কীভাবে দুধ বিতরণ ব্যবসা শুরু করবেন
শহরে মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ছে নানা ধরনের খাদ্যের চাহিদা। ব্যস্ততার কারণে অনেকে যাচাই–বাছাইয়ের অভাবে সঠিক পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ ও নির্ভেজাল খাবার কিনতে পারছেন না। বিভিন্ন দোকানে যা পাচ্ছেন, তা–ই কিনে খেতে বাধ্য হচ্ছেন। বলতে গেলে রেডিমেড খাবারের প্রতি প্রায় সবাই ঝুঁকে পড়ছেন। এসব খাবারের একটি দুধ, যা তরল আকারে দোকান থেকে সংগ্রহ করে পুষ্টির চাহিদা মেটানো হয়। কিন্তু এ দুধেই কি সঠিক পুষ্টিগুণ পাওয়া যাচ্ছে? কেননা ভেজালের ভিড়ে খাঁটি দুধ পাওয়া কষ্টসাধ্য। এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে খাঁটি গরুর দুধ বিপণন শুরু করতে পারেন। এ ব্যবসা চালু করলে লাভের মুখ দেখা সম্ভব। ব্যবসাটি অনলাইনেও পরিচালনা করতে পারবেন।
ভেজালের ভিড়ে খাঁটি দুধের সন্ধান পাওয়া বেশ দুরূহ। তবে এর চাহিদা রয়েছে সবাই চায় খাঁটি দুধ সংগ্রহ করতে। এ কারণে বাসাবাড়িতে খাঁটি দুধ সরবরাহ করতে পারেন। এটি যেমন কম পরিশ্রমের, তেমনি সহজ একটি ব্যবসা। এতে পুঁজিও তুলনামূলক কম লাগে, লাভ বেশি। এজন্য আপনাকে নির্দিষ্ট স্থানে দোকান দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না।
শুরু করতে কি প্রয়োজন?
# দুধের জার:
জার দরকার এই জন্য যাতে আপনি দুধ খুব সহজেই বহন করতে পারেন। এতে আপনার দুধ নস্ট হওয়ার সম্ভবনাও কম থাকে।
# একটি ছোট গাড়ি অথবা একটি বাইসাইকেলঃ
গাড়ি অথবা বাইসাইকেল থাকলে আপনি নিজেই খামার বা গ্রাম থেকে দুধ সংগ্রহ করে এনে নিজেই সাপ্লাই দিতে পারবেন সরাসরি গ্রাহকদের।
# দুধ মাপার পট বা স্কেলঃ
দুধ পরিমাপ করার ক্ষেত্রে দুধ মাপার পোয়াতো আবশ্যক। সুতরাং এইটা অবশ্যই সাথে রাখতে হবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে তাতে করে গ্রাহকদের দৃষ্টি ভঙ্গী পজিটিভ থাকবে, আপনার বিজনেস ভালো হবে।
যেভাবে শুরু করবেন
ব্যবসাটি শুরু করার আগে অবশ্যই এর বাজার সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। সাধারণত গ্রামের দিক থেকে গরুর দুধ কিনলে আপনি খাঁটি এবং ভেজাল মুক্ত পাবেন, কারণ সেখানের খামারিরা বা গরু পালন কারীরা গরুর খুবই যত্ন নেয় আর তাদের খাবার এর দিক্তাও খুব খেয়াল রাখে। বেশির ভাগ গরু পালন কারি তাদের গরুকে সবুজ ঘাস মাঠ থেকে তুলে এনে খাওয়ায়, যার ফলে ভালো দুধ পাওয়া যায়, যেটা শহরের গরুদের মধ্যে পাওয়া জায়না। কারণ শহরের খামারিরা গরুকে অন্য খাবার খাওয়ায় যাতে দুধের গুণগতমান কিছুটা হলেও কমে যায়,। তাই কোথায় গরুর খাঁটি দুধ পাওয়া যায়, সে খোঁজখবর রাখা জরুরি। একেক জায়গায় একেক দামে পাওয়া যায়, তাই সব জায়গা নখদর্পণে রাখুন। লিটারে কত টাকা মুনাফা করবেন, আপনি কত টাকায় বিক্রি করবেন এসব হিসাব ঠিক করে নিন। এরপর জনবহুল এলাকা বেছে নিন, যেখান থেকে ব্যবসাটি শুরু করবেন। জনবহুল এলাকায় একটা জিনিষ ভালো সেটা হচ্ছে আপনি সেখানে গ্রাহক বেশি পাবেন। আর যত বেশি গ্রাহক পাবেন আপনি তত বেশি আপনার বিক্রি বাড়াতে পারবেন,।
ডিজিটাল মার্কেটিং কিভাবে হবে?
আপনি যদি আপনার বিজনেস পরিধি বৃদ্ধি করতে চান বা আপনি যদি ডিলার হিসেবে কাজ করতে চান তাহলে আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং টা করতে পারেন, এক্ষেত্রে হয়ত আপনার একটা স্মার্টফোণ দরকার হবে। কিছু ওয়েব সাইটে গিয়ে আপনার বিজ্ঞাপন দিতে হবে। তাছাড়াও আপনি আপনার বিজনেসের পরিধি বাড়াতে কিছু লিফলেট ছাপিয়ে বিতরণ করতে পারেন। অথবা এলাকায় মাইকিং করে ক্রেতাতের আকৃষ্ট করতে পারেন। শরীর ও মনের জন্য একটি আদর্শ খাবার হচ্ছে দুধ। শিশুদের মস্তিষ্ক বিকাশ থেকে শুরু করে রোগ প্রতিরোধ, এনার্জি বুস্ট করা, স্ট্রেস কমানো, মজবুত দাঁত, হাড় ও পেশী গঠনে এমনকি ওজন কমাতেও দুধ একটি অপরিহার্য খাবার। এই বিষয় গুলো যদি আপনি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে ভালো ভাবে উপস্থাপন করতে পারেন তাহলে আপনার গ্রাহক সংখ্যা দিন দিন বাড়তেই থাকবে।
প্রচলিত মার্কেটিং কিভাবে হবে?
যদি আপনি এমনি মার্কেটিং করতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে কিছু দই বানানোর কারিগরদের সাথে কথা বলে আপনার গরুর দুধের গুনগতমান ভালো সেইটা তাদের বুঝিয়ে তাদের কাছ থেকে নিয়মিত অর্ডার নিয়ে গরুর দুধের সাপ্লাই দিতে পারেন। এতে করে হবে কি আপনি অল্প পরিশ্রমে অধিক বিক্রির সুবিধা পাবেন।
কোথায় থেকে দুধ কিনবেন, কত পুঁজি লাগবে এবং আয় কেমন হবে?
যেই খামার থেকে দুধ সংগ্রহ করা হয়, সেখানের দুগ্ধ চাষিরা ভালোভাবে গরুর লালন–পালন ও দেখাশোনা করছে কি–না। যেই কোম্পানির দুধ হিসেবে তা বাজারে আসবে, সেই কোম্পানির সঙ্গে দুগ্ধ চাষিদের কেমন সম্পর্ক। দুধ সংগ্রহের বিভিন্ন ধাপে গুণগতমান সম্পূর্ণভাবে ধরে রাখার বিষয়টি কীভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে। খামার থেকে চিলিং সেন্টার, চিলিং সেন্টার থেকে ফ্যাক্টরি এবং সেখান থেকে বিভিন্ন পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে দোকান পর্যন্ত দুধ পৌঁছানোর প্রতিটি ধাপে দুধের মান সঠিকভাবে বজায় রাখতে কী কী করা হয় সব কিছু জেনে তবেই দুধ কেনা উচিত।
শহর পার হয়ে গ্রামের দিকে গিয়েই আপনি গরুর দুধ পাবেন ৩৫–৪০ টাকা দরে। শহরে তা সহজেই বিক্রয় করতে পারেন ৭০–৮০ টাকায়। কঠিন কাজটি হবে খুব ভোরে আপনাকে দুধ সংগ্রহ করে শহরে নিয়ে আসতে হবে আর বেঁচতে হবে। এখানে যে কৌশলটি আপনাকে লাভবান ব্যবসা দিতে পারে তার একটি নমুনা হতে পারে এমন— একদিন যথেষ্ট সময় নিয়ে ভোর সকালে বেরিয়ে যাবেন দুধের সন্ধানে, কতোটা দামে তা নিয়ে আসতে পারবেন আপনার এলাকায় তার হিসেব–নিকেষ করুন।–ঐ এলাকা থেকে যে ভ্যানগুলো সকালে শহরে যায় তাদের সাথে নির্দিষ্ট সময়ের চুক্তি করলে তারা কম ভাড়াতেই এনে দিতে রাজি হতে পারে। –২০ লিটার গরুর দুধ কিনে এলাকায় চলে আসুন, আধা লিটারের পানির খালি বোতলে ভরে আপনার পূর্বে নির্দিষ্ট করা এলাকায় ৪০টি বাসায় এগুলো নিয়ে দিয়ে আসুন, বলুন “আগামী সপ্তাহ থেকে প্রতি অমুকবারে (শুক্রবার বা যে কোন একটি বারে) এই এলাকায় আমরা গরুর খাঁটি দুধ সরবরাহ করব। এটি দুধের নমুনা, এই আমাদের ঠিকানা–মুঠোফোন নম্বর, আপনি জানালেই পেয়ে যাবেন ৩/৫/৮ লিটার দুধ– এক সপ্তাহের দুধ একসাথে। শহরের বাইরে বা অন্যান্য থানা শহরে রেফ্রিজারেশনের ব্যবস্থা সব বাসায় নেই মনে হলে ২ লিটার বোতলও করতে হতে পারে।
আপনার লক্ষ্য যদি হয় প্রতি শুক্রবারে ৪০–৫০টি বাসায় ৩–৫ লিটার করে ২০০ লিটার এর ফরমায়েস নেবেন তাহলে তা না হওয়া পর্যন্ত বিপণন কাজ চালিয়ে যাবেন। এতে আপনার যাবতীয় খরচ বাদে প্রতি লিটারে ২০ টাকা করে লাভ রাখতে পারলে একদিনের আয় হবে ৪,০০০ টাকা।–সপ্তাহের একেকটি বারের জন্য ৪০–৫০টি পরিবারের সাথে চুক্তি করে যেতে পারলে প্রতিদিনই আপনার এ ব্যবসাটি হতে পারে।–সকাল ৯টার মাঝে শহরে দুধ নিয়ে আসতে পারলে ২–৩ ঘন্টায় তা দেওয়া ও টাকা সংগ্রহ করতে হবে। দুইজন বা ততোধিকজনে একসাথে ব্যবসাটি করতে পারলে ভালো হয়– দায়িত্ব ভাগ করে নিয়ে প্রত্যেকে এর জন্য ৪–৫ ঘন্টা দিলেই হয়ে যায়। –দুধ যেন নষ্ট না হয়; দুধ প্রদান, টাকা উত্তোলন, খালি বোতল সংগ্রহ ও ভালোভাবে পরিস্কার করা–এসব বিষয়ে একটু গবেষণা করুন আর অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিন।
এসব এলাকায় তুলনামূলকভাবে কম দামে গরুর দুধ বিক্রি হয়। শহরের আশেপাশের গ্রাম থেকেও গরুর খাঁটি দুধ পাইকারি দরে কিনতে পারেন। এছাড়াও আপনি যদি পাইকারি দরে দুধ কিনতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই গ্রাম এলাকায় আসতে হবে ।
সরবরাহ হবে কি ভাবে?
ব্যবসা পরিচালনার জন্য একটি নাম নির্ধারণ করতে হবে, নাম সব কিছুর জন্য একটা বড় বিষয় হয়ে দাড়ায়,। নাম একবার পরিচিত হয়ে গেলে আপনার বিজনেস করতে আরো সুবিধা হবে। যদিও নামের থেকে আপনার দুধের গুনগতমান সর্ব প্রথম আপনার ক্রেতা দেখবে। সুতরাং ভালো দুধের সাথে একটি ভালো নাম অবশ্যই রাখবেন। এরপর যে এলাকা বিক্রির জন্য বাছাই করেছেন, সেখানে নামটি দিয়ে পরিচিত হোন। এর সঙ্গে তালিকা করুন কোন বাড়িতে মহল্লায় পাড়ায় ফ্লাটে সরবরাহ করবেন। এভাবে শুরু করতে পারেন। ভোক্তাদের আকৃষ্ট করার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে কম দামে সরবরাহ করুন। একবার বিজনেস মোটামোটি ভাবে দাড় হয়ে যাবার পর আপনি অনলাইনেও আপনার এই কাজ টি করতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনার একটা নিজস্ব ওয়েবসাইট খুলে নিলেন। অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেয়া শুরু করলেন এতে করে হবে কি দুর–দুরান্তের মানুষ গুলো আপনার বিজনেস সম্পর্কে জানল তাতে করে আপনার বিজনেস পরিধিটা আরো বৃদ্ধি পাবে। আপনার বিজনেস ভালো হবে।
সতর্কতা অবলম্বন করা কি জরুরী?
সবসময় লক্ষ রাখবেন, যেখান থেকে দুধ কিনছেন, সেখানকার দুধের মান যেন ভালো হয়। চেষ্টা করবেন গ্রাম থেকে কিনে শহরে নিয়ে যাওয়ার, কেননা তুলনা মুলক ভাবে শহরের খামারের দুধের থেকে গ্রামের দুধের মান অনেক টাই ভালো পাওয়া যায়। কোনোভাবেই পানি মেশানো যাবে না, এতে করে আপনি হয়ত সাময়িক লাভ করতে পারবেন কিন্তু বেশির ভাব গ্রাহক–ই আপনি হারাবেন। সুতরাং এমন কাজ ভুলেও করা যাবেনা যার কারনে আপনার বিক্রি কমে যায়। দুধ কখনো রেফ্রিজারেটরে রাখবেন না কারন এতে করে দুধের গুনগত মান নষ্ট হয়ে যায়। সব সময় ফ্রেশ দুধ দেয়ার চেষ্টা করবেন। এতে গ্রাহকের আগ্রহ বাড়বে আপনারও বিক্রি বেশি হবে।