পানশপ ব্যবসা পরিকল্পনার একটি সম্পূর্ণ গাইড
পান একটি ছোট শব্দ, কিন্তু যখন কোনো টেবিলে হরেক রকম কালারফুল পান মসলা দিয়ে সুন্দর করে পান সাজানো হয় সেটা দেখে নিজেকে সামলানো সত্যিই কঠিন। আর কোনোদিনও পান খাননি এমন মানুষও মনে হয় এই দেশে কম আছে। বিবাহ বাড়ি হোক বা কোনো অনুষ্ঠান বাড়ি শেষে একটি পান না হলে অনেক মানুষেরই ঠিক জমে না। বহু মানুষ সারাবছর পান খান। কোনো পুজো অর্চনার সময় পান একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তাই যে কোনো শুভ কাজে পানকে একটি অতিপ্রয়োজনীয় জিনিস হিসাবে ধরা হয়। তাই নিঃসন্দেহে পানের একটি ভালো বাজার আছে একথা বলাই যায়। আর কোনো ব্যবসাই ছোট নয়। পান তৈরিতে বানারসী পানের একটি অতুলনীয় উপস্থিতি রয়েছে এবং এটি দেশজোড়া খ্যাতিও পেয়েছে। বর্তমানে চকোলেট পান বা টোবাকো পান, এবং মিঠা পান বা সাদা পান গ্রহণ করলে মেজাজকে সতেজ করে ও আনন্দে ভরে ওঠে। আমরা বিবাহের, জন্মদিনের পার্টি, রিসেপশন ইত্যাদির মতো বিশেষ অনুষ্ঠানে খুচরা দোকানগুলির মাধ্যমে সরবরাহকারী লোক দিয়ে আমন্ত্রিত মানুষদের পান পরিবেশন করি। বিভিন্ন ভেষজ ওষুধ তৈরী করতেও পান লাগে। আয়ুর্বেদিক ক্ষেত্রে পানের গুরুত্বও একেবারে বাদ দেওয়ার মতো নয়। তাই তুমি যদি একটি পানশপ তৈরির কথা ভাব তাড়াতাড়ি প্রস্তুতি নিয়ে শুরু হয়ে দাও।
তবে পানকে যেমন কম দামে পাওয়া যায় তেমনই বেশি দামের বাহারি পান ও আছে। পাঁচ হাজার টাকার সুস্বাদু পানও পাওয়া যায়। তাই তুমি কোন পানপাতার ব্যবসা করবে সেটা তোমাকেই ঠিক করতে হবে। পান এর ব্যবসা করার জন্যে যেমন খুব বড়ো দোকানের দরকার হয় না আবার তুমি যদি ভাবো একটি বড়ো পানস্টল গড়ে তুলবে তাহলে তোমাকে সেই ভাবে ভাবতে হবে। সেই ক্ষেত্রে তোমাকে পানপাতার সম্পর্কে ডিটেলস জানতে হবে। কিছু পেপারস ও রেডি করতে হতে পারে। পানকে আমাদের দেশে ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলির মধ্যে অন্যতম একটি বলে ধরা হয়।
সেই প্রাচীনকালেও পান সেজে খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। তবে সময় পরিবর্তনের সাথে পান একটি বিশেষ সাড়ম্বরপূর্ণ জিনিসের আওতায় চলে এসেছে। বাহারি মশলা দিয়ে যখন পান সাজানো হয় সেটিকে একটি আকর্ষণীয় জিনিস বলাই যায়।তাই পান এর ব্যবসা করার জন্যে যেমন বিভিন্ন দামের পান পাতার কালেকশন রাখতে হবে তেমনই বাহারি মসলা, চকলেট, রাংতা এগুলোও রাখতে হবে।অনেকে সুপারি, চুন খয়ের এসব দিয়েও পান খেতে ভালোবাসেন। পান একজায়গা থেকে আরেকজায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্যে কিছু অর্র্যাঞ্জমেন্ট প্রয়োজন হয়। এই সব মসলা অনেকসময় নিজের বাড়ি থেকে তৈরী করা যায়। তুমি যদি সেসব না করতে চাও তবে কোথা থেকে একটু কমে সেগুলো জোগাড় করতে পারবে দেখো। বিভিন্ন মেলাতে পানস্টল গুলিও বেশ জনপ্রিয়। বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে ছোটোখাটো মেলা বা বড়ো জমায়েত গুলিতে পানষ্টল গুলি বেশ লাভজনক ব্যবসা বলে ধরা যায়। তবে যেখানেই পানপাতা বিক্রি করো পানের সতেজতার দিকে তোমাকে খেয়াল রাখতে হবে।
ভারতবর্ষের ঔরঙ্গবাদে একটি 50-বছরের পুরানো পানের দোকান রয়েছে এবং এটি একটি অদ্ভুত কারণে জনপ্রিয়। যদিও দোকানের মেনুতে 51 ধরণের পান রয়েছে তবে এর মধ্যে একটির দাম 5000 টাকা। কোহিনূর পান নামে খ্যাত এই পানটি এই দোকানটির বিশেষ আকর্ষণ এবং দেশের বিভিন্ন স্থানের লোকেরা এই স্বাদ গ্রহণের জন্য এখানে আসেন। এই পানটি বিশেষ উপাদান দিয়ে তৈরি যার মধ্যে আছে বিশেষ ধরণের কস্তুরী, জাফরান এবং গোলাপের পাঁপড়ি। এগুলি ছাড়াও পানটির একটি বিশেষ তরল সুগন্ধি রয়েছে যা কেবল পশ্চিমবঙ্গে পাওয়া যায়। তুমিও কিছু স্পেশাল তৈরী করতে পারো। কে বলতে পারে তোমার চেষ্টা সফল হবে না।
পানের তাৎপর্য–
পান কেবল তার স্বাদেই নয়, এর টেক্সচার, রঙ এবং আকারের জন্যও জনপ্রিয় ছিল।পান এতটাই ঐতিহ্যবহ খাবার যা মুগল ইতিহাসের ধর্মগ্রন্থগুলি থেকেও একটি সুপরিচিত রেফারেন্স হিসাবে পাওয়া গিয়েছিলো। বেনারসি পান ভালোবাসা, সুখ এবং আতিথেয়তার প্রতীক। অনাদিকাল থেকেই বেনারসের মানুষ শুভেচ্ছাবার্তা হিসাবে পানকে পরিবেশন করে আসছে। এর পিছনে অনেকগুলি কারণ রয়েছে যা বেনারসি পানকে মূলধারার বাইরে দাঁড় করিয়েছে; এর মধ্যে একটি হল বেনারসের পানওয়ারিরা দেশের অন্যান্য পান বিক্রেতাদের মতো ঘটনাস্থলে তাজা পান প্রস্তুত করতে পারে। যখন নিজের চোখের সামনে এরকম নিখুঁত পান প্রস্তুত করতে দেখা যায় কে আনন্দিত হয়না। দ্বিতীয়ত, পান তৈরির সময় তারা যে উদার পরিমাণ ভালবাসা রাখে তা বর্ণনীয় নয়। বেনারসি পান স্বাদ এবং প্রাচুর্যতা উভয় দিক থেকেই বেশ সমৃদ্ধ। মাঘাই এবং জগন্নাথ পান এই দুটি রকমের পান ছাড়াও বেনারস পানের এক বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে যা শুনলে যে কেউ আশ্চর্য হবে। এটা শুনে অবাক হয়ে যেতে হয় যে এই বিখ্যাত পানটির দাম ১৫ টাকা দিয়ে শুরু হয় এবং কোথাও প্রায় ৫০০০ টাকায় সমাপ্ত হয়। এই পানগুলির দাম নির্ভর করে এর উপাদানগুলি এবং প্রস্তুত করার পদ্ধতির উপর। যত উন্নত মানের উপাদান ব্যবহার করা হয় পানগুলির দামও তত বেশি হয়। বেনারসি পানগুলোর প্রকারতার মধ্যে সাদা পান, মিঠা পান, পাঁচমিভা পান , জর্দা পান , গুলাব পান, কেশর পান, নাভিরাতন পান ,রাজরাতন পান, আমাবৎ পান , পান গিল্লরী এগুলি বিখ্যাত। প্রতিটির আলাদা বৈশিষ্টের জন্যে সারা দেশের মানুষ এখানে আসেন। পান গিল্লরী পানটি কাজুবাদাম ,গুলকান্ড জাতীয় শুকনো ফলের সাথে প্রচুর পরিমাণে সমৃদ্ধ হয় এবং মুখের মধ্যে সতেজ শীতল অনুভূতি ছেড়ে দেয়। আমাবৎ পান একটি মিষ্টি এবং টক স্বাদের একটি দৃষ্টিনন্দন সংমিশ্রণ। আম পাপড়ের কৌতুকময় স্বাদ বিশেষ অনুষ্ঠানের সময় এই নির্দিষ্ট পানকে সর্বাধিক পছন্দসই করে তোলে। বেনারসি রাজরতন পান কাউকে কখনও মুগ্ধ করতে ব্যর্থ হয়না। রাজকীয় স্বাদ; উচ্চ মানের উপাদান এবং অত্যাশ্চর্য রূপালী ফয়েল এই পানটিকে অপূরণীয় করে তোলে। কেসার (জাফরান) এবং এলাচ এর স্বাদযুক্ত এই বেনারসি কেশরপান স্বাদ গন্ধ এবং শারীরিক স্বাস্থ্য উভয়ের জন্য একটি সুস্বাদু ট্রিট হিসাবে তৈরি করে। বেনারসি গুলাব পানের স্নিগ্ধ ও গুলকান্দের সঞ্চার, যে কোনো মানুষের রুচিশীল প্রাণকে উজ্জীবিত করে তুলবে। স্বাদে অতুলনীয় ভারতীয় মশালার একটি মারাত্মক সংমিশ্রণ এবং পুদিনা গন্ধের একটি সংমিশ্রণ, কেবল স্বাদ নয়, আপনার প্রশ্বাস কেও রিফ্রেশ করে। পাঁচমিভা পান একটি আনন্দময়; পাঁচটি শুকনো ফলের সমৃদ্ধ সমাহার এবং মশলায় সমৃদ্ধ বিদেশী গন্ধযুক্ত একটি পান। বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য এই পানটি নিখুঁত। মনোরম সুবাস এবং মিষ্টি স্বাদ এই মিঠা পানটি সবার পছন্দ। সব বয়সের মানুষ এটিকে গ্রহণ করে। এই মিঠা পান সাধারণত শহরের যুবক সম্প্রদায় বেশি পছন্দ করে। সরল তবুও সুস্বাদু সাদা পান সর্বাধিক জনপ্রিয় পান। যা সমস্ত বয়সের লোকের সমন্বয়ে একটি বিশাল ফ্যান–ফলোয়ার্স অর্জন করেছে।
উপসংহার
যেসব দোকানে ফুল বিক্রি করা হয় সেখানেও তুমি যোগাযোগ করতে পারো পান বিক্রি করার জন্যে। অনুষ্ঠান বাড়িগুলিতে যেহেতু বেশি পরিমানে পান লাগে তাই ক্যাটারিং ব্যাবসার সাথে যুক্ত আছেন তাদের সাথে কথা বলতে পারো, প্রয়োজনে তোমার সাথে কন্টাক্ট করার জন্যে। ভারতবর্ষের সব রাজ্য গুলিতে পান পাওয়া যায় না, যে রাজ্যগুলিতে পানের যথেষ্ট চাহিদা আছে অথচ ততটা উৎপাদন হয়না , তুমি সেই সব রাজ্যে মালের যোগান দিতে পারো। এর থেকে তোমার বেশ কিছু লাভ হতে পারে। কন্টাক্ট বাড়ানোর মাধ্যমে ধীরে ধীরে তোমার মার্কেটিং বাড়ানোর চেষ্টা তোমাকে করতে হবে। কম খরচে যে সব ব্যবসা গুলি শুরু করা যায় পান এর ব্যবসা তার মধ্যে অন্যতম। যে কোনো ব্যবসাই ভালো ভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারলে তার থেকে প্রচুর লাভ করা যায় দরকার শুধু নিষ্ঠা, সৎ সাহস, ধৈর্য আর আত্মবিশ্বাস। আশা করি তুমিও তোমার যুদ্ধে সফল হবে।