বুটিকের ব্যবসা কীভাবে শুরু করবেন?
বুটিকের ব্যবসা আর টেলারিং দুটো ক্ষেত্ররই কর্ম পোশাক– পরিচ্ছদ।কিন্তু ফারাক হলো টেলারিঙের ব্যাবসায় ছিট্ বা কোনো লম্বা খান থেকে জামা, পোশাক তৈরী করা হয় আর বুটিকের ব্যবসায় সেই তৈরী করা জামাতেই বা পোশাকে কোনো এমব্রয়ডারি ডিসাইন করে বা কোনো এক্সট্রা কাপড়ের সাহায্যে তাকে আরো বাহারি করে তোলা হয়। দুটো কাজের ক্ষেত্রেই সৃজনশীলতা এবং পোশাক ডিজাইনের জ্ঞান থাকা বাধ্যতামূলক। বলা যায় জামা কাপড় তৈরী করে একটা ফিক্সড পরিমান অর্থ উপার্জন করা সম্ভব কিন্তু সপ্রতিভ এবং নিত্যনতুন ডিজাইন করে বুটিকের ব্যবসা থেকে আনলিমিটেড ইনকাম করা যায়।
বুটিকের কাজ সাধারণত ২টি ভাগে ভাগ করে করা যায় ,প্রথমত তোমার নিজের পছন্দমতো পোশাকে তুমি ডিসাইন করতে পারো, সে শাড়ি , চোলি বা কোনো কুর্তি হোক, আর অপরদিকে তোমার কাছে কোনো কাস্টমার এলো তার পোশাকে তার চাহিদা মতো কোনো ডিসাইন করে দেয়া।দুটোতেই যথেষ্ট আনুষঙ্গিক উপকরণের ধারণা এবং কিভাবে ডিসাইন করলে সেটি আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে সেই জ্ঞান থাকতে হবে। ব্যবসায়িক বুদ্ধি, রুচিবোধ, গ্রাহকের মানসিকতা এগুলোই হচ্ছে বুটিকের ব্যবসায় সফল হওয়ার চাবিকাঠি। তোমার পুঁজি অনুসারে তুমি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসাবে তোমার ব্যবসা শুরু করতে পারো। স্বাবলম্বী হওয়ার সাথে সাথে ট্রেন্ডি ডিসাইন , কোনো পোশাক কে নিজের স্বকীয়তার সাহায্যে কিভাবে আরো লোভনীয় বানানো যায় বুটিকের কাজে এগুলোই প্রধান শিক্ষণীয়। তাহলে চলো আজ আলোচনা করা যাক কিভাবে তুমি বুটিক হাউসটি শুরু করতে পারো , কত টাকা লাগতে পারে এবং ব্যবসা সম্পর্কিত প্রতিটি ছোট ছোট বিষয়।
- যে কোনো ব্যবসা শুরু করার আগে সেই সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে সেই ব্যবসায় উন্নতিতে অনেক সুবিধা হয়। যদি ইতিমধ্যেই এর বিষয়ে তোমার জ্ঞান থাকে তাহলে তো খুব তাড়াতাড়ি তুমি শুরু করে দিতে পারো আর না থাকলে ছোট কোনো কোর্স করে নিতে পারো, বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ফ্রীতে কোর্স করানো হয় সেগুলো থেকেও শিখে নিতে পারো আর সরাসরি বিষয়ের ব্যাপারে শেখার জন্যে কোনো বুটিকে সংযুক্ত হতে পারো। তারপর সেখান থেকে সম্মক জ্ঞান হয়ে গেলে তোমার নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে পারো। অভিজ্ঞ কাউর থেকেও তার পরামর্শ নিতে পারো। অনেক পত্রিকা থেকেও এ বিষয়ে জানা যায়। প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করার পর দোকানের অবস্থান, তোমার কাজের স্বকীয়তা এবং বিষয়বস্তু নির্ধারণ করে বুটিক হাউসের ব্যবসা শুরু করা উচিত।
- ব্যবসা শুরু করার আগে এরপর তোমাকে কাঁচামালের ব্যাপারে ইনফরমেশন জোগাড় করতে হবে। কি কি উপকরণ লাগতে পারে , কতটা কিনলে সুবিধা হবে , কত টাকা লাগবে, কোন জায়গায় তোমার বুটিক শপ করলে ভালো হবে এই ব্যাপারেও প্ল্যান করতে হবে। যেহেতু পোশাকের অনেক ধরণের বিভাগ থাকে , তাই কোন টাইপের পোশাকে কাজ করতে তুমি সাবলীল হবে সেটা তোমাকে বুঝতে হবে। একটা আয় ব্যায় এর হিসাব করা থাকলে তোমার কাকে কোন দামে জিনিস বিক্রয় করবে সেটাও বুঝতে পারবে। বিভিন্ন রকম এক্সেসরিজ, পুঁথি , স্টোন, বিভিন্ন রকমের সুতো যেগুলো দিয়ে কোনো জামায় ডিসাইন করা হয় সেগুলো কোথায় উপযুক্ত দামে পাওয়া যাবে সেগুলো ভালো করে জানতে হবে। কাঠের ডাইস ও রং ও বুটিকের ব্যাবসার অন্যতম কাঁচামাল হিসাবে গণ্য হয়। প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো কিনতে সাধারণত ৫ হাজার টাকার কাছাকাছি দরকার হয়। যখন তুমি এসব কিনবে কোনো অভিজ্ঞ মানুষকে তোমার সাথে রাখতে পারো। যে তোমাকে প্রয়োজনীয় ছুঁচ , কাঁচি , সুতার পরিমান সম্পর্কে তোমাকে সহায়তা করতে পারবে। তুমি প্রয়োজনীয় ঠিকানা ও ফোন নম্বর যোগাড় করেও রাখতে পারো যে কোনো সময় সহায়তা পাওয়ার জন্যে।
- প্রথমে বড়ো পরিসরে কাজ শুরু করতে না পারলে ছোট পরিসরে কাজ শুরু করতে পারো। তবে তোমাকে সেলাই মেশিনের আয়োজন করতে হবে, একটা ভালো জায়গার অর্র্যঞ্জমেন্ট করতে হবে, অভিজ্ঞতা কম থাকলে অনেকসময় কিভাবে এগোবে এই ধারণা কমের জন্যে ব্যবসায় লোকসান হয়। তাই সঠিক শুরুর প্রয়োজন। তুমি কোনো উৎসব যেমন কোনো পুজো , নববর্ষের অনুষ্ঠান , কোনো বড়ো মেলায়ও যোগদান করতে পারো তোমার পোশাকের প্রদর্শনী করতে পারো, এছাড়া লিফলেট বিলি করতে পারো।
- তোমার বাড়িতে যদি দোকান করার মতো জায়গা থাকে তাহলে তো ভালোই নাহলে যদি প্রথমেই কোনো জায়গা কিনে দোকান করা পসিবল না হয় তাহলে দোকান ঘর ভাড়া করতে পারো। যে কোনো দোকানের ক্ষেত্রে তার অবস্থান তা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে সবাই তোমার দোকান দেখতে পাবে এবং তারা তোমার কলেকশনের প্রতি আগ্রহ দেখাবে। তোমার টাকার পরিমানের ওপর দোকানের অবস্থান, আকার এগুলো নির্ভর করে। তবে যেখানে ইতিমধ্যেই বুটিক হাউস আছে সেই জায়গা গুলো এড়িয়ে গিয়ে বেশ জনবসতি পূর্ণ এলাকায় তোমার ব্যবসা শুরু করতে পারো। ক্রেতারা সাধারণত সেখানেই বেশি যায় যেটি সবার চোখের সামনে থাকে।
- বিজ্ঞাপন বা মাৰ্কেটিং ব্যবসা শুরু করার জন্যে এখন খুবই জরুরি। তাই তোমাকে প্রচার বাড়াতে হবে। প্রথমে লিফলেট , অনলাইন সোশ্যাল সাইট এগুলোতে অ্যাড দাও , তোমার চেনা পরিচিতদের ফোনের সাহায্যে বলতে পারো তারপর শুরু করার পর বিভিন্ন পত্রিকা, ম্যাগাজিন গুলোতে বিজ্ঞাপন দিতে পারো। আস্তে আস্তে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ওয়েবসাইটও করে নিতে পারলে তোমার সুবিধা হবে। রাস্তায় কয়েকটা পোস্টের , হোর্ডিং ও বিজ্ঞাপন দেয়ার ক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী তবে কন্টাক্ট নম্বর এবং সেখানে এড্রেস লিখতে ভুলো না যেন। নিজের সাজপোশাকের ব্যাপারেও একটু সাবলীল থাকতে হবে। প্রেসেন্টেশন যে কারোর ভ্যালু বাড়াতে সাহায্য করে। তাই বিক্রেতার কাছে তোমার হাসিমুখ এবং একটা সুন্দর পার্সোনালিটি হোক তোমার পরিচয়।
- যে কোনো ব্যবসা শুরু করার জন্যে কিছু বৈধ কাগজপত্রের দরকার হয়। সেগুলো তোমাকেও জোগাড় করতে হবে। এর জন্যে নিকটস্থ পৌরসভা কিংবা ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে যোগাযোগ করতে হবে। তোমার যে যে প্রুভগুলো দিতে হবে সেগুলো সাবমিট করলে নির্দিষ্ট পরিমান ফিয়ের সাহায্যে অল্প কিছুদিনের মধ্যে ট্রেড লাইসেন্স প্রস্তুত হয়ে যায়।
- কয়েকটা ব্যাপার খেয়াল রাখতে হবে। কোনো ব্যবসাতেই সারাবছর পিক টাইম থাকে না তাই কোনো সময় ইনকাম বেশি হবে , কোনো সময় কমে যাবে। তবে তার জন্যে আশাহত হলে হবে না। ধৈর্যই মানুষকে তার সর্বশ্রেষ্ঠ জায়গায় পৌঁছায়। নিজের ওপর বিশ্বাস , ভরসা রাখতে হবে। নিজের সৃজনশীলতার দিকে নজর দিতে হবে, তাকে যাতে আরো উন্নত করা যায় সেই বিষয়ে সদা চেষ্টা করতে হবে। ব্যাবসায়িক ক্ষেত্রের সাথে ভালো লাগা, প্যাশন এগুলো যেন একাকার না হয়ে যায়। তোমাকে প্রথমে দোকানের একটা উপযুক্ত নাম পছন্দ করতে হবে।বুটিকের নামের সাথে কোনো লোগোও তৈরী করতে পারো। বার বার সেগুলো চেঞ্জ করলে চলবে না।
- সুতি, খাদি, সিল্ক এই মেটেরিয়াল গুলো এখন বেশ ফ্যাশনাবল তাই কোনো ডিসাইন এর জন্যে এগুলো ব্যবহার করতে পারেন। এ্যাম্ব্রয়ডরি, ব্লক প্রিন্ট, জরি এগুলো সম্পর্কে জ্ঞান না থাকলে কাজ করতে করতে শিখে নেয়া ভালো হবে। ব্যাবসার জন্যে ক্রেতাদের সন্তুষ্টি এবং ধারাবাহিকতা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সেটা বজায় রাখার চেষ্টা করতে হবে। আধুনিক রুচিসম্মত পোশাকের সাথে সঠিক দাম মানুষকে তোমার কাছে যেতে বাধ্য করবে। বর্ধিত সুনামের জন্যে সব দিকেই তোমাকে ব্যালান্স করে চলতে হবে।
- ক্রেতারা কিসে খুশি হবে , কিসে অসন্তুষ্ট হবে সেই ব্যাপারে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল হতে হবে। এছাড়া সব মানুষই নতুনত্ব জামাকাপড় পড়তে ভালোবাসেন। তাই সবসময় তোমার তৈরী পোশাকে নতুনত্ব রাখার চেষ্টা করো। দরকার হলে অভিজ্ঞ কর্মচারী সংগ্রহ করো। বুটিক খোলার টাইম ,বন্ধ করার টাইম যেন নির্দিষ্ট থাকে, দোকানে যেন সবসময় কোনো কারিগর থাকে সেই চেষ্টা করতে হবে। কোনো একদিন হঠাৎ করে বন্ধ থাকলে সেটা আগে থেকেই ইনফর্ম করে দিলে বিক্রেতার সুবিধা হতে পারে।