কীভাবে জিম বা ফিটনেস সেন্টার শুরু করবেন?
শুধুমাত্র শরীরকে বাইরে থেকে সুস্থ রাখা নয়, অভ্যন্তরীণ এবং বহির্ভাগের ফিটনেস মেইনটেইন করার জন্যে অনেকেই এখন জিম বা ফিটনেস সেন্টারে যান। ফিটনেস সেন্টার এবং জিম শুনে একরকম মনে হলেও দুটোর মধ্যে কিছু ডিফারেন্স আছে। এমনকি কিছু কিছু রোগে ওষুধ না খেয়ে শুধুমাত্র কিছু এক্সারসাইজ করে নিজেকে সম্পূর্ণ সুস্থ রাখার মন্ত্র এই ফিটনেস সেন্টার বা জিম গুলি।যাদের ওজন বয়সের তুলনায় বেশ কিছুটা বেশি তারা কসরত করে ঘাম ঝরিয়ে এই ফিটনেস সেন্টার গুলিতে যোগদান করছেন তাদের সুন্দর করে তোলার জন্যে, সঠিক ওজনে নিজেদের ফিরিয়ে আনার জন্যে। তবে শুধুমাত্র পুরুষরা নয় মহিলারাও এই দিকে পিছিয়ে নেই। সুস্থ থাকার দৌড়ে সবাই সামিল।
মেশিনগুলি বড়ো মাপের হওয়ার জন্যে সবার বাড়িতে মেশিন রাখা সম্ভব নয় আর মেশিনগুলির দামও বেশ ওপরের দিকেই যা সবার পক্ষে কেনা সম্ভব নয়। তাই ভরসা জিম বা ফিটনেস সেন্টার যেখানে মাসে বা বছরে কিছু পেমেন্ট করলে সব পাওয়া যায়। আর মোটামুটি সব ফিটনেস সেন্টারগুলিতেই মেন্টর বা গাইড থাকে কাস্টমারদের প্রয়োজন মতো গাইড করার জন্যে। তাই একজন নতুন কাস্টমারেরও অসুবিধা হয় না প্রথম থেকে কিভাবে এগোবো। তাই তুমি যদি জিম বা ফিটনেস সেন্টার খোলার কথা ভাবো নিঃসন্দেহে এটি একটি প্রশংসাসূচক প্রচেষ্টা হবে।তবে শুরু করার জন্যে কি কি লাগবে কিভাবে এগোবে সবই এই নিবন্ধে আলোচনা করবো।
কীভাবে জিম বা ফিটনেস সেন্টার শুরু করতে পারো
সাধারণত একটি বড়ো জায়গা এবং আর মেশিনগুলির সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকলে জিম সেন্টার খোলা যায়। তবে শুধুমাত্র মেশিন রাখার সাথে সাথে ফিটনেস থেরাপি, মেডিটেশন ব্যবস্থা, যোগা করার ব্যবস্থা করা হলে তখনই সেটা ফিটনেস সেন্টারের উপাধি পেতে পারে। তাই প্রথমে কি কি মেশিন রাখবে, কিভাবে সাজালে সুবিধা হবে এসব সবার আগে তোমাকে একটা জায়গায় প্ল্যানিং করতে হবে। কঠোর পরিশ্রম ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়। সে ব্যবসা হোক বা চাকরি। কি কি মেশিন লাগতে পারে কিভাবে কোনো ক্লায়েন্ট প্রথম থেকে এগোলে তার চাহিদা পূরণ করতে পারবে, তুমি কিভাবে তোমার ফিটনেস সেন্টার এর মার্কেটিং করবে এসব ব্যাপার তুমি যদি জানো তাহলে কোনো চিন্তা নেই কিন্তু না জানলে কোথাও থেকে শিখে নিতে পারো। ফিটনেস সেন্টার গুলিতে আধুনিক প্রযুক্তির অনেকরকম মেশিন বর্তমানে ভর্তি থাকে। অনেকসময় একটি মেশিন থেকে অনেকরকম কাজ করা যায়। প্রথম থেকে প্ল্যান করলে এগোতে পারলে তোমার ইনভেস্টমেন্ট সঠিক রাস্তায় এগোবে , তোমার ব্যাবসাও তাড়াতাড়ি ফলপ্রসূ হতে পারে।
ফিটনেস সেন্টারের অবস্থান
প্রথমে কোথায় এই সেন্টার টি করবে সেই প্লেস সম্বন্ধে ভাবো।তোমার বাড়িতে দোকান ঘরের মতো খোলামেলা জায়গা থাকলে সেখানেও শুরু করতে পারো , নাহলে কোনো জায়গা ভাড়া নিতে পারো। আর যদি স্থায়ীভাবে কোনো জায়গায় সেন্টার খোলার মতো ভাবো তাহলে জনসমাগম বেশি এমন জায়গায় সম্ভব হলে ক্রয় করেও তোমার ব্যবসা শুরু করতে পারো।সাধারণত ২০ ফুট বাই ২০ ফুট একটি জায়গা হলে ফিটনেস সেন্টারে খোলার জন্যে উপযুক্ত হয় তবে এর থেকে ছোট হলেও খুব অসুবিধা নেই। একটি বড়ো ঘর এরেঞ্জ করা সম্ভব না হলে ২টি ঘর একসাথে করে ব্যবসা শুরু করতে পারো। যেহেতু এখনকার দিনে সব বয়সের মানুষেরই একটা ক্রেজ থাকে জিমে যাওয়ার।তাই সঠিক ভাবে গাইড করতে পারলে সব জিমেই লোকেরা আসে, তার লোকেশন নিয়ে খুব বেশি কেউ চিন্তিত হয় না। প্রথমেই তোমার দোকানের জন্যে একটা যথার্থ নাম ঠিক করতে হবে। দোকানের নাম মার্কেটিং করতে সাহায্য করে। তার সাথে কোনো মোড়ে হোর্ডিং দিতে পারো যাতে সবাই দোকান সম্পর্কে জানতে পারে।
সুদক্ষভাবে নিজেকে গড়ে তোলো
যাতে সবাই তোমার সেন্টারে গিয়ে সেখানকার নিয়মকানুন, আচরণবিধি সম্পর্কে সচেতন থাকে তার জন্যে নির্দিষ্ট নিয়মাবলী দিয়ে দিন। কোনো জিনিস যাতে নষ্ট না হয় , সবাই যাতে সবার সাথে অপারেটিভ হয়, টাইম ম্যানেজমেন্ট নিয়ে যাতে কোনো প্রব্লেম না হয় এই ব্যাপারগুলোতে একজন গাইড হিসাবে তোমাকে নজর দিতে হবে। যে কেউ কোনো জিমে ভর্তি হওয়ার আগে তার সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে থাকে। কোনো নেগেটিভ ইস্যুস যেন তোমার সেন্টার নিয়ে না তৈরী হয় সেটা দেখতে হবে। যদি কাছাকাছি দুটো জিম সেন্টার গড়ে ওঠে কম্পেটিশন এমনি বেশি হবে, তাই কিছু নতুনত্বের চেষ্টা করতে পারো। যে কোনো অনাকাঙ্খিত অবস্থার সাথে কিভাবে লড়তে হবে সেই মানসিকতা খুব দরকার। নিয়মাবলী সবাই যাতে মেনে চলে তোমাকে সেইদিকে নজর দিতে হবে।
অভিব্যাক্তি এবং প্রয়োজন বুঝে পরিচালনা করা–
যখন তোমার কাছে অনভিজ্ঞ কেউ আসবে সে কি চাইছে তোমাকে হয়তো ডিটেলসে বলতে পারবে না। তাই অভিজ্ঞ হিসাবে তোমাকেই বুঝে নিতে হবে তার চাহিদার ব্যপারে, তোমাকে তার অভিব্যাক্তি বুঝে নিয়ে তার টাইম ম্যানেজমেন্ট করতে হবে, ফিটনেস ইকুইপমেন্ট সেট করতে হবে, এর ফলে সেও খুশি হবে। সেন্টার টিকে যথেষ্ট পরিষ্কার পরিছন্ন হতে হবে , প্রত্যেককে তাদের নিজস্ব পোশাক, ফিটনেস জুতা, তোয়ালে সাথে রাখার পরামর্শ দিলে সুবিধা হবে। কে কিভাবে শরীরচর্চা করছে , কারুর কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা এসব দেখতে হবে। অনেক মহিলারা পুরুষদের সাথে একসাথে ফিটনেস এক্সারসাইজ করতে দ্বিধাবোধ করেন, তাদের জন্যে সময় বা নতুন কোনো ব্যবস্থা করতে পারো। আপাতত ভাবে জিমের প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিদিন ঘণ্টাখানেক জিম প্রয়োজন হয়। যারা অভিজ্ঞ কাস্টমার তারা তার থেকে বেশি সময় সেন্টারে থাকতে চাইবে তাদের শরীরের গঠনের জন্যে। তাই তাদের সাথে এবং নতুনদের সাথে যথার্থভাবে কথা বলে তাদের পেমেন্টের ব্যবস্থা করতে হবে। জিম সেন্টারটি সকাল বা বিকেলে কতক্ষন খোলা থাকবে সেটাও তোমাকে আগে থেকে নির্ধারণ করতে হবে।
নিজেকে গ্রূম করা
একজন ফিটনেস গাইড হিসাবে তোমাকেও ভালো ফিজিক থাকতে হবে , তুমি গাইড অথচ তোমার চেহারায় যদি সেই জৈলুস না থাকে, তোমার কাস্টমার রাও তোমার সেন্টারে এডমিশনের ব্যাপারে দুবার ভাববে। তোমাকে বিশ্বাসযোগ্যতার প্রমান হবে তুমি নিজে। তোমার মেন্টাল স্ট্রেন্থ যথেষ্ট শক্তিশালী হতে হবে। তার সাথে তোমাকে সেন্টারের সমস্ত ইকুইপমেন্ট গুলোর দিকে যত্নবান হতে হবে।
মূলধনের ব্যবস্থা করা
একটি জিম বা ফিটনেস সেন্টারের মেশিনপত্র এবং সব কিছু সাজাতে সাধারণভাবে ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকার দরকার হয়। ব্যক্তিগত পূঁজির জোগাড় করতে সমস্যা হলে মূলধন সংগ্রহের জন্য নিকট আত্মীয়–স্বজন, ঋণদানকারী ব্যাংক বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) –এর সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। কিছু কিছু সরকারি, বেসরকারি ব্যাংক ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও শর্ত সাপেক্ষে ঋণ দিয়ে থাকে।
কিছু পরামর্শ
জিম সেন্টারে তোমার কাস্টমারদের ব্যায়ামের সময় খুব বেশি শব্দ বা চেঁচামেচি করতে নিষেধ করতে হবে। এছাড়াও ব্যায়ামের সময় মোবাইলে কথা বলা, পরিচিত কারও সঙ্গে খোশগল্পে মেতে ওঠা , নিজের সামগ্রী ছড়িয়ে রাখা, ইনস্ট্রুমেন্টগুলো নাড়াচাড়া করার সময় শব্দ করা এই বিষয়গুলোতে কাস্টমারদের আগে থেকে সতর্ক করতে হবে। এগুলোর ফলে তোমার সেন্টার এর ইম্প্রেশন খারাপ হতে পারে। আর সব শেষে সবাইকে মনঃসংযোগ বজায় রাখার পরামর্শ দিতে হবে। যার যা সময় তাকে সেটা মেইনটেইন করতে বলতে হবে। জিমের ব্যবহার করা ইনস্ট্রুমেন্টগুলো ব্যবহার শেষে ভালো করে মুছে রাখতে হবে, যেন কোনো ভাবে ইনফেকশন জাতীয় কিচু রোগ না ছড়ায়। স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করার মতো পোশাক সবাইকে পরার জন্যে পরামর্শ দিতে হবে। সবাইকে সঠিক পদ্ধতিতে খাওয়া দাওয়া করার পরামর্শ দিন। একজন গ্রূমার হিসাবে প্রত্যেককে পরিচালনা করা তোমাকেই করতে হবে।
আশা করি এই ধারণাগুলি তোমাকে ব্যবসা শুরু করার জন্যে সাহস এবং আত্মবিশ্বাস যোগাবে। তবে আর ভয় কিসের নতুন উদ্দমে তোমার ব্যবসার আয়োজন শুরু করে দাও।