ভারতে কোভিড পরবর্তী সময়ে শুরু করার মত সেরা ব্যবসা
করোনার থাবা গ্রাস করেছে গোটা বিশ্বকে। লকডাউনের জেরে ইতালি থেকে শুরু করে আমেরিকা, ব্রাজিল, রাশিয়া, দক্ষিন আফ্রিকা এমনকি চীনের মত উন্নত দেশগুলি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমাদের দেশ ভারতবর্ষের দেখা গিয়েছিল একই ছবি। দিনের পর দিন মানুষ ঘরবন্দী। কত মানুষ তাঁদের চাকরি খুইয়েছেন, মানসিক অবসাদের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন শতাধিক মানুষ। তার সাথে রয়েছেই এই করোনা। এই মারন ভাইরাস প্রতিদিন কেড়ে নিচ্ছে হাজার হাজার প্রান। হাঁসপাতালে বেড নেই তাই বিনা চিকিৎসাতেও প্রান হারাতে হচ্ছে বহু মানুষকেও। এইরকম পরিস্থিতিতে আমরা সকলেই এক কোথায় তঠস্ত হয়ে রয়েছি। অপ্রয়োজনে বাড়ীর বাইরে বেরনো প্রায় বন্ধ বললেই চলে। পাড়ার রকে বসে বন্ধুদেরস সাথে আড্ডা দেওয়ার চল ঘুচে গেছে ৬ মাস হল।
কিন্তু এইভাবে আর কতদিন। পেটে খাবার না পড়লে তো এমনিই মারা যাবে মানুষ। তাই এই কোভিড-১৯ এর দাপটকে সহ্য করে সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক আর স্যানিটাইজার – এই নিউ নরমালকে গ্রহণ করেই আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার চেষ্টা করছে মানুষ। বেরোচ্ছে নতুন কাজের সন্ধানে। কেউবা আবার সেই আশা ত্যাগ করে মন দিয়েছেন ব্যবসায়। অকারণে বাড়ী থেকে বেরনোর চল বন্ধ হয়ে যাওয়ার মানুষের বহু জিনিসের ক্ষেত্রেই বাড়িতেই সেই পরিষেবা পাবার চেষ্টা করছে। তাই আপনি যদি এই কোভিড পরবর্তী সময়ে নতুন কোন ব্যবসার কথা চিন্তা করে থাকেন তাহলে আপনি একদম ঠিক ভেবেছেন। তবে সব ধরণের ব্যবসা কিন্তু এই সময় লাভের মুখদর্শণ করবে না। তাই আসুন জেনে নি এই পরিস্থিতে কোন কোন ব্যবসায় সূজোগ সবথেকে বেশী এবং কোন ব্যবসা আপনার রোজগারকে আরও বেশি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
পিক আপ ও ডেলিভারি
হোম পিক আপ ও ডেলিভারি এর প্রচলন এই কোভিড পরবর্তী নিউ নরমালে সারা বিশ্বে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। যেহেতু জরুরী দরকার ছাড়া মানুষ বাড়ী থেকে বের হচ্ছেন না, তাই তাঁরা চাইছেন তাঁদের বেশ কিছু প্রয়োজন বাড়ী বসেই মিটিয়ে ফেলতে। আর এই সব প্রয়োজনীয় জিনিসের মধ্যে পড়ে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি, লাঞ্চ বা স্ন্যাক্স বা ডিনার, কাঁচা বাজার, মুদিখানা, জামাকাপড়, এবং আরও অনেক কিছু। মানুষ অনেক সময় দুনম্বরী কারবারের ভয়ে সব সময় অনলাইনেও অর্ডার দিতে ভয় পান। আবার অনেক ব্যবসাদারেরা যান যে তাঁদের দ্রব্য যেন তাঁরা ক্রেতার বাড়িতে পৌঁছে দিতে পারেন। আর এই দুয়েরই সমাধান হল পিক আপ ও ডেলিভারি পরিষেবা। আপনি যদি আপনার এলাকায় এই ব্যবসা খলেন তাহলে এটা নিশ্চিত যে আপনি সারাদিনে নিশ্চিন্তে বসে থাকার সময় পাবেন না।
অনলাইন পড়াশোনার অ্যাপ
এই মারন ভাইরাসে প্রভাবে যা সবথেকে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, তা হল ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা। কর্মরত মানুষ নিউ নরমালে ছন্দে ফেরার চেষ্টা করলেও ছাত্রছাত্রীদের এখনও সেই সূযোগ হয়নি। একাধিক পরীক্ষা বাতিল হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এইভাবে চলতে থাকলে যে একটা গোটা বছর নষ্ট হয়ে যাবে। আর তা কখনই উচিত নয়। তাই এই সমস্যার একমাত্র সমাধান হতে পারে অনলাইন পড়াশোনা। সেই কারণে এই করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে আপনি যদি সঠিক টেকনিক্যাল পারদর্শীদের নিয়ে অনলাইন পড়াশোনার জন্য অ্যাপ তৈরী করার ব্যবসা শুরু করেন, তবে আপনার লাভবান হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
মুদিখানা দ্রব্য ডেলিভারি
মুদিখানা দ্রব্য আমাদের সকলেরই নিত্য প্রয়োজনীয়। আর এই পরিস্থিতিতে আমরা সকলেই চাই যে সেটা আমাদের দোরগোড়ায় এসে হাজির হয়। বড় বড় মুদিখানা দ্রব্য বিক্রয়কারী অনলাইন অ্যাপ ইতিমধ্যেই যথেষ্ট জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। যদি বিষয়টিকে একটু ক্ষুদ্র স্তরে ভেবে দেখা যায়, তাহলে আমরা দেখতে পাব যে পাড়ার ভিতর বা পাশের পাড়ায় এমন অনেক দোকান রয়েছে যেখানে সমস্ত রকম মুদিখানা দ্রব্যাদি উপলব্ধ। শুধুমাত্র ডেলিভারি এর লোকের অভাবে তাঁরা ভালোভাবে ব্যবসাও করতে পারছেন না আর মানুষকেও বেশী দাম দিয়ে অনলাইন বাজার থেকে দ্রব্যাদি কিনতে হচ্ছে। কিন্তু আপনি যদি আপনার এলাকায় একটি ডেলিভারি এর ব্যবসা শুরু করেন যেখানে আপনার কর্মীরা এলাকার বিভিন্ন মুদিখানার দোকান থেকে দ্রব্যাদি নিয়ে ক্রেতাদের বাড়ি পৌঁছে দেবে। কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতিতে এই ব্যবসার যথেষ্ট প্রচলন হয়েছে তাই আপনিও নির্দিধায় এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
ফুড ডেলিভারি
শুধুমাত্র কোভিড পরবর্তী কেন, এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার অনেক আগে থেকেই খাবারের হোম ডেলিভারি পরিষেবা গোটা দেশ জুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। মানুষ তাদের ব্যস্ত জীবনে মাঝে সময় বার করে নিতে পারত না রান্না করার তাই অনলাইনে ওয়েবসাইট বা অ্যাপের মাধ্যমে খাবার অর্ডার দিয়ে তা বাড়ি দোরগোড়াতেই পেয়ে যাওয়ায় অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল মানুষ। তারপর এলো করোনা। লকডাউনের জেরে সব কিছু বন্ধ, এমনকি রেস্তোরাঁগুলোও। আর এই কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতিতে এই বাড়িতে খাবার আনিয়ে নেওয়ার এই অভ্যাসটা মানুষের কাছে প্রয়োজনে পরিণত হয়েছে। তাই ফুড ডেলিভারি এর ব্যবসা যদি আপনি চালু করেন তবে তা খুব ভালোভাবে চলবেই এবং খুব তাড়াতাড়ি আপনি এর প্রসার দেখতে পাবেন।
অনলাইন মার্কেটপ্লেস
একটি পরিস্থিতিকে মাথায় রেখে শুরু করা যাক। ধরা যাক আপনার একটি বিরাট দোকান আছে যেখানে সব রকম নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি উপলব্ধ। মানুষের এত ভীড় হত যে আপনি সামলে উঠতে পারতেন না। তারপর এলো করোনা ভাইরাস। শুরু হল লকডাউন। ব্যাপক হারে কমে গেল আপনার ব্যবসা কারণ রাস্তাঘাট জনবিহীন হয়ে গেল। দীর্ঘ অপেক্ষার পর যখন ধীরে ধীরে আনলক প্রক্রিয়া গোটা দেশ জুড়ে শুরু হতে লাগল, মানুষ একটু একটু সাহস করে বাইরে বেরোতে লাগল। আপনার দোকানে আবার নতুন করে বেচাকেনা হতে লাগল। কিছু সেই আগের মত যেক কিছুতেই হচ্ছে না। আর কি করেই বা হবে। আগের মত মানুষ তো আর অকারণে বে হচ্ছে না। এই পরিস্থিতে আপনি যদি আপনার ব্যবসাকে আবার আগের জায়গায় নিযে যেতে চান, তবে আপনাকে অনলাইন মার্কেটপ্লেসের স্মরণাপন্ন হতেই হবে। অ্যাপ বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনার ক্রেতারা অর্ডার দেবেন আর আপনি সেগুলি তাঁদের বাড়িতে খুব কম সময়েই পৌঁছে দেবে।
বর্তমান পরিকল্পনা, ভবিষ্যতের প্রস্তুতি
কোভিড আমাদের যে পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে তা সম্পূর্ণ সেরে উঠতে যথেষ্ট সময় লাগবে। এই লকডাউনের মধ্যে কয়েক কোটি মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন। যারা দিন আনি দিন খাই মানুষ তাঁরা পড়েছেন চরম অর্থসঙ্কটে। তাই এই কোভিড পরবর্তী আনলক পরিস্থিতে যখন আপনার কাছে বিভিন্ন ব্যবসার সুযোগ উঠে আসে, তখন আপনার উচিত তার মধ্যে থেকে আপনার পারদর্শিতা অনুযায়ী একটি ব্যবসাকে বেছে নেওয়া এবং বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে তা শুরু করে ফেলা। কারণ এই মহামারীর পরবর্তী সময় এবং আগামী বছরগুলি খুবই খারাপ হতে চলেছে। সেখানে দাড়িয়ে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য এখন থেকেই ব্যবসার পরিকল্পনা করে রাখতে হবে। এর এটাই হল আপনার ভবিষ্যতের প্রস্তুতি। কিন্তু আপনি যদি এখন থেকেই কোনও প্রস্তুতি না নেন তবে আগামী ভবিষ্যত যে কি হতে চলেছে তা কেউ বলতে পারবে না।
করোনা ভাইরাস আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে। মানুষ স্বনির্ভর হতে। ক্রমাগত বাড়িতে বসে থাকার ফলে মানুষ ভার্চুয়াল দুনিয়াকেই আপন করে নিয়েছে। তাই ব্যবসাকে যদি অনলাইন নিয়ে যাওয়া যায় এবং দ্রব্য যদি ক্রেতাদের বাড়ীর দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া যায়, তবে যাই হোকনা কেন আপনার ব্যবসা সাফল্য লাভ করবেই এবং যত দিন যাবে, মুনাফার পরিমাণ ততই বাড়তে থাকবে। উপরিউল্লিখিত এই ব্যবসাগুলির মধ্যে থেকে যেকোনো একটি নিয়ে যদি আপনি এই কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতিতে ব্যবসা শুরু করেন, তবে আপনি যথেষ্ট মুনাফা অর্জন করতে পারবেন।