভর করে, হাজার হাজার জুয়েলারী ব্যবসার প্রতিষ্ঠান দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তুমি অবশই এই ব্যাবসায় ভালো করবে এবং ব্যাবসা কে লাভজনক হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে যদি তুমি পণ্যের গুণগত মান বজায় রাখতে পারো।