জন্মদিনের পার্টি আয়োজনের ব্যবসা কীভাবে শুরু করবেন?
বিশেষ মুহূর্তকে মনে রাখতে কে না চায় ? জন্মদিন হোক বা বিবাহ বার্ষিকী, একটি অনুষ্ঠানের উপহার প্রদানের নতুনত্ব থেকে শুরু করে সামগ্রিক পরিবেশের একটু পরিবর্তন সবাই পছন্দ করেন।রোজকার বাঁধাধরা রুটিন থেকে এই অনুষ্ঠানই আমাদের বাঁচতে শেখায়। সাধারণ ভাবেও একটি বিশেষ উপহার দেওয়া যায়, কিন্তু আলোক সজ্জিত পরিবেশে নতুন ভাবে নিজেকে সাজিয়ে তুলে সেই উপহার প্রিয় মানুষটির হাতে দিলে সে খুশিও হয়, আবার মুহূর্ত টিকে মনে রাখার অনেক কারণও খুঁজে পাওয়া যায়। এইসব ধারণা গুলি থেকেই প্রথমে বিবাহের অনুষ্ঠান আয়োজক এই ধারণাটি তৈরী হয়েছিল, যাদের কাজ ছিল কনের সাজসজ্জা থেকে শুরু করে বাড়ি সাজানো, বরের যাবতীয় সাজসরঞ্জাম থেকে খাবার মেনু ঠিক করা অর্থাৎ যাকে বলা যায় একজন বিবাহ উদ্যোক্তার কাজ জুতো সেলাই থেকে চন্ডি পাঠ সবই।
অনেক মানুষই কোনো অনুষ্ঠানের সময় মন ভরে খরচ করে সেই বিশেষ মুহূর্ত গুলিকে স্মরণীয় করতে চান , আর যদি সব কাজ করার দায়িত্ব সেই সময় মাথাতে থেকেই যায়, তাহলে সেই আনন্দের অনুষ্ঠানেও কোথাও একটা অসন্তোষ থেকেই যায়। তাই বিবাহ উদ্যোক্তার চাহিদা এখন বেশ ভালোই একথা বলা যায়। আর এই বিবাহ আয়োজকের পাশাপাশি জন্মদিন আয়োজকের গুরুত্বও বেশ উর্ধমুখী। হ্যাঁ ঠিকই ভাবছেন বিবাহ আয়োজক যদি থাকতে পারে জন্মদিন আয়োজক থাকবে না কোনো? একটি ছোট শিশু হোক বা কিশোর জন্মদিনের অনুষ্ঠানকে বিশেষ আনন্দময় করে তোলার ইচ্ছা হতেই পারে। একটি সুসজ্জিত কেকের সাথে সুবিন্যস্ত একটি জায়গা , সুন্দর পোশাক সেই অনুষ্ঠান পালনের তীব্রতাকে অনেকগুন বাড়িয়ে দেয়। শিশুরা এমনিতেই আনন্দ, উৎসব করতে ভালোবাসে, একটি বিশেষ দিন কে আনন্দময় করে তুললে তারা যে যারপরনাই খুশি হবে একথা বলাই বাহুল্য। তাই যারা সৃষ্টিশীল কাজের সাথে নিজেদের যুক্ত করতে চান এবং বাচ্চাদের সাথে সময় কাটাতে ভালোবাসেন জন্মদিনের পার্টি আয়োজক হিসাবে আপনার নতুন ব্যবসা শুরু করতে পারেন। যেহেতু খুব বেশি মূলধনের প্রয়োজন হয় না শহরাঞ্চলেও অনেকেই এখন এই সব চমকপ্রদ ব্যাবসায় উৎসাহী হচ্ছেন। তাই যারা এই ব্যাবসায়ে আসতে চান তাদের জন্যে এই টিপস গুলি রইলো।
সমস্ত রকম বাজেটে কাজ করার মানসিকতা
সব কাস্টমাররা সমান হবে না তাই কাজ শুরুর আগে এই ব্যাপারে নিজেকে প্রস্তুত অর্থে হবে যে যেমন কম বাজেটে কাজ করতে হবে তেমনই যাদের বাজেট বেশি তাদের সাথেও কাজ করতে হবে। তবে ব্যবসা শুরু করার আগেই চাই একটি সুপরিকল্পিত প্ল্যান যেটার সাহায্যে বোঝা যায় মিনিমাম কত থেকে ব্যবসা শুরু করা যায়। নিজের পরিশ্রমের সামান্য মূল্যায়ন না হলে সেটা একজন শিক্ষানবিসের কাছে খুবই হতাশা জনক ব্যাপার। তাই যে কোনো বাজেটে কাজ শুরু করার আগে নিজের লাভের অঙ্ক বুঝে রাখাই ভালো।
আধুনিক সাজসজ্জার ওপর মনোযোগ
চারিদিকেই এখন আধুনিকতার ছোঁয়া। একটি অনুষ্ঠান আয়াজক হিসাবে বাচ্ছাদের কি রকম জিনিস পছন্দ, কিভাবে পুরো অনুষ্ঠানের কাঠামো সাজালে সবাই খুশি হবে , কোন কোন আধুনিক জিনিস ব্যবহার করলে অনুষ্ঠান টিকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলা যায় এবং তার সাথে নিজের দিকটাও ঠিক রাখা যায় এসব ব্যাপারগুলি সম্পর্কে সচেতন হওয়া ভীষণ জরুরি।
অনলাইন কোর্স
বিবাহ আয়োজকের পাশাপাশি জন্মদিনের আয়োজক হওয়ার জন্যেও ছোট কোর্স করা যেতে পারে। যে কোনো ব্যবসা শুরু করার আগে সেই সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে সেই ব্যবসায় উন্নতিতে অনেক সুবিধা হয়। যদি ইতিমধ্যেই এর বিষয়ে আপনার জ্ঞান থাকে তাহলে তো খুব তাড়াতাড়ি শুরু করে দিতে পারো কিন্তু যদি সেই অভিজ্ঞতা না থাকে আপনি অনলাইন প্লাটফর্ম তার জন্যে সাহায্য নিতে পারেন। অল্প খরচে এই কোর্সটি করলে কোথা থেকে কি জিনিস কিনতে হবে , আগে থেকে কোন বিষয় গুলি ভেবে রাখলে ভালো হবে সব বিষয়গুলির একটা আপাত জ্ঞান পাওয়া যায়। সামগ্রিক বাজেট কত হতে পারে, কোন বিষয়গুলির দিকে নজর দিতে হবে , কিভাবে একটি জায়গাকে সাজালে সেটি আরো সুন্দর হয়ে উঠবে সব রকম জ্ঞানই এর ফলে হয়ে ওঠে। একটি সার্টিফিকেট যদিও কিছু গুরুত্বপূর্ণ নয় , তবে ব্যবসা শুরু করার মনোবল বাড়াতে এই কোর্সগুলি ভীষণ সহযোগী। তবে সরাসরি জ্ঞানের থেকে বোরো কোনো কিছুই নেই। প্রথমবার কাজ করার অভিজ্ঞতা দ্বিতীয় বার কাজ করতে সুবিধা করবে একথা আমরা সবাই জানি। তাই আপনি যদি হাতে কলমে কাজ শেখার পক্ষপাতী হন, তবে আপনার নতুন যাত্রা শুরু করে দিন।
একটি নাম পছন্দ করুন
নিজের ব্যবসা সবসময়ই ভীষণ ভালোবাসার, স্বপ্নের এবং সেখানে লুকিয়ে থাকে কঠোর পরিশ্রম। তাই প্রথমেই নিজের ব্যাবসার জন্যে একটা যথার্থ নাম ঠিক করতে হবে। ব্যাবসার নাম পরিচয় বাড়াতে সাহায্য করে আর এভাবে কিছুটা বিজ্ঞাপনও হয়ে যাবে।
মূলধন জোগাড়
সাধারণত জন্মদিনের আয়োজক হিসাবে কাজ করার আগে অ্যাডভান্স পাওয়া যায় তাই প্রচুর মূলধন জোগাড় করতে হবে এই চিন্তাটা কম থাকে।খুব মুশকিল হলে ৫০ % পর্যন্ত অ্যাডভান্স নেয়া যেতে পারে। আর যদি এই মূলধন জোগাড়ের পথে কোনো সমস্যা হয়, কয়েকটি বিকল্প পথ আপনাকে সাহায্য করতে পারে, তবে কখনই এটা ভেবো না আপনি পারবেন না। নিজের মনোবল হারালে চলবে না, যেহেতু জন্মদিনের অনুষ্ঠান সারাবছরই চলতে থাকে তাই চাহিদা মোটামোটি থাকে। ছোটোখাটো অনুষ্ঠানও চলতেই থাকে। আর প্রথমে ছোট প্রোগ্রাম থেকে শুরু করে বড়ো প্রোগ্রাম আয়োজন করলে সফল হওয়ার সম্ভবনা অনেক বেড়ে যায়। দরকার হলে কোনো বন্ধুর সাহায্য নাও যে তোমাকে সাহায্য করতে পারে, পরিবারের সদস্যদের থেকেও সাহায্য নিতে পারেন।
কাস্টমারের চাহিদা
ক্রেতারা বা কাস্টমাররা কিসে খুশি হবে , কিসে অসন্তুষ্ট হবে সেই ব্যাপারে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল হতে হবে। এছাড়া সব মানুষই নতুনত্ব জিনিস দেখতে ভালোবাসেন। তাই সবসময় তোমার তৈরী প্ল্যানিং এ নতুনত্ব রাখার চেষ্টা করতে হবে। দরকার হলে অভিজ্ঞ কর্মচারী আপনাকে সাহায্য করতে পারে। কারণ সব কাজ একার পক্ষে করা অনেকসময় সম্ভব হয় না। নিজের একটি কার্ড করতে পারেন যেটির সাহায্যে সবার কাছে সহজে পৌঁছানো যেতে পারে। ধৈর্যই মানুষকে তার সর্বশ্রেষ্ঠ জায়গায় পৌঁছায়। নিজের ওপর বিশ্বাস , ভরসা রাখতে হবে। নিজের সৃজনশীলতার দিকে নজর দিতে হবে, তাকে যাতে আরো উন্নত করা যায় সেই বিষয়ে সদা চেষ্টা করতে হবে। ব্যাবসায়িক ক্ষেত্রের সাথে ভালো লাগা, প্যাশন এগুলো যেন একাকার না হয়ে যায়।
অনলাইন ট্রানসাকশান
ক্যাশ অন ডেলিভারির সাথে সাথে এখন অনলাইন পেমেন্ট অপশন সবজায়গায় রাখা হয়। যেহুতু সবসময় ক্যাশ নিয়ে ঘোরা সম্ভব নয় বা বেশ কিছু টাকার পরিমান হলে কাস্টমাররা অনেকেই ব্যাঙ্ক ট্রান্সফার করে দদিতে পছন্দ করেন। তাই জন্মদিন আয়োজকের ব্যবসা শুরু করার জন্যে এইসব একাউন্ট রিলেটেড ব্যাপারগুলো সমাধান করে নিতে হবে। কেউ যদি কোনো এডভান্সের টাকা দেওয়ার সময় আপনার কাছে কিছু জানতে চায় আর আপনি নিজেই যদি কনফিউসড হও নতুন হোক বা পুরোনো সে একটু অসন্তুষ্ট হবে একথা বলাই যায়।তাই সব দিক গুছিয়ে কাজ শুরু করাই ভালো।
বিজ্ঞাপন বা মাৰ্কেটিং
যে কোনো ব্যবসা শুরু করার জন্যে বিজ্ঞাপন বা মাৰ্কেটিং এখন খুবই জরুরি। তাই তোমাকে প্রচার বাড়াতে হবে। প্রথমে লিফলেট , অনলাইন সোশ্যাল সাইট এগুলোতে অ্যাড দাও , তোমার চেনা পরিচিতদের ফোনের সাহায্যে বলতে পারো তারপর শুরু করার পর বিভিন্ন পত্রিকা, ম্যাগাজিন গুলোতে বিজ্ঞাপন দিতে পারো। কাজের প্রমান হিসাবে এই জায়গাগুলোতে কিছু ফোটোও দিতে পারে যার থেকে তোমার কাজের দক্ষতার ব্যাপারে সবাই জানতে পারবে। আস্তে আস্তে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ওয়েবসাইটও করে নিতে পারলে তোমার সুবিধা হবে। নিজের সাজপোশাকের ব্যাপারেও একটু সাবলীল থাকতে হবে। প্রেসেন্টেশন যে কারোর ভ্যালু বাড়াতে সাহায্য করে। তাই বিক্রেতার কাছে তোমার হাসিমুখ এবং একটা সুন্দর পার্সোনালিটি হোক তোমার পরিচয়।