একটি ছোট ব্যবসা শুরু করার জন্য ৩ টিপস
তুমি যখন একটি ব্যবসায়িক পরিকল্পনা করবে তখন সেটা তোমার বন্ধু এবং যারা ব্যবসা করে সেসব দোকানী বা ব্যবসায়ী এবং তোমার পরিবারের সাথে পরিকল্পনাটি আলোচনা করে নিতে পারো। তারা কি বলতে চায় তা খুব ভালো করে শুনে নেবে এবং তাদের কাছ থেকে তুমি যে সম্বলিত মত পাবে তা তোমার ব্যবসার কাস্টমার বা গ্রাহকরা কিভাবে প্রতিক্রিয়া করবে তার একটি উদাহরণ হতে পারে।
কেউ হয়তো তোমাকে নিরাশ করবে আবার কেউ হয়তো তোমাকে উৎসাহ দিয়ে সাপোর্ট করবে। তাদের কাছে যখনই তুমি বিজনেস বা ব্যবসায়িক পরিকল্পনা টিকে ভাগ করে নেবে তাদের শারীরিক ভাষা বুঝতে চেষ্টা করবে। এতে করে তোমার একটু হলেও ব্যবসায়িক পরিকল্পনা করতে সুবিধা হবে। যাদের সাথে ব্যবসারপরিকল্পনা ভাগ করে নিচ্ছ তাদের ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দু‘রকম কথাগুলোই সংগ্রহ করে রাখবে। যেন তোমার ব্যবসারপরিকল্পনা করতে ভবিষ্যতে সেগুলো কাজে লাগে। সে যাই হোক, যে কোন ব্যবসায় খুব ভালো ফলাফল করতে তোমার ওই ব্যবসায় মনোযোগ থাকতে হবে। এই মনোযোগ তোমার ব্যবসা কে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে।
তবে তোমার ব্যবসায়িক জ্ঞান তোমাকে সঠিক দিকে নিয়ে যাবে তাই আবেগের সাথে তোমার জ্ঞানকে মিশ্রণ করতে পারলে সফলতা খুব সহজেই চলে আসবে। ব্যবসা করাকে তুমি গাড়ি চালানোর সাথে তুলনা করতে পারো আর আবেগকে গাড়ির গতি এবং জ্ঞানকে গাড়ির ব্রেক হিসেবে মনে করতে পারো। একটা গাড়ি ব্রেক ছাড়া চলতে পারে না ঠিক তেমনি একটি ব্যবসায় আবেগ ও জ্ঞান এর সংমিশ্রণ ছাড়া সফল হওয়া যায় না।
ব্যবসার গ্রহণযোগ্যতা যাচাই ও পরিকল্পনা তৈরিঃ
ব্যবসা কোনো চ্যারিটি নয়, ব্যবসার প্রথম ও শেষ কথা হলো মুনাফা। নিজেকে সত্যের মুখে দাঁড়া করানো। নতুন ব্যবসা এমন হতে হবে যেন তুমি এটা করে কিছু মুনাফা অর্জন করতে পারো। নিজেকে জিজ্ঞাসা করো, তুমি যদি ক্রেতা হও, তবে তোমার কি নিজের এই সেবা বা পণ্যটি কিনবে? একটু পরিসংখ্যান করে দেখতে পারো, এই পণ্য বা সেবার পেছনে তোমার ব্যয় কত? একজন ক্রেতা কি সর্বোচ্চ মূল্য দেবে, যাতে তুমি মুনাফা করতে পারো? মোট কথা যাচাই করুন, আপনার এই পণ্য বা সেবা দীর্ঘ মেয়াদে তোমাকে মুনাফা দিতে পারবে কি না? তোমার মনে হতে পারে, ব্যবসায়িক পরিকল্পনা ছাড়াও তুমি ব্যবসা শুরু করতে পারো। কিন্তু আর্থিক ধারণা সমন্বিত একটি ব্যবসায়িক পরিকল্পনা তোমাকে এর গভীরে চিন্তা করার সুযোগ দেবে। এটা হবে তোমার ব্যবসায়ের জন্য একটি জীবন্ত সহায়িকা, যেটা তোমাকে গন্তব্যে পোঁছাতে সাহায্য করবে।
যাইহোক তোমার ব্যবসার জন্য উপযুক্ত জায়গা নির্ধারন করতে হবে। তুমি কি ব্যবসা করতে চাচ্ছ ওই ব্যাবসার জন্য তোমার আশে পাশের পরিবেশ পারফেক্ট কিনা। যেমন ধরো একটা জায়গায় সব ফুড এর দোকান এখন এর মধ্যে কেউ যদি চশমার দোকান নিয়ে বসে চলবে না। এরকম তোমার ব্যাবসার জন্য উপযুক্ত জায়গা এবং উপযুক্ত পরিবেশ নির্ধারন করো। যেন তোমার কাষ্টমার এবং তোমার কর্মকর্তা কর্মচারীরা কাজের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ পায়। তুমি ইচ্ছে করলে এটার জন্য তোমার ব্যাবসা রিলেটেড ব্যাক্তিদের সাথে পরামর্শ করে নিতে পারো। খুব তাড়াতাড়ি অনেক বড় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা তোমার ব্যবসাকে ধ্বংস করতে বা বিপর্যয় ঘটাতে পারে।
সুতরাং সঠিক পরিকল্পনার পাশাপাশি নিজের আত্মবিশ্বাস নিয়ে ব্যবসা শুরু করো। এবং তোমার ক্ষুদ্র ব্যবসার উপর আস্থা রাখবে। তোমার ব্যবসা নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখো। স্বপ্ন নির্ধারন করে দৌড়াতে থাকো একদিন সফল হবেই। সফল ব্যবসায়ীরা বহুমুখীকরণের দ্বারা খুঁজে পেতে পারেন সফল ব্যবসা চাবিকাঠি। তাই তোমার অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতার ব্যবহার করে অন্যান্য ছোট ব্যবসা মালিকদের শিক্ষা দাও এবং তাদের স্বপ্ন অর্জনে সাহায্য করো ।
ব্যবসা করার সময়ে যা গুছিয়ে নেবেঃ
তুমি জানো কি? যে কোন ধরনের ব্যবসার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে মূলধন এর দরকার হয়। এছাড়াও মূলধন বিনিয়োগ করে প্রথম বছর পর সাংসারিক খরচ কোথা থেকে আসবে সেই সম্পর্কে ভালো করে জেনে নেবে। যাইহোক এ বিষয়ে তোমার নিজের পরিবার আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব সবার সহযোগিতা নিতে পারো। সেই সহযোগিতা হতে পারে শারীরিক, মানসিক এবং আর্থিক তবে এমন টা করতে গিয়ে কার উপরে জোর করবে না।
ব্যবসার নাম ঠিক করার জন্য তোমার পণ্য বা সেবার গ্রাহক কারা সেই বিষয়টি মাথায় রাখবে। অন্য কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এর নাম নকল করবে না। তাই তোমার নামটি যেন অন্য সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে আলাদা হয় সেজন্য একটা ইউনিক নাম ব্যবহার করতে হবে।
ব্যবসা সংক্রান্ত যেসব সনদপত্র প্রয়োজন সেগুলোর জন্য আবেদন করে নিবে। স্থানীয় ব্যবসা করতে হলে ট্রেড লাইসেন্সের প্রয়োজন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্সের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগে আবেদন করতে পারো।
তোমার ব্যবসার প্রচার-প্রচারণা যত হবে গ্রাহক সংখ্যা ততোই বাড়বে। তাই প্রচার প্রচারণার জন্য সবচাইতে সহজ মাধ্যম ব্যবহার করতে পারো। সেক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন ফেসবুক, টুইটার এবং ইউটিউব এ ব্যবসার নামে প্রোফাইল করে সেখান থেকে প্রচার প্রচারণা করতে পারলে সহজেই কম খরচে সবচেয়ে বেশি প্রচার প্রচারণা করতে পারবে।
যাইহোক খুব অল্প কিছু দ্রব্য সামগ্রী নিয়ে ব্যবসা শুরু করে দিতে পারো। এবং তুমি যদি সব কিছু ঠিক হওয়ার জন্য অপেক্ষা করলে কিন্তু হবে না। বরং যত তাড়াতাড়ি আয় করা শুরু করবে ততই তোমার আত্মবিশ্বাস বাড়বে।তুমি যদি মনে কর তোমার কাস্টমার ব্যবসার আগেই তৈরি হোক, ট্রেড লাইসেন্স, বা ব্যবসার প্রয়োজনে যে সকল কাগজপত্র দিবে সেগুলোর জন্য তুমি অপেক্ষা করবে তবে তুমি ভুল করবে। বরং ব্যবসার নামার পরে ধীরে ধীরে কাগজপত্র ঠিক করো।
এমন হলে, সবকিছু ঠিকঠাক হওয়ার আগেই তোমার আয় শুরু হয়ে যাবে যেটা তোমাকে আরো বেশি অনুপ্রেরণা যোগাবে এবং উৎসাহ দেবে।
ব্যবসা নয় বিক্রি করো সমাধানঃ
তোমার ব্যবসায় কি সেবা গ্রাহকের কাছে কি বিক্রি করবে তা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হলো ব্যবসার মাধ্যমে গ্রাহকের কোন সমস্যার সমাধান হচ্ছে কিনা সেটা দিকে খেয়াল রাখা। তাই তোমার ব্যবসার পণ্য নয় বরং ব্যবসা থেকে তোমার গ্রাহককে সমাধান বিক্রি করতে হবে।
তাই তোমার ব্যবসার যারা গ্রাহক থাকবে তারা যেন খুব সহজেই তোমার কাছ থেকে তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করতে পারে সেদিকে তোমাকে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়াও তুমি চাইলে তোমার পণ্যের হোম ডেলীভারী ব্যবস্থা করতে পারো। এতে খুব সহজেই তার চাহিদার পণ্যগুলো পেয়ে যাবে। তার যাতায়াত খরচ এবং কষ্ট দুটোই বেঁচে যাবে। তাই সব সময় ব্যবসা নয়, তোমাকে সমাধান বিক্রি করতে হবে।
বর্তমান সময়ে পুঁজি ছাড়া ব্যবসা করা যায়। তাই তুমি চাইলে তোমার ব্যবসাকে আরো ভালো করে করতে ডিজিটাল মাধ্যমে নিতে পারো। তবে যে কোন ছোট ব্যবসায় খুব স্বল্প পুজিতে বেশি আয় করা সম্ভব। তাই ব্যবসা টি বেছে করতে হবে এবং সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে। তবেই তুমি একজন সফল ব্যবসায়ী এবং তরুণ উদ্যোক্তার কাতারে শামিল হতে পারবে।