ছোট আকারে রাসায়নিক ব্যবসা শুরু করতে শীর্ষ আইডিয়াগুলি
রাসায়নিক শিল্প বা ব্যবসা গুলির ভারতীয় বাজারে প্রচুর সুযোগ রয়েছে, তবে এই ব্যবসা শুরু করা খুব কঠিন এবং কঠোর পরিশ্রমের মধ্যে একটি তার সাথে ভাল আর্থিক সাপোর্ট তো থাক্তেই হবে।প্রথমে তুমি কোন রাজ্যে এই ব্যবসা পরিচালোনা করতে চলেছো সেটা একটা বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াবে, কারণ বিভিন্ন রাজ্যের এই ধরণের ব্যবসার জন্য বিভিন্ন বিধি ও বিধান রয়েছে।
এখন তোমাকে দেখতে হবে যে তুমি কী পরিমাণ রাসায়নিক নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে চলেছো এবং আশেপাশের পরিবেশের জন্য তোমার ব্যবসার মজুদ কতটা ক্ষতিকর হবে, সেই অনুযায়ী তোমাকে ব্যবসা বা শিল্প পরিচালনার জন্য আইনি অনুমতি নিতে হবে।ভারতে রাসায়নিক ব্যবসা করার জন্য আইনী অনুমতি গ্রহণ করা খুবই কঠিন। যেখানে বেশ কিছু অর্থ ও সময় বিনিয়োগ করা হতে পারে। অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এই পদক্ষেপে আটকে আছে এবং তাদের ব্যবসা শুরু করতে পারছে না।
রাসায়নিক ব্যবসায় আমাদের পশ্চিমবঙ্গের মতো সরকারের কোনও সমর্থন নেই। এ কারণেই কোন নতুন উদ্যক্তা এখানে কোন নতুন শিল্প বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী নয়। তবে কেবল গুদাম নির্মাণ করা হয়েছে। সুতরাং, তোমাকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের স্থানটি বিশ্লেষণ করতে হবে। তারপরে আইনী অনুমতি নিতে হবে।
কেনো শুরু করবে?
অনেক উচ্চাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তি আজকাল তাদের নিজস্ব উদ্যোগে রাসায়নিক ব্যবসায় তাদের পুজিবিনিয়োগ করছে। রাসায়নিক ব্যবসায়ের সুযোগগুলি কেবল লাভজনক নয়, রফতানিতেও রয়েছে বিশাল সম্ভাবনা। উত্পাদনের পরিমাণের দিক থেকে, ভারতীয় রাসায়নিক শিল্প এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম এবং বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম উত্পাদক। এটি আমাদের জীবনে বিভিন্নভাবে ব্যবহিত হয়। আমরা যে থার্মোপ্লাস্টিক ব্যবহার করি বা আমরা যে কৃত্রিম পোশাক পরিধান করি বা ড্রাগ সেবন করি সব জায়গায় কম বেশী রাসায়নিক এর ব্যবহার রয়েছেই।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কেমন হবে?
কেমিক্যাল ব্যবসায় যেখানে কেমিক্যাল রাখা হয় বা মজুদ করা হয় সে জায়গাটি অরক্ষিত থাকলে তার আশেপাশের এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তাই কেমিক্যাল ব্যবহারের ক্ষেত্রে ও মজুদ করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী। তাই প্রত্যেক রাসায়নিক এর কার্যকারিতা জেনে সেগুলো আলাদা আলাদা ভাবে সংরক্ষন বা মজুদ করা খুব জরুরী।
কর্মীর দরকার আছে কি ?
কেমিক্যাল ব্যবসায় কর্মীর দরকার অবশ্যই আছে তবে তার সংখ্যাটা তোমার ব্যবসার পরিধির উপরে নির্ভর করবে। কর্মী রাখার সময়ে মনে রাখতে হবে সে যেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায় অভিজ্ঞ হয় অন্যথায় তোমার বড় ধরনের লোকশান হয়ে যেতে পারে। কর্মীদের দক্ষ করতে প্রশিক্ষনেরো ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
যেসকল বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে?
শক্ত প্রতিযোগিতা:
দেশীও বহুজাতিক কোম্পানিগুলো রাসায়নিকের মূল্য নির্ধারণে প্রচুরভাবে জড়িত। তাদের গ্রাহকদের অথবা ব্যবসায় নতুন প্রবেশকারীদের নিরুৎসাহিত করার জন্য কম দাম নির্ধারণ করে। রাসায়নিক শিল্প লাভ হয় প্রায় ৫ থেকে ৮ শতাংশ। এগুলি সর্বাধিক বিক্রিত ব্যবসায়িক রাসায়নিক পদার্থ এর বেলায় হয়ে থাকে।
তাই চীন থেকে রাসায়নিক আমদানি বিবেচনা করতে হবে। চীন এখন কেমিক্যালগুলির শীর্ষ বিশ্বের ৩ উত্পাদক দেশের মধ্যে রয়েছে। আসলে কিছু রাসায়নিকের উত্পাদন এখন চীনের জন্য একচেটিয়া। তার মানে এখন অনেক সংস্থা চীনের উপর নির্ভরশীল। যদি তুমি চীন থেকে রাসায়নিক ক্রয় না করে থাকো তবে তুমি ভবিষ্যতে যে কোনও সময় প্রতিযোগিতামূলক বাজার থেকে ছিটকে পড়তে হতে পারে।
কিভাবে ব্যবসা করা যায়?
কেমিক্যাল খাতে ব্যবসা করতে গেলে তোমাকে বেশ কয়েক ধাপে ব্যবসা করতে হতে পারে। প্রথমত আমদানীকারক হিসেবে, দ্বিতীয়ত সরবরাহকারী হিসেবে। তুমি ইচ্ছে করলে নিজেই আমদানীকারক এবং সরবরাহকারী হতে পারবে। প্রশ্ন হচ্ছে কোথায় কোথায় কেমিক্যাল সরবরাহ করবে?
একবার চিন্তা করো তো, কোন কোন ক্ষেত্রে রয়েছে যেখানে কেমিক্যালের ব্যবহার নেই? দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই কেমিক্যালের ব্যবহার রয়েছে। তবে সবার্ধিক কেমিক্যাল ব্যবহৃত হয় পোশাক শিল্প ও ঔষধ শিল্পে। এছাড়াও অটোমোবাইল, ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রাংশ, খাদ্য প্রক্রিয়াকরন, সাবান, ডিটারজেন্ট, কলম ইত্যাদি ক্ষেত্রেও কেমিক্যালের বিশদ ব্যবহার হয়ে থাকে।
কেমিক্যালের ধরন গুলো কি কি?
আজকাল যে কোন ক্যামিকেলের চাহিদা বাজারে প্রচুর রয়েছে। তবে বিভিন্ন ধরনের ক্যামিকেল রয়েছে যার প্রকারভেদ গুলো তোমার সুবুধার কথা বিবেচনা করে নিম্নে তুলে ধরা হলো। এর যে কোন কয়েকটি ক্যামিকেল নিয়ে প্রাথমিকভাবে তুমি ব্যবসা পরিচালনা করতে পারো।
১। ডাইস্টাফ (রি–এ্যাকটিভ, এসিড, ডাইরেক্ট, বেসিক, সলভেন্ট ডাই)
২। প্রোসেস (প্রি–ট্রিটমেন্ট, ডাইং, প্রিন্টিং, ফিনিশিং)
৩। ডাই (ইঙ্কজেক্ট, সোপ, ডিটারজেন্ট)
৪। পিগমেন্ট (অর্গানিক, ইন–অর্গানিক)
৫। ন্যাফথল, ফাস্ট বেস এবং কালার সল্ট
৬। টেক্সটাইল অক্সিলিয়ারি
৭। অপটিকাল ব্রাইটনার
৮। ক্যারামেল কালার
৯। সিনথেটিক ফুড কালার
১০। থিকেনার
১১। এডহেসিভ
১২। এনজাইম
১৩। ল্যাব কেমিক্যাল
১৪। ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিক্যালে
১। স্পিনিং মিলে ব্যবহিত কেমিক্যাল
২। ইয়ার্ণ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ব্যবহিত কেমিক্যাল
৩। ফেব্রিক্স উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে ব্যবহিত কেমিক্যাল
৪। ডাইং, প্রিন্টিং ও ফিনিশিং মিলে ব্যবহিত কেমিক্যাল
৫। ফার্মাসিউটিক্যালসে ব্যবহিত কেমিক্যাল
৬। ল্যাব সমৃদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবহিত কেমিক্যাল
এছাড়াও রয়েছে অগনিত কলম, সাবান, ডিটারজেন্ট ইত্যাদি তৈরির কারখানা। হিসেব করে দেখা গেছে মোট মিলগুলোর তুলনায় দেশে আমদানীকারক ও সরবরাহকারীর সংখ্যা অনেক কম। তাই ব্যবসা ও ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট যারা আছে তারা একচেটিয়াভাবে ব্যবসাটি পরিচালনা করে যাচ্ছে।
কেমন পুঁজি বিনিয়োগ করতে হতে পারে?
প্রাথমিকভাবে কেমিক্যাল খাতে কত পুঁজি বিনিয়োগ করা লাগতে পারে এটা বলা কঠিন। কারন কেমিক্যাল খাতটি বিশাল। প্রতি বছর প্রচুর নতুন নতুন কেমিক্যাল আবিষ্কৃত হয়। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে সেগুলো চাহিদাভেদে আমদানী করতে হয়। ভারত, আমেরিকা ও চীন হচ্ছে কেমিক্যালের সবার্পেক্ষা বড় রপ্তানীকারক দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। তবে ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারেও কেমিক্যালের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
তবে এই ব্যবসায় গ্রাহককে সন্তুষ্ট করার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরী। তুমি খুব কম গ্রাহক পাবে যদি গ্রাহকদের তুষ্ট রাখতে না পারো। তাই এই ব্যবসায় নামার আগে ব্যবসায়িক পুঁজি বিনিয়োগ করার পাশাপাশি অন্তত আরও ৬ মাস যেন ব্যবসাটিকে চালিয়ে নেওয়া যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি তোমার প্রত্যেক গ্রাহক এর পেছেনেও কয়েক মাস লাগাতার বিনিয়োগ করতে হতে পারে।
কেমন আয় হতে পারে?
যে কোন ব্যবসাতে মূলত আউ নির্ভর করে তার পণ্য বিক্রির উপরে। পণ্য বিক্রি বেশী হলে ব্যবসার আয় বাড়ে কম হলে আয় কমে। তাই এই ব্যবসাটিও একই রকম। কিন্তু কেমিক্যাল ব্যবসা একচেটিয়া হওয়ার কারণে এই ব্যবসাতে লসের হার একদম নেই বললেই চলে। আর আয়ও হতে কেমিক্যাল ভেদে পারে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত।
তাই কেমিক্যাল ব্যবসায় আমাদের ভারত দেশ অন্যতম একটি সম্ভাবনাময় ব্যবসা ক্ষেত্র। এতে মুনাফা অত্যাধিক। তুমি যদি তোমার মেধা–বিনিয়োগ–অভিজ্ঞতা–মার্কেটিং দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে একবার ব্যবসাটি দাঁড় করিয়ে দিতে পারো তবে ব্যবসাটি তোমাকে অনেক বেশী লাভবান করতে পারে। আর এই ব্যবসায় ভালো করে তুমিও নিজেকে একজন সফল কেমিক্যাল উদ্যক্তা হিসেবে সফল হতে পারবে।