চামড়ার ব্যবসা কীভাবে শুরু করবেন?
ব্যাগ, জুতো বা বেল্ট অনেক রকম উপকরণ দিয়ে তৈরী হলেও চামড়ার তৈরী জিনিসের আভিজাত্যই আলাদা।তাই সব বয়সের মানুষই চামড়ার তৈরী বিভিন্ন জিনিসের প্রতি যথেষ্ট অনুরক্ত।অনেক বছর আগে প্রথম যখন জুতো তৈরী হয়েছিল সেটা চামড়া থেকেই হয়েছিল তবে বর্তমানে চামড়া ছাড়াও অনেক রকম উপকরণ দিয়ে জুতো, ব্যাগ, বেল্ট , ঘড়ির ব্যান্ড, ডায়রির কভার এই জিনিস গুলি তৈরী হয়। অন্যতম প্রবীণ শিল্প গুলির মধ্যে চামড়া শিল্প একটি। আর বৰ্তমানে এই দেশের লেদার টেকনোলজি এতই উন্নত এবং আকর্ষণীয় যে এই দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও উচ্চ দামে চামড়ার জিনিসগুলি পাড়ি দিয়েছে। সাবেকি ডিজাইনের পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মও চামড়া দিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরী করার ফলে ডিজাইনে এবং শৈলী তে নতুনত্ব আসছে আবার কোথাও কোথাও নতুন পুরোনো মিলিয়ে ইনোভেটিভ প্রোডাক্ট ও তৈরী হচ্ছে। দেশীয় বাজারের পাশাপাশি চামড়া প্রোডাক্টের একটা আন্তর্জাতিক বাজার রয়েছে। আমেরিকা, জাপান, হংকং এবং ফ্রান্সের মত দেশ গুলো মূলত চর্মজাত দ্রব্যের খরিদ্দার যথেষ্ট। উন্নত মানের কাজ দেখাতে পারলে এই আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে পারার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
তাই তুমি যদি চামড়ার ব্যবসা করার জন্যে ভাবো তাহলে সেটি খুব ভালো সিদ্ধান্ত হতে চলেছে। কিন্তু কি ভাবে এগোবে সেই পদ্ধতি গুলোই আলোচনা করবো –
প্রথম ধাপ–
চামড়াজাত দ্রব্য যেমন বাড়ি থেকে বিক্রি করা যায় তেমনই দোকান থেকেও বিক্রি করা যায়। তাই তোমাকে সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রথমে দোকান এর আয়োজন না করতে পারলে বাড়িতেও যদি ভালো কালেকশন রাখতে পারো সেখান থেকেই তোমার ব্যবসা বাড়তে থাকবে। অনেকসময়ই দেখা যায় বড়ো দোকান হওয়া সত্ত্বেও সেখানে ভিড় হয় না আবার ছোট দোকানেও সারাদিন ভিড়। জুতো, ব্যাগ এগুলি প্রত্যেকের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মধ্যে পড়ে। তাই লোকে আস্তে আস্তে যখন তোমার ব্যবসার কথা জানতে পারবে তারা তোমার কাছে আসবে। তুমি পাইকারি বাজার থেকে কম দামে জিনিস এনে নিজস্য ব্যাবসার পাশাপাশি তোমার এলাকার কয়েকটা দোকানে সাপ্লাই ও করতে পারো। এর ফলে তোমার জিনিসগুলোর ভালো বিক্রিও হয়ে যাবে, কিছু মানুষের কাছে তোমার মাৰ্কেটিং ও হয়ে যাবে। দোকানের জন্যে যেমন একটা নাম এবং তার পেপারস রেডি করতে হয় তার জন্যে বেশ কিছু মূলধনের ও প্রয়োজন হয়, বাড়ি থেকে শুরু করলে তুমি তোমার আসল লক্ষ্যের দিকে তাড়াতাড়ি এগোতে পারবে।
দ্বিতীয় ধাপ–
যে কোনো দোকানের কালেকশনই তার প্রধান আকর্ষণ। তাই সব রকম দামের সব রকম বয়সের জন্যে জুতো, চটির কালেকশন রাখতে হবে। ধীরে ধীরে বেল্ট, ব্যাগের কালেকশনও রাখতে পারো। জুতোর বা চটির ক্ষেত্রে সাইজও অনেকটা ম্যাটার করে। কারণ একজনের যদি চার নম্বর জুতোর প্রয়োজন হয় আর একজনের ছয় বা সাতের ও দরকার হতে পারে। একই চটি বা স্যান্ডেল যদি একজন বয়স্ক মানুষের জন্যে ডিসাইন করা হয় সেটা হয়তো কম বয়সী কারোর পছন্দ হবে না। আবার নারীদের পুরুষদের চটিও আলাদা হয়। তাই কাস্টমেরদের জুতো পছন্দ করানো যে কোনো জুতো ব্যাবসায়ীর একটি বিশেষ দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তাই কাদের জন্যে জুতো বিক্রয় করবে সেটাও তোমাকে ভাবতে হবে। আর সেই দলে বাচ্ছাদের কালেকশন ও আছে। তোমার প্রধান কাজ হবে তোমার এলাকায় কোন জুতো বা কি ধরণের জুতো বিক্রয় করলে বেশি পরিমানে মুনাফা পাওয়া যাবে সেই তা একটু স্টাডি করা। তারপর তোমার একটি সমৃদ্ধ কলেকশনের জন্যে নিজেকে প্রস্তুত করো।
তৃতীয় ধাপ–
কোথা থেকে তোমার ব্যাবসার আইটেম গুলো কিনবে সেটা এবার ঠিক করো। তোমার আশেপাশে কোথায় জুতো তৈরী করার কারখানা আছে সেইসব খবর নাও। কোন জায়গা থেকে সঠিক মানের পাইকারি জুতো পাবে, তাদের কিভাবে পেমেন্ট করবে সব প্রথমে প্ল্যান করে একটা জায়গায় নোটডাউন করতে পারো। অনেকসময় একটা নির্দিষ্ট জায়গা থেকে তুমি সব কিছু তোমার চাহিদা মতো নাও পেতে পারো তাই কোথা থেকে কোন জিনিস পাবে সেটাও মাথা ঠান্ডা করে তোমাকে ভাবতে হবে।তারপর ধীরে ধীরে সব দিক থেকে এগিয়ে যাও।তুমি দোকান থেকে বিক্রি করো বা তোমার বাড়ি থেকে সময়ের ধারাবাহিকতা, পণ্যের গুণগতমান এগুলি বজায় রাখতে হবে। তোমার বিশ্বাসযোগ্যতা তোমাকেই অর্জন করতে হবে।
চতুর্থ ধাপ–
যে কোনো জিনিসেরই প্যাকিং করার একটা উন্নতমানের ব্যবস্থা থাকলে কাস্টমাররা খুশি হয় , আকর্ষিতও হয়। কোনো জিনিস দীর্ঘদিন ভালো রাখার জন্য একটা প্যাকিং খুব দরকার। যেহেতু লেদারের জিনিস সাধারণতঃ একটু দামি হয় এবং যারা লেদারের জিনিস পছন্দ করে তাদের কাছে এই জিনিস গুলি বেশ প্যাশনেট হয় তাই কোনোভাবে নষ্ট হয়ে যায় এটা কোনো ক্রেতাই চাইবেন না। তাই একজন বিক্রেতা হিসাবে তোমাকেই বেশ উন্নতমানের প্যাকিং করতে হবে। দরকার হলে তুমি বাড়িতে বাক্স তৈরী করার মেটেরিয়াল এনে মেশিনের সাহায্যে এই বাক্স গুলো তৈরী করে নিতে পারো। আবার যে কোম্পানি থেকে তুমি মাল আনবে সেখান থেকেও এই পাকিং বাক্স পেতে পারো। তবে ভালো ভাবে জানার জন্যে তোমার মালিকের সাথে কথা বলে নাও।
পঞ্চম ধাপ–
এরপর তোমার ব্যবসার প্রচার করার জন্যে তোমাকে বিভিন্ন এক্টিভিটি করতে হবে। তার জন্যে প্রথমেই অনলাইন ওয়েবসাইটের সাহায্য নিতে পারো , সোশ্যাল সাইটগুলোতে তোমার ব্যাবসার বিজ্ঞাপন দিতে পারো। যেখানে তোমার ব্যবসা করবে কয়েকটা ছোট খাটো পোস্টার দিতে পারো। কোনো উৎসব অনুষ্ঠানের সময় ক্রেতাদের আকর্ষণ করার জন্যে তার কেনা জিনিসের সাথে কিছু ছোট উপহারও দিতে পারো। কোনো পরিমান টাকার জিনিস ক্রয় করলে কিছু ডিসকাউন্টের অফার দিতে পারো। তোমার বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয় স্বজন কে তোমার স্টক দেখানোর জন্যে আমন্ত্রণ করতে পারো। তবে কোনো কাস্টমার জিনিস না কিনলে তার সাথে খারাপ ব্যবহার করা যাবে না। হয়তো সে না কিনলেও কাউকে তোমার ব্যাবসার কথা বললো। এভাবে কিছুটা মার্কেটিংও হলো, তোমার দোকানের সুনাম ও হবে।
পরবর্তী ধাপ–
তুমি তোমার দোকান প্রতিষ্ঠা করছো , তাই সব ইনিশিয়েটিভ তোমাকেই নিতে হবে। তোমাকে এই ব্যাপারটায় সতর্ক থাকতে হবে জুতো হোক, ব্যাগ হোক বা তোমার দোকানের যে কোনো জিনিসের মান যেন সঠিক থাকে। একাউন্ট থেকে শুরু করে স্টোরিং পদ্ধতি সব দিকেই তোমাকে দক্ষ এবং প্রশিক্ষিত হতে হবে। যদি তুমি ইতিমধ্যেই এসব ব্যাপারে জানো তবে তো ভালোই নাহলে সরকারি ও বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো ছোট কোর্স করে নিতে পারো। লেদার টেকনোলজি নিয়ে এখন অনেকেই উচ্চশিক্ষাও করছে। এর ফলে তোমার সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পর্কে বেশ আত্মবিশ্বাসও আসবে আবার সবসময় তোমাকে কারুর উপর নির্ভর করতে হবে না।
লেদার ব্যবসা শুরু করার জন্যে সাধারণত কয়েকলাখ টাকার দরকার হয়।তবে এটা ঠিক করে বলা সম্ভব নয়। দরকারি ব্যাবসায়িক কাগজপত্র রেডি করতেও কিছু টাকা লাগে।আর প্রারম্ভিক মূলধন জোগাড়ের সমস্যা হলে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক, সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে তোমার নতুন যাত্রা শুরু করতে পারো।চামড়ার ব্যবসা বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে করা যায়। মেশিনারি ব্যবস্থা থেকে প্যাকিং তুমি যেভাবে ব্যবসাটিকে সাজাতে চাও তোমার প্রারম্ভিক ব্যায় ও সেভাবে স্থির হবে। বর্তমানে চামড়ার ছোট হাত– ব্যাগের বেশ ডিমান্ড আছে। নিউ জেনেরেশনের মেয়েদের কাছে এগুলি বেশ ট্রেন্ডি। একথা সত্যি সবাই চামড়ার জিনিস ব্যবহার করেন না। আবার যারা করেন তারা লেদারের জিনিস ছাড়া অন্য ম্যাটেরিয়ালের জিনিস ব্যবহার করে সেই আনন্দ বা আরাম পান না। তাই তোমাকে সেই বাজার তুলতে হবে। আর নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। যারা অভিজ্ঞ তাদের সাথেও কথা বলতে পারো। তোমার এগিয়ে যাওয়ার পথ কিছুটা মসৃন হতেও পারে।