আসবাবপত্রের ব্যবসা কিভাবে শুরু করবেন
ফার্নিচার যে কোনো ঘরে শোভা বর্ধন করে। বর্তমানে শুধু কাঠ নয়, তার সাথে আরো আধুনিক উপাদান দিয়ে আসবাবপত্র তৈরী করা হয়, যেগুলো দাম এবং ওজনেও হালকা , কিন্তু দেখতে মনোমুগ্ধকর। আর বাড়ি হোক বা কোনো এপার্টমেন্ট, স্কুল বা মিউজিয়াম আসবাবপত্রের প্রয়োজন হয় না এমন জায়গা নেই।গৃহস্থালির কাজ থেকে অফিসিয়াল কাজ , সর্বত্রই নিত্যনতুন আসবাবপত্রের ব্যবহার। আর যে কোনো জিনিস রাখার জন্যে একঘেয়ে আসবাবপত্রের তুলনায় নতুন মডেলের আসবাবপত্রের ডিমান্ডও প্রচুর। আর ভারতবর্ষের আসবাবপত্রের এই আধুনিকতার জন্যে বিদেশেও এই আসবাবপত্র রপ্তানি হয়। এমন শোনা যায় , আসবাবপত্রের ডিসাইন দেখে কোনো কোনো কারিগরকে বিদেশে নিমন্ত্রণ পাঠানো হচ্ছে সেই দেশে আসবাবপত্র নির্মাণ করে তাদেরকে আনন্দ দেয়ার জন্যে। সব দিক থেকে বিবেচনা করলে আসবাবপত্রের ব্যবসা একটি অন্যতম লাভজনক ব্যবসা।
আগেকার দিনে মানুষের পছন্দের সাথে এখনকার দিনে মানুষের অভ্যাস ও রুচিবোধের পরিবর্তন হচ্ছে আর তার সাথে তাল মিলিয়ে পোশাক , কাজকর্ম, আচার– আচরণ বদলে যাচ্ছে। বড়ো আসবাবপত্রের পরিবর্তে মানুষ এখন আধুনিক গৃহের মানানসই ছোট কিন্তু স্পেসিয়াস, হালকা, বহনযোগ্য আসবাবপত্র সন্ধান করছে। ফলে আসবাবপত্র কারিগররা বিভিন্ন রকমের যুৎসই, আকর্ষণীয় উপাদানের সাহায্যে আসবাবপত্র নির্মাণ করে যথেষ্ট সমাদৃত হচ্ছেন। নিজেকে একটি বৰ্ধিতমান ব্যাবসার সাথে যুক্ত করার জন্যে এবং স্বাবলম্বী হওয়ার জন্যে আসবাবপত্রের ব্যবসা একটি সময়োপযোগী ও যুগান্তকারী ধারণা। সাধারণভাবে একটা আসবাবপত্রের কারখানা বা দোকান করার জন্যে যে বিষয়গুলো তোমাকে ভাবতে হবে তারই একটা সংক্ষিপ্ত আলোচনা এখানে আমরা করবো।
অভ্যাস, পরিশ্রম এবং সৎ চেষ্টা মানুষকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে সাহায্য করে, মাঝারি মানের পুঁজি দিয়ে এই আসবাবপত্রের ব্যবসাটি শুরু করা যায় এবং সহজে সাফল্য লাভও করা যায় শুধু চাই প্রপার একটা প্ল্যান। কিভাবে এগোলে তোমার ব্যবসার শুরু থেকেই
সব দিক ঠিক থাকবে তারই কিছু স্মার্ট টিপস-
- মার্কেট রিসার্চ কোনো ব্যবসা শুরু করার আগে একটা বড়ো ভূমিকা পালন করে। তোমার চিন্তা বা ধারণাটিকে একটি সফল ব্যবসায়ে পরিণত করার কোনও সুযোগ আছে কিনা তা মার্কেট রিসার্চার সাহায্যে অনেকাংশে বোঝা যায়। তুমি যে জায়গায় ব্যবসা করবে ভাবছ সেখানে ইতিমধ্যে কাজ করা ব্যাবসায়ীদের থেকে সম্ভাব্য গ্রাহকদের চাহিদা এবং ব্যবসায় সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করার এটি একটি ভালো উপায়।
- তোমার ব্যাবসায়ের জন্যে সমস্ত রকমের পরিকল্পনা একটি জায়গায় লিখে রাখলে এটি তোমাকে স্টেপ বাই স্টেপ এগোতে সাহায্য করবে। যে কোনো ব্যবসায়ের সুস্পষ্ট একটি পরিকল্পনা ব্যবসায়ের ভিত্তি নির্মাণ করে।এটি কীভাবে তোমার নতুন ব্যবসায়ের কাঠামো চালানো, এগিয়ে যাওয়া এবং বাড়ানো যায় তার একটি নকশা। তোমার সাথে কাজ করা বা তোমার সংস্থায় বিনিয়োগ করা একজন লোককে বোঝাতে তুমি এটি একটি স্মার্ট পছন্দ হিসাবে ব্যবহার করতে পারো।
- আসবাবপত্রের ব্যাবসার জন্যে তুমি যদি কোনো জনবসতি পূর্ণ এলাকা পছন্দ করো তাহলে সব থেকে উপযোগী হবে। যেহেতু ফার্নিচার রাখার জন্যে জায়গা লাগে তাই একটি বড়ো মাপের দোকানের আয়োজন করতে হবে এবং সেটি যেন রাস্তার নিকটবর্তী হয়। কিছু ক্রেতা আছেন যারা দোকানে এসে জিনিস দেখে পছন্দ করেন , তাদের জন্যে কিছু রেডিমেড এবং ফ্যাশনেবল বিভিন্ন রকমের আসবাব তৈরী করতে রাখতে হবে। আপাততভাবে একটি আসবাবপত্রের ব্যাবসার জন্যে দোকান শুরু করতে ৬ থেকে ৮ লক্ষ টাকা দরকার হয়।
- যদি তোমার হাতে সেই পরিমাণ অর্থ না থাকে তবে তোমাকে সেই মূলধন সংগ্রহ করতে হবে। তোমার প্রয়োজনীও মূলধনটি পাওয়ার জন্যে অনেক রকম উপায় রয়েছে। তোমার ব্যবসার জন্য যে আইনী কাঠামো টি রয়েছে তা তোমার ব্যবসায়িক নিবন্ধকরণের প্রয়োজনীয়তা, করের ক্ষেত্রে কতটা প্রদান করতে হবে এবং ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
- এই ব্যাবসায় তেমন কোনো ঝুঁকি না থাকলেও ক্রেতার পছন্দের ওপর দাম দিতে হবে, যথার্থ দামে এবং তার চাহিদা অনুসারে তার প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তৈরী করতে হবে। প্রথমে শো–পিস, আলমারি, চেয়ার, টেবিল, সিংহাসন ঘরের জানলা, দরজা, তার ফ্রেম এগুলো দিয়ে শুরু করতে পারো, কারণ এগুলোর চাহিদা সবসময়ই তুঙ্গে। কিছুটা পুঁজি জোগাড় করার পর পরবর্তীকালে তুমি সৌখিন আসবাবপত্র, হাই কোয়ালিটির ডিসাইন সহ আসবাবপত্র তৈরী করতে পারো। এক্ষেত্রে তোমাকে কোনো কাস্টমার অর্ডার দিলে তোমার কাজ পেতে সুবিধা হবে।
- প্রথমেই তোমার দোকানের জন্যে একটা যথার্থ নাম ঠিক করতে হবে। দোকানের নাম মার্কেটিং করতে সাহায্য করে। তার সাথে কোনো মোড়ে হোর্ডিং, লিফটলেট দিতে পারো যাতে সবাই দোকান সম্পর্কে জানতে পারে।
- সাধারণতঃ আসবাবপত্রের ব্যবসা থেকে শতকরা ২৫ থেকে ৩৫ পার্সেন্ট পর্যন্ত আয় হতে পারে। তবে ব্যবসা শুরুর দিকে এই পার্সেন্টেজে তুমি নাও পেতে পারো। প্রথম দিকে একটু কম লাভে জিনিস বিক্রি করলে কাস্টমার বেশি হলে তারপর লাভের পরিমান বাড়াতে পারো। যেহুতু সকল পেশার মানুষই আসবাবপত্র ব্যবহার করেন তাই চাহিদা মতো রুচিশীল ফার্নিচার বানাতে পারলে তোমার ক্রেতা নিয়ে চিন্তা করার দরকার পড়বে না।
- যোগ্যতার কথা বলতে গেলে এই ব্যাবসায় নির্দিষ্ট কোনো যোগ্যতার মাপকাঠি থাকে না। তবে কাঠ বা যে জিনিস দিয়ে ফার্নিচার টা তৈরী হচ্ছে সেই সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে কাজের ক্ষেত্রে সুবিধা হয়।কাজ করতে করতে তুমি দক্ষ হয়ে উঠবে বা কোনো অভিজ্ঞ মিস্ত্রি দ্বারাও আসবাব তৈরী করতে পারো। বাজারজাত করুন, ভালো মানের বার্নিশ, আসবাবপত্রের রং এবং রক্ষনাবেক্ষন এগুলোর দিকেও নজর দিতে হবে। নিজের উপর আত্মবিশ্বাস থাকাটা বাঞ্চনীয়।
- যে কোনো কালেকশন তার প্রধান অস্ত্র। দূর থেকে দোকানের দিকে তাকিয়েও একজন যেন ফার্নিচারের ওপর আকর্ষিত হয় সেই ভাবে তোমার প্ল্যানিং করতে হবে। বিভিন্ন রকম দামের বিভিন্ন টিপের ফার্নিচারের কালেকশন রাখতে হবে, তোমার দোকানকে এমনভাবে সুসজ্জিত করে তুলতে হবে যাতে কোনো মানুষ দোকানে এসে তার আকাঙ্খিত কোনো জিনিস খুব তাড়াতাড়ি পছন্দ করতে পারে।প্রতিটি জিনিসের ন্যায্য দাম রাখতে হবে।
- বর্তমানে অফলাইন ব্যাবসার পাশাপাশি অনলাইন ব্যাবসাও বেশ জনপ্রিয়। সোশ্যাল সাইট , মার্কেটিং ওয়েব সাইটগুলিও ব্যাবসার অন্যতম ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।নিজস্স ওয়েবসাইটের সাহায্যেও তুমি মার্কেটিং করতে পারো। তবে প্রথম দিকে সোশ্যাল সাইট , মার্কেটিং সাইট গুলোই ভালো হবে। গ্রাহক বেশি পাওয়ার সম্ভবনাময় একটি দিক তুমি অবশ্যই চেষ্টা করতে পারো।
- একটি ব্যবসার অ্যাকাউন্ট আইনী কর এবং প্রতিদিনের বিষয়গুলি পরিচালনা করতে সহায়তা করে। যদি তোমার কাছে সঠিক নিবন্ধকরণ এবং কাগজপত্র প্রস্তুত থাকে তবে একটি সেট আপ করা খুবই সহজ। এখন অনলাইন পেমেন্ট অপশন সবজায়গায় রাখা হয়। যেহুতু সবসময় ক্যাশ পেমেন্ট সম্ভব হয় না তাই অনেকেই ব্যাঙ্ক ট্রান্সফার করে দেন। তাই তোমাকে ব্যবসা শুরু করার আগেই এইসব একাউন্ট রিলেটেড ব্যাপারগুলো সমাধান করে নিতে হবে। কেউ যদি কোনো জিনিস অর্ডার করার সময় তোমাকে কিছু অনলাইন অ্যাডভান্স দিতে চাই এই ব্যাপারটি সাহায্য করবে।
- কিছু ডকুমেন্টস জোগাড় করতে হবে। এই আইনী নথিগুলি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।তার মধ্যে ব্যবসায়িক লাইসেন্স এবং অনুমতি পত্র ,সংস্থার প্রশংসাপত্র, ব্যবসায়িক পরিকল্পনা, বিক্রয় করের অনুমতি, এলএলসিগুলির জন্য অপারেটিং চুক্তি ,বীমা চুক্তি ,কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন), চুক্তি নথি, বীমা পলিসি , এমপ্লয়ার সনাক্তকরণ নম্বর (EIN) রাখাটা বাধ্যতা মূলক।
বিপণন, বাজারকরণ করা একটি ব্যবসায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক কারণ এটি ব্যবসায়ের সাহায্যে একটি রাজস্ব উৎপন্ন করে যা দোকানের আয় বৃদ্ধিরও প্রধান উপায়। এর ফলে তোমার প্রতিযোগীদের মধ্যে ব্যবসায়ের সচেতনতা তৈরি হবে।আসবাবপত্রের দোকান ব্যবসায়ের জন্য কিছু বিপণন কৌশল এবং ধারণা এখানে দেয়া হলো। অনলাইন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ব্যবসার বিজ্ঞাপন দিয়ে, তোমার পণ্যগুলি জনপ্রিয় করে তোলার জন্য শীর্ষস্থানীয় ই–কমার্স সাইটগুলিতে সেই গুলি পোস্ট করে তুমি ব্যবহার করতে পারো।