অনলাইন গ্রোসারি শুরু করার আগে যে বিষয়গুলো তোমাকে মেনে চলতে হবে –
অনলাইন ব্যাবসার রমরমা এখন সর্বত্র। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস থেকে বিলাসিতা দ্রব্য, ঘর সাজানোর একটা অতি সাধারণ জিনিস থেকে উৎসব মুখর দিনের সরঞ্জাম, ইলেক্ট্রনিক্স আইটেম সবই অনলাইন।আমরা বেশিরভাগই ফোন নিয়ে সব জায়গায় চলা ফেরা করি। ফলে অবসর সময়ে জিনিসপত্র দেখতে দেখতে টুক করে একটা দুটো জিনিস আমরা অর্ডার দিয়েই থাকি।কোথাও না গিয়ে নিজের পছন্দমতো জিনিস পছন্দমতো দামে পাওয়া সবার পক্ষেই বেশ আরামদায়ক। আর এক্ষেত্রে যদি রোজকার প্রয়োজনীয় জিনিস বাড়ির দরজায় কেউ পৌঁছে দেয় সবাই তাতে উৎসাহ দেখাবে। অনেক মানুষের পক্ষেই সম্ভব হয় না সব সময় দোকানে গিয়ে জিনিসপত্র কিনে বাড়ি নিয়ে আসা। আর এই দীর্ঘ লকডাউন অবস্থা আমাদের অনলাইন ট্রানসাকশানে বেশ অভস্থ্য করে তুলেছে। মোটামোটি সব বয়সের মানুষই এখন অনলাইন ব্যবসা, জিনিসপত্র কেনাবেচা করার অভ্যাস লব্ধ করছেন। সব থেকে বড়ো সুবিধা জিনিস কেনার পরও তা ফেরত দেয়া যায় তার জন্য কারুর কাছে যেতে হয় না। জোর করে একটা জিনিসের সাথে আরেকটা জিনিস কিনতেই হবে এরকম কোনো শর্তও নেই। একই জিনিসের অনেক রকম ভ্যারাইটি আমরা দেখতেই পাই ফলে নিজের পছন্দ মতো দামে সেই জিনিস কিনতেও কোনো বাধা নেই। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের ক্ষেত্রে গ্রোসারি আইটেম বা মুদিখানার জিনিসপত্র একটা অপরিহার্য অংশ। তুমি যদি ভেবে থাকো এই সব অত্যাবশকীয় জিনিসই তোমার ব্যাবসার প্রধান উপকরণ হবে তাহলে আর দেরি কিসের ? তোমার কাজে লেগে পড়ো কয়েকটা সুকৌশলের সাহায্যে।
প্রথমতঃ ,
তোমাকে একটা ওয়েবসাইট প্রস্তুত করতে হবে যেখানে সমস্ত উপকরণ সাজানো থাকবে। এই ওয়েবসাইট গুলি অনেক রকম হয়। সস্তা থেকে শুরু করে দামি। বিশ্বাস হচ্ছে না? কিন্তু এটাই সত্যি। গুগলে আমরা সবাই কোনো জিনিস সার্চ করি পরপর অনেক ওয়েবসাইট আসে এই ওয়েবসাইট প্রাইস সাহায্য করে ওয়েবসাইট রেঙ্কিং অর্থাৎ কোনটার পর কোনটা থাকবে। একটা দামি ওয়েবসাইট সাহায্য করে ওয়েবসাইট এর প্রেসেন্টেশন এবং সেটা গুগল পেজের কোথায় থাকবে। সাধারণতঃ দুই তিন হাজার থেকে আট নয় হাজার এর মধ্যে একটা ওয়েবসাইট তুমি কিনতে পারবে। তোমাকে এই ওয়েবসাইট ডেকোরেশন এর ব্যাপারটা খুব মনোযোগ দিতে হবে। যে কোনো একটা জিনিস তার সাথে তার প্রাইস, এভেইলবিলিটি, ফিচারস, কদিন এর মধ্যে একজন ক্লায়েন্ট সেই জিনিস হাতে পাবে, জিনিসটির ব্যবহারের লাস্ট ডেট সবই যেন সহজ এবং সুন্দর ভাবে সেখানে ফুটে ওঠে। প্রথমেই কেউ যখন ওয়েবসাইট ওপেন করবে এই বিষয়গুলোই তাকে আকর্ষণ করবে। ফলে তোমাকে বিশেষ দক্ষতার সাথে এই বিষয় টি দেখতে হবে। তুমি যদি ওয়েবসাইট ডেকোরেশনের ব্যাপারটিতে দক্ষ না হও অভিজ্ঞ কারুর থেকে সাহায্য নাও। কিন্তু প্রথম থেকেই এমন ভাবে কাজ শুরু করো যাতে পিছন ফিরে তাকাতে না হয়। প্রফেশনাল কথাটি বর্তমানে আমাদের লাইফের সাথে ভীষণ ভাবে জড়িত। প্রথম দেখাতেই ইম্প্রেশন জমাতে হবে এটাই হবে তোমার মেন মোটো আর এই জন্যেই এই কম্পিটিটিভ দুনিয়াতে তোমার জায়গা পাকাপাকি ভাবে সুস্থির করতে হলে দরকার তোমাকে ওয়েবসাইট ডিসাইন করার সময় মনোযোগ দেওয়া। ধরো, কেউ যদি একটা শ্যাম্পু কেনার জন্যে সার্চ করে সেটা দেখতে যদি সাধারণত পিঙ্ক কালার হয়, হয়তো তোমার ওয়েবসাইটের রিসোলিউশন এর জন্যে সেটাকে দেখতে একটা কালচে টাইপ দেখতে লাগে, সবার প্রথমেই সে ভাববে এটা কি জেনুইন জিনিস? আমি তো এরকম দেখিনি। তাহলে এ জিনিসটা কি আদৌ আমার কেনা উচিত? আর ওয়েবসাইটের প্রাইসের ওপর এই সব দিকগুলো ডিপেন্ড করে। তাই যেহেতু এটা এককালীন খরচ তাই এক্ষেত্রেএকটু উদারতা গ্রহণ করাই তোমার জন্যে ভালো হবে।
দ্বিতীয়ত:,
যারা তোমার ওয়েবসাইট থেকে কোন প্রোডাক্ট অর্ডার করবে তোমাকে ঠিক সময়ে ঠিক ভাবে সেই ডেলিভারি দিতে হবে এটা তোমার মাথায় সবসময় রাখতে হবে। আর তোমার ক্যাপাসিটি এর উপর তোমার রেসিভড এমাউন্ট ফিক্সড করতে হবে।তোমার যদি পঞ্চাশ পিস্ আইটেম সাপ্লাই দেয়ার ক্ষমতা থাকে তার থেকে বেশি অর্ডার প্রথমেই নেয়া ভালো হবে না। কারণ ভালো প্রোডাক্ট সাপ্লাই করতে না পারলে কাস্টমাররা খুশি হবে না। তাই তোমাকে ওয়েবসাইট তৈরী করার পাশাপাশি বিভিন্ন সাপ্লায়ার এর সাথে কথা বলতে হবে যাতে অর্ডার দেয়ার সাথে সাথে তোমাকে সেটা দিতে পারে।
তৃতীয়তঃ,
এরপর আসি প্যাকেজিং এর ব্যাপারে। যে কোন জিনিস ডেলিভারি দেয়ার সময় কোনো ভাবে যদি সেটা নষ্ট হয়ে যায় সেটা তোমার ব্যাবসার জন্যে একটা বড়ো ক্ষতি ।বা ডেলিভারী দেয়ার পর যদি কাস্টমার সেটা দেখে কোনো ভাবে খারাপ হয়ে গিয়েছে তোমার ব্যবসা শুরু হওয়ার আগেই সেটা একটা প্রশ্ন চিহ্নর সামনে গিয়ে পড়বে। তাই সুদক্ষের মতো তোমাকে জিনিস যাতে ভালো থাকে সেই ব্যাপারে যত্নশীল হতে হবে। সেক্ষেত্রে যদি তোমার মনে হয় কস্টিং বেশি হয়ে যাচ্ছে একটা বেশি এমাউন্ট ফিক্সড করতে পারো বা কম অংকের জিনিসের জন্যে একটা ডেলিভারি চার্জেস অ্যাড করতে পারো। যেহেতু সব ধরণের ওয়েবসাইট গুলোই আজকাল ডেলিভারি চার্জ নিচ্ছে তাই মানুষ তার সাথে কিছুটা অভ্যস্ত এটা বলাই যায়।
চতুর্থতঃ
এরপর তোমার এলাকা নির্ধারণ এর দিকে তোমাকে নজর দিতে হবে। তুমি তোমার সুবিধা মতো জায়গা ঠিক করতেই পারো কিন্তু সেটা যেন খুব বেশি বড়ো না হয়। যেহেতু তুমি নতুন এবং তোমার সাথে যারা কাজ করছে তাদের পারফরমেন্সের ব্যাপারেও তুমি নিশ্চিন্ত নও তাই ছোট থেকে শুরু করে বড়োর দিকে যাওয়া টাই ভালো হবে। এরপর ডেলিভারি ভ্যান এর ব্যাপারে আলোচনা করা যাক। গ্রোসারি তে জিনিসপত্র যেহেতু বেশি পরিমানে অর্ডার দেয়ারই চল বা প্যাকেট টাইপের জিনিস বেশি থাকে তাই কোনো দুই চাকার যান থেকে তিন চাকার যান ব্যবহার করে ভালো। সেটাও ব্যবসা শুরু করার আগে তোমাকে আয়োজন করতে হবে।
পঞ্চমত
বর্তমান দিনে এডভার্টাইসমেন্ট যে কোনো নতুন জিনিসকে সবার সামনে তুলে ধরে। যখন কোনো প্রোডাক্টকে সর্বসম্মুখে লঞ্চ করতে হবে মানুষের মধ্যে তোমার এই চেষ্টাকে ছড়িয়ে দাও যাতে সবাই দেখে তোমার কাছ থেকে সেটা কেনে। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোর সাহায্যে তুমি তোমার এরিয়ার মধ্যে তোমার ব্র্যান্ড বা কোম্পানীর ব্যাপারে এডভারটাইস করতে পারো। ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামের সাহায্যে সব কোম্পানি গুলোই তাদের পপুলারিটি বাড়ায়। তোমার ভেহিকল এই ক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। সেখানে তোমার ওয়েবসাইটের নাম সহ বিজ্ঞাপনের ডিটেলস যেন থাকে সেটা খেয়াল রাখো। সারাদিনে জিনিস ডেলিভারি দেয়ার জন্যে একদিন বা একমাসের জন্যে তোমাকে কত পেমেন্ট করতে হবে সেই দিকে খেয়াল রাখাও তোমার কাজ।
এরপর আসি তোমার ব্যাবসার পেপারস এর ব্যাপারে। এক্ষেত্রে GST না লাগলেও তোমাকে FSSAI এর অনুমতি পত্র জোগাড় করতে হবে যার জন্যে কিছু খরচ তোমাকে করতে হবে। তবে এগুলো ফিক্সড এবং এককালীন খরচ। আর এই সমস্ত আয়োজন করতে তোমাকে দশ থেকে পনেরো হাজার টাকার মতো ব্যবস্থা করতে হবে। আর সমস্ত ব্যাপার টাই তোমাকে খুব ইনিশিয়েটিভ ভাবে করতে হবে সঠিক অর্র্যাঞ্জমেন্টের সাথে। এক্ষেত্রে তোমার শিক্ষাগত যোগ্যতার থেকেও বেশি প্রয়োজন সঠিক আয়োজন, একটা ছোট জায়গা সমস্ত রকম কাজকর্ম আর প্যাকিং করার জন্যে, তোমার কিছু সহকারী যারা তোমার কাজে তোমাকে সাহায্য করবে।
উপসংহার
এতো কিছু আয়োজন করতে গিয়ে এমন যেন না হয় যে কিছুটা এগিয়ে তোমাকে থেমে যেতে হলো। তবে প্রথম থেকেই বাকি ওয়েবসাইটের দামের সাথে তোমার প্রাইসের যেন মিল থাকে আর কিছু ডিসকাউন্ট বা বোনাস অফার এর ব্যবস্থা করা যায় কিনা সেগুলোর দিকে নজর রাখো। যে কোনো জিনিসের মৌলিকতাই তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে আর যেখানে প্রতিটি জিনিস আজ প্রতিযোগিতার মুখে সেখানে তোমার উদ্যোগ যেন যেন বিফল না হয় সেদিনকে প্রথম থেকে নজর দিতে হবে।