ভারতে বেকারি ব্যবসা কীভাবে শুরু করবেন
খাবার ভিত্তিক ব্যবসার আইডিয়া এর মধ্যে বেকারি ব্যবসা অন্যতম। এই ব্যবসাকে খাবার ভিত্তিক উৎপাদনমুখী ব্যবসা ও বলা যেতে পারে। তোমার নিজের নামে উৎপাদনমুখী ব্র্যান্ড খুলতে চাইলে এই ব্যবসাটা করতে পারো। লাভের দিক থেকে এই ব্যবসা অতুলনীয়।
যাইহোক, এই ব্যবসার মূল সমস্যা হচ্ছে বাকিতে পণ্য বিক্রি করা। যদিও এই সমস্যা তেমন কিছু না যদি তোমার সঠিক বিজনেস প্ল্যান থাকে। বিস্কুট, কেক, কুকিজ, বিস্কুট এবং জন্মদিনের কেক তৈরি করা হয়। বর্তমানে ফাস্টফুড, মিষ্টি সহ অনেক রকমের খাবার পণ্য বেকারিতে তৈরী হচ্ছে। তাই সাতপাঁচ না ভেবে আজিই একটি সঠিক ব্যবসা পরিকল্পনা তৈরি করে মাঝারি মানের বেকারি ব্যবসা শুরু করে দিতে পারো।
আজকাল মানুষের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের কারণে বেকারি প্রসারিত হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বেকারি শিল্পের অগ্রগতি চোখে পড়ছে। যে কোন দোকানে বিশেষ করে চায়ের দোকানে খুব কম দামে বেকারি পণ্য পাওয়া যায়।
মানুষের তাৎক্ষণিক চাহিদা মেটানোর জন্য এখন দেশের তৈরি বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেট বিস্কুট পাওয়া যায়। নতুন নতুন বেকারি কোম্পানি নিত্যনতুন পন্যের চমক নিয়ে বাজারে আসছে। তাই দিন দিন বেড়েই চলছে বেকারি পণ্যের চাহিদা।
কেন বেকারি ব্যবসা শুরু করবে?
যে কেউ স্বল্প পরিমাণ পুঁজি বিনিয়োগ করে ব্যবসাটি শুরু করতে পারে। পণ্যের চাহিদাও অনেক ব্যাপক। আর বাজারের বেকারি পন্যের চাহিদা যে হারে বাড়ছে তাতে এই ব্যবসার বড় একটা ভবিষ্যতে আছে। বেকারি ব্যবসা শুরু করতে তেমন কোনো পরিশ্রমের প্রয়োজন হয়না।
যে কোন চায়ের দোকান কিংবা মুদির দোকানে বেকারি পণ্য পাওয়া যায় তাই এই বাজারজাত করতে খুব বেশী পরিশ্রমেরো দরকার হয় না। পণ্য যত বেশী বিক্রি করা যায় মুনাফার পরিমাণ তত বেশি হবে। এই ব্যবসাটি ঝুঁকির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে অনেক কম। যে কন বড় বাজারের পাশে খালি জায়গায় এই ব্যবসাটি শুরু করা যেতে পারে। তবে বড় একটা জায়গা পাওয়া যায় সেখানেই শুরু করা ভালো।
মাঝারি ধরনের একটি বেকারি ফ্যাক্টরি ও যন্ত্রপাতি সহ সব মিলিয়ে ২ থেকে ৪ লক্ষ রুপি বিনিয়োগ করলে ভালো হয়। তবে এর কম পুঁজি দিয়েও বেকারি ব্যবসা শুরু করা যায়। তুমি কেমন পুঁজি বিনিয়োগ করছো তার পরিমাণ নির্ভর করবে তুমি কেমন পরিসরে ব্যবসা শুরু করতে চাও তার উপরে।
যেভাবে বেকারি ব্যবসা শুরু করবে?
তুমি চাইলেই হুট করে বেকারি ব্যবসা শুরু করে দিতে পারেন না। শুরু করার জন্য চাই সঠিক একটি পরিকল্পনা। বিজনেস প্লান তোমার নিজেকেই প্রথমে চিন্তা করতে হবে। তুমি কি ধরনের বেকারী ব্যবসা শুরু করতে চাও, কারখানার জন্য তোমার ঠিক কতটুকু জায়গা দরকার সর্বপ্রথম তা জানতে হবে।
এসব ভালোভাবে জানতে তোমার আশেপাশের কোন ব্যকারি আছে কিনা তা খুঁজে দেখো। তারা কি পণ্য উৎপাদন করছে তা জেনে নাও এবং বাজারে পণ্যের চাহিদা আছে কিন্তু তারা উৎপাদন করতে পারছে না তা খুঁজে বের করো। অর্থাৎ তাদের দুর্বল দিকগুলো খুঁজে বের করো এবং সেইসাথে তাদের কাছ থেকেই জানার চেষ্টা করো যে বেকারি ব্যবসা করতে কোথা থেকে অনুমতি নিতে হয়, ট্রেডলাইসেন্স, জিএসটি করা ছাড়াও আর কি কি কাগজপত্রআদির দরকার পড়ে।
প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র:
তোমার একটি কারখানাতেই বিস্কুট, কেক, বিভিন্ন ধরনের রুটিসহ সব ধরনের বেকারি পণ্য বানাতে পারবে। প্রাথমিকভাবে বিস্কুট তৈরিতে লাগবে ওভেন, বিশেষ ধরনের টেবিল, ছাঁচ, পাতা মেশিন (যেখানে বিস্কুট কেটে রাখা হয়) এবং মিকশ্চার মেশিন। কেক বানাতে লাগবে ছাঁচ, বিশেষ ধরনের কাগজ, ছুরি। পাউরুটি বানাতে কিনতে হবে এক বা দুই পাউন্ডের ছাঁচ ও ব্রাশ। এসব যন্ত্রপাতি আজকাল তোমার নিকটস্থ শহরের পাইকারি বাজারেই পেয়ে যাবে। আর যদি অনলাইন থেকে কিনতে চাও তবে আমাজান তো আছেই। এছাড়াও লাগবে প্যাকেটজাত করা মেশিন, আটা, ময়দা, চিনি, তেলসহ প্রয়োজনীয় পণ্য।
বেকারি ব্যবসার যোগ্যতাঃ
বিভিন্ন ধরনের বেকারি পণ্য সাধারণত সাধারনত কারিগররা বানিয়ে থাকে তাই এই ব্যবসায় শিক্ষাগত যোগ্যতার চেয়ে কারিগিরি দক্ষতার কদর বেশি। কারিগরদের দেখাশোনা করার জন্য এবং আয়–ব্যয়ের হিসাব রাখার জন্য কিছুটা শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন রয়েছে। তবে তোমার কর্মীদের পরিচালনা করার দক্ষতা এবং আয়–ব্যয়ের হিসাব রাখার দক্ষতা যদি ভাল থাকে তবে সাধারণত শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন হয় না।
বাজারজাতকরণ:
বেকারি ব্যবসায় বাজারজাতকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তুমি এই বিভাগে যত বেশি ভালো হবে ততই সাফল্যের শেখরে পৌঁছে যাবে এর জন্য দু’তিনজন দক্ষ লোক রাখতে হবে, যারা বিভিন্ন দোকানে পণ্য সরবরাহ করবে। এ ছাড়া বড় হাসপাতাল, করপোরেট অফিসসহ বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে পণ্য সরবরাহ করা গেলে ব্যবসা বাড়বে। আবার ব্যবসা বাড়লে নিজেদের শোরুম নিয়ে সেখানেও বিক্রি করা যেতে পারে।
এছাড়াও তুমি ডিজিটাল বিপণন কৌশল অবলম্বন করতে পারো। সেক্ষেত্রে তোমার বেকারি প্রতিষ্ঠানের নামে একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পেজ খুলে তার মাধ্যমে বেকারির প্রোডাক্ট গুলো পোস্ট করে বা প্রোডাক্ট গুলোর বিজ্ঞাপন প্রচার করে তুমি বড় একটা বাজার দখল করতে পারবে। তোমার বেকারির নামে একটা ওয়েবসাইট করে ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও আপনার ব্যবসাকে প্রসার করে অনলাইনেই ব্যাবসার বিপণনের অর্ধেক কাজ সমাধা করে নিতে পারো।
উৎপাদন ব্যায় ও আয়ঃ
উৎপাদন ব্যয় ও লাভসাধারণত আট কেজি বিস্কুট বানাতে প্রায় ৮০০ রুপি খরচ হবে। বিক্রি করা যাবে প্রায় ২০০০ রুপি। লাভ হবে প্রায় ১২০০ রুপি। ১৮ পাউন্ড কেক বানাতে ১০০০ রুপিরর মতো খরচ হবে। বিক্রি করা যাবে প্রায় ৩০০০ রুপি। এতে লাভ থাকবে প্রায় ২০০০ রুপি। তিন পাউন্ড পাউরুটি বানাতে ৬০ রুপি খরচ হয়। বিক্রি করা যায় ১২০ রুপিতে। এতে লাভ থাকে ৬০ রুপি। মাঝারি একটি কারখানা থেকে সব খরচ বাদে ৩০–৪০ হাজার টাকা আয় করা কঠিন কোন বিষয় নয়।
সাবধানতা:
ময়দা, ডিম থেকে শুরু করে সব উপাদান যখন একত্র করা হয় তখন খেয়াল রাখতে হবে যাতে কোন উপাদানই পরিমাণের চেয়ে কম বা বেশি না হয়। ওভেনে বেকারি সামগ্রী রাখার পর তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে। বেশি তাপে বিস্কুট পুড়ে নষ্ট হয়। আর পণ্যের গুণগত মানের দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ একবার বাজারে সুনাম পেয়ে গেলে যেমনি খুব অল্প সময়ের মধ্যে সাফল্য অর্জন করা যায় ঠিক তেমনি দুর্নাম হলে উল্টো ঘটনা ঘটতে পারে।
কখনো কি একটু ভেবে দেখেছো তোমার নিজের বাড়িতেই বেকারি পণ্যের কেমন চাহিদা রয়েছে। শুধু তাই নয়, আমাদের দেশের প্রতিটা বাড়ি, রেস্টুরেন্ট, হোটেল, মুদি দোকান, চা দোকান এক কথায় সব দোকানেই কম বেশী বেকারী পণ্য ত আছেই। বেকারি খুব সহজেই বিশাল একটা বাজ্র দখল করে আছে আর ভবিষ্যতে এই বাজার আরও বৃদ্ধি পাবে। বেকারি ব্যবসা খুব সহজ এবং লাভজনক একটি ব্যবসা। তাই তুমি চাইলেই বেকারি ব্যবসা করে একজন সফল তরুন উদ্যগতা হয়ে যেতে পারো।