(কীভাবে ভারতে ব্যাটারি ব্যবসা শুরু করবেন?)
বর্তমান বিশ্ব ইলেকট্রিক পন্যের বিশ্ব। যতই দিন যাচ্ছে মানুষ তেলে চালিত যন্ত্রাংশের পরিবর্তে ইলেক্ট্রিক যন্ত্রাংশের উপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। বিশ্বায়নের এই ছোয়াটা আমাদের দেশেও কম বেশী সব জায়গায় লেগেছে। আজকাল মটর গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান গুলো তেলের পরিবর্তে বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি নির্মাণের দিকে জোড় দিয়েছে। কিছু কিছু গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান তেল ও ব্যাটারির কম্বিনেশন করে গাড়ি নির্মাণ করছে যা হাইব্রিড গাড়ি নামে পরিচিত। এমনকি তুমি তোমার থাকার ঘরেও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা পেতে ব্যাটারি চালিত আইপিএস এর ব্যবহার করো। শুধু তাই নয়, তুমি যে দিকেই তাকাও না কেনো সবখানেই এই ব্যাটারি চলিত ডিভাইস দেখতে পাবে। তাই তুমি চাইলে নিজের এলাকাতেই এই ব্যাটারির বিজনেস শুরু করে একজন সফল উদ্যোগতা হয়ে যেতে পারো।
কিভাবে শুরু করবে?
ব্যাটারি ব্যাবসা দুভাবে শুরু করা যায়ঃ (১) বড় কোন কম্পানির ডিলারশিপ, ডিস্টিবিউটারশিপ বা এজেন্সি নিয়ে নিয়ে। (২) নিজের একটি দোকান করে বড় বড় পপুলার কম্পানির কিছু কিছু করে ব্যাটারি রেখে। ইন্ডিয়াতে এক্সাইড, এমেরন, লিউমিনিয়াস, সু–ক্যাম, ওকায়া এবং মাইক্রোট্র্যাক এর মতো অনেক পপুলার ব্যাটারি কম্পানি আছে। এসব ব্যাটারি চাহিদা কাস্টমারের কাছে এতোতাই বেশী যে তারা নিজে থেকে এগুলোর চাহিদা দিয়ে থাকে।
তাই, যদি তুমি ব্যাবসাটি শুরু করতে চাও তবে সর্বপ্রথমে তোমার এলাকায় কোন ব্যাটারি কম্পানির ভালো বাজার রয়েছে এ বিষয়ে তোমার আশে পাশের মেকারনিকদের পরামর্শ নিতে পারো। আরও দু’এক জন মেকারনিকের পরামর্শ যাচাই করার পরে তুমি সেই কম্পানি গুলোর এজেন্সি বা ডিলারশিপ নিয়ে অথবা নিজেই দোকান দিয়ে দোকানে ওই সমস্ত কম্পানির ব্যাটারি গুলো রেখে নিশ্চিন্তে ব্যাবসা শুরু করে দিতে পারো।
সার্ভিস ব্যাটারিঃ
যদি তুমি লম্বা সময় ধরে তোমার ব্যাবসা চালিয়ে যেতে চাও তবে তোমাকে সার্ভিস ব্যাটারি রাখতেই হবে। কেনোনা ব্যাটারি ছাড়া গাড়ি চালু হয় না আর একবার চালু হয়ে পথের মাঝে বন্ধ হয়ে আর চালু না হলে বিরম্বনার অন্ত নেই।
এখন, যে সব গাড়ির ব্যাটারি নষ্ট হয়ে গেছে সেগুলো তোমার কাছে সারাতে আসলে তুমি তাদের গাড়িটায় সার্ভিস ব্যাটারি লাগিয়ে দিয়ে গাড়ি চালু রাখার ব্যাবস্থা করে দিতে পারো। এতে করে তাদের গাড়িও চলু থাকবে আর নির্দিষ্ট সময়ে তুমি সার্ভিস ব্যাটারি ভাড়া দিয়ে এক্সট্রা আয় করতে পারবে। তারপরে গাড়ির নির্দিষ্ট ব্যাটারিটি কম্পানি থেকে ভালো হয়ে আসলে তুমি সেটা আবার লাগিয়ে দেওয়ালে।
ব্যাটারি কোথায় সস্তা দামে কিনতে পাওয়া যায়?
একদম সহজ উপায় গুলো গুগলে সার্চ করা। তুমি গুগলে গিয়ে লিখবে “ড্রিস্ট্রিবিউটার নেয়ার মি” ( Dristributer near me)। এরপরে তুমি সার্চ রেজেল্ট থেকে “যাস্ট ডায়েল”( JUST DIAL) ওয়েবসাইটে গিয়ে সরাসরি তোমার জিনিসগুলো কিনতে পারবে। এছারোও “ইন্ডিয়া মারট” ( INDIAMART) থেকেও তুমি তোমার জিনিসগুলো কিনতে পারো। এই দুই ওয়েবসাইট তোমার ঘরের দরজায় জিনিসগুলো দিয়ে যাবে।
নষ্ট ব্যাটারি কিভাবে কোম্পানি রিটার্ন করে?
তুমি যে ব্যাটারিটি কাস্টমারকে গ্যারান্টি সহ বিক্রি করেছিলে তা যদি খারাপ হয়ে যায় তবে তোমকে কম্পানির নির্দিষ্ট ফর্মেট অনুযায়ী অভিযোগ দিতে হবে। আভিযোগ দেওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে কোম্পানি তোমার কাছে সার্ভিস ম্যান পাঠাবে। সার্ভিস ম্যান ব্যাটারি চেক করার পর যদি সমস্যা থেকেই যায় তবে সেটিকে কম্পানির নিকট ফেরত দিয়ে দেয় এবং কম্পমানি থেকে নতুন একটি ব্যাটারি এনে দেয়।
দোকানের অবস্থান ও আয়তন কেমন হবে?
তোমার ব্যাটারি দোকানের অবস্থান গাড়ি মেরামত করে এমন দোকান গুলোর আশেপাশে হওয়া উচিত। এতে করে তোমার ব্যাবসা বাড়ার সম্ভাবনা খুব বেশী থাকবে। দোকানের আয়তন নির্ভর করবে তুমি ব্যবসায় কেমন পুঁজি বিনিয়োগ করছো তার উপরে।
কর্মী সংগ্রহঃ
অন্ততপক্ষে দোকানে একজন কর্মীর দরকার আছে । আর সেই কর্মী যদি ব্যাটারীর খোলা ও লাগাই এবং আনুসঙ্গিক কাজে এ দক্ষ হয় তাহলে তো কথাই নেই। তরতরিয়ে বড় হবে তোমার ব্যাবসা। কিন্তু এরকম কর্মী খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন তবুও নিজের স্বার্থে একবার খোঁজ করে দেখতে পারো যদি পাও তবে বিক্রির জন্য একজন বিশ্বস্ত কর্মী নিয়োগ দাও এবং তার সাথে তুমি নিজেও একটু যোগান দাও।
ব্যাবসার পুজি কেমন লাগে?
এটি এমন একটি ব্যবসা যেখানে তুমি যতো খুশি ততো পুঁজি বিনিয়োগ করতে পাররো। তবে সর্বনিম্ন ৪ থেকে ৫ লাখ রুপি বিনিয়োগ করতে হবে। এই পরিমাণ রুপি এজন্য দরকার যে তোমাকে যদি ভিন্ন কম্পানির ব্যাটারি রাখতে হয়, ভিন্ন ভিন্ন গাড়ির ব্যাটারি রাখতে হয় তবে এই পরিমাণ রুপি দরকার হবে। কেনোনা, এখানে একটি মডেলের ব্যাটারি আরেকটি মডেলে ফিট হয় না। গাড়ির মডেল অনুযায়ী ব্যাটারির ক্যাপাসিটিও ভিন্ন হয়।
ব্যাটারির দাম কেমন পড়ে?
কম্পানি যে সকল ব্যাটারি বিক্রয়ের জন্য দেয় সেগুলো দাম ৪০০০ থেকে শুরু করে ১০,০০০ রুপি পর্যন্ত হয়ে থাকে। মূলত দাম নির্ভর করে ব্যাটারি ইনভার্টার নাকি সিম্পল বা কত সেলের ব্যাটারি তার উপরে।
প্রাথমিক প্রচারণা ও ক্রেতা সংগ্রহ কি করে হবে?
সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে গেলে তোমার এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে দোকানের যাত্রা শুরু করাও। সেইসাথে শুরুর দিন থেকে প্রথম কয়েক মাস মেকারনিকদের ও ক্রেতাদেরকে বিশেষ সুবিধা দাও যাতে তারা বেশ আকৃষ্ট হয়। এতে করে তোমার দোকানের প্রচার প্রচারণা বেশ ভালো হবে। বিক্রি অনুযায়ী মেকারনিকদের কমিশনের ব্যাবস্থাও করতে পারো।
এছারা, তোমার দোকানের প্রথম ১০০ জন ক্রেতাকে নিয়ে করতে পারো কৃতজ্ঞতা স্বারকের ব্যবস্থা যা তোমার দোকানের প্রচারণাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোমার ব্যাবসার একটি আইডি খুলেও ফ্রিতে প্রচার প্রচারণা করতে পারো। সেক্ষেত্রে তোমার প্রতিদিনের কাজের আপডেট গুলো পোস্ট করলেই অনেকাংশে ক্রেতারা অকৃষ্ট হয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে তোমার দোকানের নামে একটি ফেসবুক পেজ খুলে তোমার এরিয়াতে বা শহরে তোমার দোকানের বিজ্ঞাপন বুস্ট করে দিতে পারো যা আরও ভালো ফল বয়ে আনবে।
ব্যাবসার সম্ভাব্য আয় কেমন?
ব্যাটারি বিজনেস এর আয় তুলনামূলক ভাবে অন্যন্য ব্যবসার থেকে অনেক বেশী। তুমি এই ব্যাবসায় ১৮ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত লাভ করতে পারো। আর মেকারনিকের সাথে তোমার সম্পর্ক যদি ভালো থাকে তবে লাভের পরিমাণটা আরও বাড়তে পারে। এছাড়া, সার্ভিস ব্যাটারি ভাড়া দিয়ে দিনে ৩০০ থেকে ৫০০ রুপি আয় করা যায়।
করোনা ভাইরাস এর কারণে সারা দেশেই দীর্ঘদিন লকডাউন চলছে। যার দরুন গাড়ির ব্যাটারি গুলো চার্জ না পেয়ে ইতিমধ্যেই কার্যকরীতা হারাতে শুরু করে দিয়েছে। তাই লকডাউন পরবর্তী সময়ে এই ব্যাটারি ব্যাবসাটি তোমার জন্য হতে পারে অন্যতম সফল উদ্যাগক্তা হওয়ার দারুন একটা সুযোগ। সুযোগটি কাজে লাগাও, সফল উদ্যাগক্তা বনে যাও।