কাঁচের সেটের ব্যবসা কীভাবে শুরু করবেন?
অ্যালুমিনিয়াম, স্টিলের, কাঠের জিনিস আমরা রোজকার জীবনে ব্যবহার করলেও কাঁচের জিনিসের যে মাহাত্ম বা আভিজাত্য কখনই কম নয়।প্রতিটি জিনিসেরই তার নিজস্স গুরুত্ব থাকে। কাঁচের জিনিস অর্থাৎ ক্রোকারির জিনিস যে কোনো উৎসব অনুষ্ঠানে তার গুরুত্ব এক ঝটকায় বাড়িয়ে দেয়। কোনো বোরো অনুষ্ঠানে যখন সামনে একটি খুব সুন্দর ডিজাইনের প্লেট ও গ্লাস রাখা হয় আমাদের সকলের মনেই একটি সন্তুষ্টি আসে। আমরা আবেগ অনুভব করি। তাই সহজে ভেঙে গেলেও কাঁচের যে কোনো পাত্র বা সৌখিন জিনিসপত্রের দাম আমাদের কাছে কখনোই ভেঙে না। বরং দিনে দিনে তা বেড়েই চলে।
আমরা বাড়িতে অতিথি আপ্যায়নের জন্যে একটি সুন্দর কাঁচের ডিনার সেট, কাপ প্লেটের সেট তুলে রাখি এর থেকে হয়তো কাঁচের জিনিসের গুরুত্ব বোঝা যায়।তাই প্রকৃতপক্ষেই কাঁচের ক্রোকারির বা সেটের ব্যবসা একটি বুদ্ধিমানের ব্যবসা হিসাবে ধরা যেতেই পারে। আর অনলাইন মার্কেটিং এখন ব্যবসা করার একটি অন্যতম মাধ্যম। তোমরা যারা ভাবছো কাঁচের সেটের ব্যবসা করবে , বড়ো পরিসরে হোক বা ছোট, ব্যবসা বাড়িয়ে এগিয়ে চলার অনেক রাস্তা। তবে এই ব্যাবসায় প্রচুর সাবধানতা অবলম্বন প্রয়োজন। যেহেতু পুরো নমনীয় কাঁচের সেট, তাই কোনোভাবে একটি প্রোডাক্ট নষ্ট হয়ে গেলে সেই সেটের উপযুক্ত দাম পাওয়া যায় না। আর সব জিনিস লুসে বিক্রয় করা সম্ভব হয় না।কিন্তু নেগেটিভ ভাবার কোনো প্রয়োজন নেই। ভারতে কাঁচ শিল্পের অগ্রগতি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। তাই একটু বুদ্ধি এবং কৌশলের সাহায্যে প্রথম থেকে এগোলে তোমার সাফল্য আসতে বাধ্য।
অসাধারণ দৃষ্টভঙ্গি, পরিশ্রম এবং সৎ চেষ্টা মানুষকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে সাহায্য করে, মাঝারি মানের বা বৃহৎ পরিমানে পুঁজি দিয়েও এই কাঁচের সেটের ব্যবসাটি শুরু করা যায় এবং সহজে সাফল্য লাভও করা যায় শুধু চাই প্রপার একটা প্ল্যান। কিভাবে এগোলে তোমার ব্যবসার শুরু থেকেই সব দিক ঠিক থাকবে তারই কিছু স্মার্ট টিপস–
- মার্কেট রিসার্চ কোনো ব্যবসা শুরু করার আগে একটা বড়ো ভূমিকা পালন করে। তোমার চিন্তা বা ধারণাটিকে একটি সফল ব্যবসায়ে পরিণত করার কোনও সুযোগ আছে কিনা তা মার্কেট রিসার্চার সাহায্যে অনেকাংশে বোঝা যায়। কাঁচের সেটের ব্যবসা সাধারণত একটু অফবিট , কারণ মুদিখানার দোকান বা খাবারের দোকানের মতো সব জায়গায় এই দোকান হয় না তাই যারা এই ব্যাবসায় অভিজ্ঞ তাদের কাছ থেকে একটু পরামর্শ নিতে পারো। তুমি যে জায়গায় ব্যবসা করবে ভাবছ সেখানে ইতিমধ্যে কাজ করা ব্যাবসায়ীদের থেকে সম্ভাব্য গ্রাহকদের চাহিদা এবং ব্যবসায় সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করার এটি একটি ভালো উপায়।
- তোমার ব্যাবসার জন্যে সমস্ত রকমের পরিকল্পনা একটি জায়গায় লিখে রাখলে এটি তোমাকে স্টেপ বাই স্টেপ এগোতে সাহায্য করবে। যে কোনো ব্যবসায়ের সুস্পষ্ট একটি পরিকল্পনা ব্যবসায়ের ভিত্তি নির্মাণ করে।এটি কীভাবে তোমার নতুন ব্যবসায়ের কাঠামো চালানো, এগিয়ে যাওয়া এবং বাড়ানো যায় তার একটি ধাপ বলা যেতে পারে।কোথা থেকে মাল কিনতে পারো বা মাল বহন করার জন্যে কি ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে তারও একটা পরিকল্পিত নকশা করে রাখতে পারো।
- যে কোনো ব্যাবসার জন্যেই কোনো জনবসতি পূর্ণ এলাকা বেশি উপযুক্ত। কাস্টমাররা দূর থেকে দেখে পছন্দ করে তোমার দোকানে আসবে এটাই হবে তোমার মেন্ লক্ষ্য। আর যেহেতু কাঁচের জিনিস সাজিয়ে রাখার জন্যে বেশি জায়গা লাগে তাই একটি বড়ো মাপের দোকানের আয়োজন করতে হবে এবং সেটি যেন রাস্তার নিকটবর্তী হয়। কিছু ক্রেতা আছেন যারা দোকানে এসে জিনিস দেখে পছন্দ করেন, তাদের জন্যে কিছু ফ্যাশনেবল বিভিন্ন রকমের সেট সাজিয়ে রাখতে হবে। আপাততভাবে একটি কাঁচের জিনিসের ব্যাবসার জন্যে দোকান শুরু করতে ২ থেকে ৪ লক্ষ টাকা দরকার হয়।
- যদি তোমার হাতে সেই পরিমাণ অর্থ না থাকে তবে তোমাকে সেই মূলধন সংগ্রহ করতে হবে। তোমার প্রয়োজনীও মূলধনটি পাওয়ার জন্যে অনেক রকম উপায় রয়েছে। তোমার ব্যবসার জন্য যে আইনী কাঠামো টি রয়েছে তা তোমাকে আয়োজন করতে হবে। ব্যবসায়িক নিবন্ধকরণের প্রয়োজনীয়তা, করের ক্ষেত্রে কতটা প্রদান করতে হবে তারও একটি সম্যক জ্ঞান প্রয়োজন। দরকার হলে তোমার যদি প্রথমেই কোনো দোকান ঘর কেনার সামর্থ না থাকলে তুমি ভাড়া নিয়ে শুরু করতে পারো।
- এই ব্যাবসায় তেমন কোনো ঝুঁকি না থাকলেও ক্রেতার পছন্দের ওপর দাম দিতে হবে, যথার্থ দামে এবং তার চাহিদা অনুসারে তার প্রয়োজনীয় জিনিস তাকে দেখতে হবে। কাপ , প্লেট , গ্লাসের সেট , বাটির সেট এগুলোর কালেকশন বেশি রাখতে হবে কারণ এগুলোর চাহিদা সবসময়ই তুঙ্গে। কিছুটা পুঁজি জোগাড় করার পর পরবর্তীকালে তুমি সৌখিন এবং বেশি দামি, হাই কোয়ালিটির ডিসাইন সহ সেট এর কালেকশন তোমার দোকানে রাখতে পারো তবে ততদিনে কাস্টমার কি চাইছে ইটা তুমি বুঝতে পারবে। দরকার হলে অর্ডার দিলে তুমি জিনিস এনেও দিতে পারো।
- প্রথমেই তোমার দোকানের জন্যে একটা যথার্থ নাম ঠিক করতে হবে। দোকানের নাম মার্কেটিং করতে সাহায্য করে। তার সাথে কোনো মোড়ে হোর্ডিং, লিফটলেট দিতে পারো যাতে সবাই দোকান সম্পর্কে জানতে পারে। কাঁচের জিনিসের ছবি সহ লোগো দেওয়া ডিসাইনও ইউস করতে পারো দোকানের নামের সাথে সাথে যে ক্যারিবাগে জিনিসগুলি দেবে তাতেও দোকানের নাম ও ফোন নম্বর ছাপিয়ে রাখতে পারো। এগুলো মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে সাহায্য করে।
- প্রথম দিকে একটু কম লাভে জিনিস বিক্রি করলে কাস্টমার বেশি হলে তারপর লাভের পরিমান বাড়াতে পারো। ব্যবসা শুরুতে এটাই একটা ট্রিকস হিসাবে কাজ করে। যেহুতু উৎসব অনুষ্ঠানে কাঁচের জিনিস গিফট দেয়া হয় বা বাড়িতেও কোনো অনুষ্ঠানের সময় এই সেট গুলি ব্যবহার করা হয় তাই চাহিদা মতো তাই কাস্টমার কে খুশি করতে পারলে তোমার ক্রেতা নিয়ে চিন্তা করার দরকার পড়বে না।
- যে কোনো কালেকশন তার প্রধান অস্ত্র। বিভিন্ন রকম দামের বিভিন্ন জিনিসের কালেকশন রাখতে হবে, কম থেকে বেশি দামের জিনিস দিয়ে তোমার দোকানকে এমনভাবে সুসজ্জিত করে তুলতে হবে যাতে কোনো মানুষ দোকানে এসে তার আকাঙ্খিত কোনো জিনিস খুব তাড়াতাড়ি পছন্দ করতে পারে।প্রতিটি জিনিসের ন্যায্য দাম রাখতে হবে।
- বর্তমানে অফলাইন ব্যাবসার পাশাপাশি অনলাইন ব্যাবসাও বেশ জনপ্রিয়। সোশ্যাল সাইট , মার্কেটিং ওয়েব সাইটগুলিও ব্যাবসার অন্যতম ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।নিজস্স ওয়েবসাইটের সাহায্যেও তুমি মার্কেটিং করতে পারো। তবে প্রথম দিকে সোশ্যাল সাইট , মার্কেটিং সাইট গুলোই ভালো হবে। গ্রাহক বেশি পাওয়ার সম্ভবনাময় একটি দিক বর্তমানে অনলাইন সাইট গুলি।তুমি অবশ্যই চেষ্টা করতে পারো।
- একটি ব্যবসার শুরু করতে হলে একটা ব্যাবসায়িক অ্যাকাউন্ট থাকা দরকার। প্রতিদিনের বিষয়গুলি পরিচালনা করতে এটি সহায়তা করে। যদি তোমার কাছে সঠিক ডকুমেন্টস এবং কাগজপত্র প্রস্তুত থাকে তবে একটি সেট আপ করা খুবই সহজ। এখন অনলাইন পেমেন্ট অপশন সবজায়গায় রাখা হয়। যেহুতু সবসময় ক্যাশ পেমেন্ট সম্ভব হয় না তাই অনেকেই ব্যাঙ্ক ট্রান্সফার করে দেন। তাই তোমাকে ব্যবসা শুরু করার আগেই এইসব একাউন্ট রিলেটেড ব্যাপারগুলো সমাধান করে নিতে হবে।
- কিছু ডকুমেন্টস জোগাড় করতে হবে। এই আইনী নথিগুলি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।তার মধ্যে ব্যবসায়িক লাইসেন্স এবং অনুমতি পত্র ,সংস্থার প্রশংসাপত্র, ব্যবসায়িক পরিকল্পনা, বিক্রয় করের অনুমতি, বীমা পলিসি, এমপ্লয়ার সনাক্তকরণ নম্বর (EIN) রাখাটা বাধ্যতা মূলক।যত শীঘ্র সম্ভব এগুলো জোগাড় করে তারপর তোমার ব্যবসা শুরু করো।
আশা করি এই সহজ ধারণার সাহায্যে তোমার ব্যবসা তুমি শুরু করতে পারবে। যে কোনো ব্যাবসার জন্যে ক্রেতাদের সন্তুষ্টি এবং ধারাবাহিকতা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সেটা তোমাকে হাসিমুখে বজায় রাখার চেষ্টা করতে হবে।তোমার আত্মবিশ্সাসই হবে তোমার সফল হওয়ার চাবিকাঠি।