কিভাবে একটি আচার ব্যবসা
সুস্বাদু আচার ও চাটনি ভারতের মুখরোচক খাবারের মধ্যে একটি। প্রায় সব বয়সি নারি পুরুষরাই এটি খেতে ভালোবাসে। আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের আচার ও চাটনি পাওয়া যায়, যেগুলো খুব জনপ্রিয়। কিছু আচারের জনপ্রিয়তা দেশ জুড়ে, আবার কিছু ধরনের আচারের পদ ক্ষেত্র বিশেষে প্রসিদ্ধ।
এই আচারের রেসিপি তৈরির প্রক্রিয়া খুবই সহজ। যে কোনও ব্যক্তি তার বাড়ি থেকে সহজেই এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। এই কাজটি মহিলাদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে এবং ব্যবসাটি অনেক সহজ ও অত্যন্ত লাভজনক ।
কিভাবে শুরু করবেন?
ব্যবসা শুরুর আগে আপনার বাজারে কোন আচারটির জনপ্রিয়তা বেশি, সে নিয়ে একটি ধারণা গড়ে তুলতে হবে। সেই অনুসারে আপনাকে আচারের রেসিপি তৈরির উপর মনোনিবেশ করতে হবে। এছাড়াও, আপনার নিকটস্থ বাজারে এটি তৈরি করার জন্য ফলের যোগান কেমন, এ বিষয়েও ধারণা রাখতে হবে। খুব অল্প পরিমাণ পুঁজি বিনিয়োগ করেও এই ব্যবসা শুরু করা যায়।
আচার তৈরির ব্যবসা কেন লাভদায়ক!
প্রথমত, এই ব্যবসাটি শুরু করতে বেশি মূলধনের প্রয়োজন হয় না, তাই প্রারম্ভিক অবস্হায় বেশি বিনিয়োগের রিস্ক নিতে হয় না। এই ব্যবসা আপনি বাড়ি থেকেও শুরু করতে পারবেন। এর জন্য কোনো ব্যবসায়িক কাঠামোর প্রয়োজন হয় না। আচারের কোন না কোন পদ প্রায় সব বাড়িতেই খাওয়া হয়। তাই এর মার্কেট চাহিদা ভালো। আপনি ব্যবসা বাড়ার সাথে সাথে এই ব্যবসাটি বড়ো করে গড়ে তুলতে পারবেন। নিজের লোকাল মার্কেট ছাড়াও, আপনি চাইলে আচারের পদ বিদেশে রপ্তানি করতে পারবেন।
উপকরণ
আচার বানানোর জন্য কিছু উপকরণ দরকার। একটি বড় কড়াই, বাঁশের চালনি, কাচের বয়াম (প্রয়োজনমতো) প্রভৃতি তৈজসপত্র লাগবে। একেক রকম আচার তৈরিতে একেক রকম কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়। তাই যে আচার তৈরি করবেন, সে অনুযায়ী কাঁচামাল কিনতে হবে। আচার বানিয়ে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। ফলে বিভিন্ন সময় বাজারদর অনুযায়ী বিক্রি করতে পারবেন।
ক্রেতা
আজকাল কমবেশী সব শ্রেণির মানুষ আচার পছন্দ করে। ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্তদের জন্য আচার খুব উপকারী। তাছাড়া সকালের ব্রেকফাস্ট থেকে শুরু করে প্রতিবেলার খাবার গ্রহনের বেলায় আচার খাবারের অন্য রকম স্বাদ এনে দেয় তাই দেশে-বিদেশে সবজায়গায় এর চাহিদা বেশী।
কিভাবে বিক্রি করবেন?
আজকাল অনলাইনেও আচার বিক্রি করা যায়। আপনি চাইলে নিজের ওয়াবসাইট করে বিক্রি করতে পারেন তবে সেক্ষেত্রে একটু বেশী ইনভেস্ট করা লাগতে পারে। যাইহোক আমাজান এর মত মার্কেটেও আচার বিক্রি করতে পারেন। এছাড়াও আপনার নিকটস্থ বাজার, কোন সুপার শপ বা মুদির দোকানেও আচার বিক্রির জন্য খুব ভালো জায়গা। আজকাল খাবারের হোটেল গুলোতেও আচারের ভালো চাহিদা রয়েছে।
প্রশিক্ষণ
যে কোন হাতের কাজের ব্যবসা শুরু কারার সময়ে প্রশিক্ষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তাই আপনি দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবসাটি পরিচালনা করতে চাইলে ভালো কোন জায়গা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিলে সবথেকে বেশী ভালো হবে। স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রান্না শেখানোর প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এ সকল প্রতিষ্ঠান থেকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিয়ে আচার তৈরি ব্যবসা শুরু করা সম্ভব। এতে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে আপনার ৫০০০ টাকার মত লাগতে পারে।।
যে সকল আচার নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারেন?
নারকেল আচার
সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় নারকেলের প্রাচুর্য বেশি। বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতে যে কোনো ডিশে নারকেল খুব জনপ্রিয়। কাঁচা নারকেল থেকে এটি প্রস্তুত করা হয়। অন্যান্য আচারের তুলনায় এটি প্রস্তুত করতে অনেক কম সময় লাগে। তবে অন্যান্য আচারের যেমন খারাপ হওয়ার ভয় থাকে না, নারকেলের আচারের কিছু সময় পর খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
গাজর
আদি কাল থেকেই গাজরের আচার ভারতে খু জনপ্রিয় তাই আপনি চাইলে এটি নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে আরেন। গাজরের আচার তেল, লঙ্কা এবং বিভিন্ন মশলার সাথে মিশ্রণে তৈরি করা হয়। এটি খেতে যেমন ভালো তেমনি পুষ্টিকর।
বাঁশের অঙ্কুর
বাঁশের অঙ্কুরের আচারও বাজারে খুব জনপ্রিয়। নরম বাঁশের অঙ্কুর থেকে এটি তৈরি করা হয় এবং এর উৎপাদন প্রক্রিয়াটিও সহজ।
পাঁচ মিশালি আচার
এই রকম আচার বাজারে বেশ জনপ্রিয়। এটি তৈরি করতে বেবি কর্ন, গাজর, বিট ইত্যাদি একসাথে মিক্স করা হয়। যাইহোক পাঁচ মিশালি আচার আজকাল সবজায়গায় কমবেশি ভোজন রশিকদের কাছে জনপ্রিয়। তাই এই আচার নিয়ে ব্যবসা শুরু করাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
আমলার আচার
স্বাদ অনুসারে বাজারে বিভিন্ন ধরনের আমলার আচার পাওয়া যায়। আমলাতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ রয়েছে। তাই এটি বাজারে বেশ জনপ্রিয়। যদি তোমার এই আচার নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে থাকে তবে আজকেই শুরু ক্রে দিতে পারো।
কুল
কুল খেতে স্বাদে বেশ মিষ্টি হয়, কখনো হালকা টক ও হয়। তবে কুলের আচার বেশ সুস্বাদু। সাধারণত তেল, লঙ্কা ও মশলা দিয়ে এটি তৈরি করা হয়।
কাঁঠাল
কাঁঠালের আচার বানাতে কাঁঠালের সাথে ভিনেগার ও সরিষা মিক্স করা হয়। এর উৎপাদন প্রক্রিয়াটিও বেশ সহজ। এই আচার দেশ ছেড়ে বিদেশের গন্ডিতেও আজকাল বেশ জনপ্রিয় হচ্ছ। আপনি চাইলে আচার বানিয়ে বিদেশেও এক্সপোর্ট করতে পারেন।
গ্রীন চিলি
আমরা একে লঙ্কার আচার বলে থাকি। এটি সারা ভারতে জনপ্রিয় এবং বাজারে আচারের মধ্যে এর প্রাধান্য বেশ ভালোভাবে লক্ষ্য করা যায়। যাইহোক সব সিজনেই এই আচার ভালো চলে তাই এটি নিয়ে ব্যবসা শুরু করলে লসের সম্ভাবনা আকেবারে নেই বললেই চলে।
রসুন
রসুনের আচার বিশেষ গন্ধের জন্য বিখ্যাত। এর স্বাদ মিষ্টি। দিনের পর দিন এর বাণিজ্যিক বাজার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে অন্ধ্রপ্রদেশে এটি খুব বিখ্যাত।
মাছ
এই আমিষ আচারটি ভারতে বেশ জনপ্রিয়। সাধারণত, ছোট ছোট যে চিংড়ি মাছ পাওয়া যায় তার থেকেই এটি তৈরি করা হয়। ভারতের বাজারে এর খুব চাহিদা রয়েছে। এছাড়া এটি রপ্তানি ও করা হয়।
এছাড়াও বড়ই, তেতুল, আমড়া, জলপাই, আম ইত্যাদি আচাড় বাজারে খুব জনপ্রিয়। তাই এর যেকোন্ একটা নিয়েই আপনি ব্যবসা শুরু করে দিতে পারেন।
পুঁজি
সামান্য পুঁজি দিয়ে শুরু করতে পারেন এ ব্যবসা। মাত্র এক হাজার টাকা মূলধন দিয়ে আচার তৈরির ব্যবসা শুরু করা যায়। আচারের ব্যবসার অন্যতম ভালো দিক হচ্ছে, এতে লোকসান হওয়ার আশঙ্কা নেই বললেই চলে। এসব কারণে এ ব্যবসাটি সম্ভাবনাময়। খেয়াল রাখতে হবে, আচারের স্বাদ যেন ভালো হয়। তাই কোনো প্রশিক্ষকের কাছ থেকে আচার বানানোর কলাকৌশল জেনে এ ব্যবসা শুরু করা ভালো।
আচার ব্যবসা অত্যন্ত লাভজনক একটি ব্যবসা যা খুব সামান্য পুঁজি বিনিয়োগ করেই শুরু করা যায়। তাই আপনি চাইলে পারিবারিকভাবেই ব্যবসাটা শুরু করে খুব তারাতারি নিজেকে উদ্যগতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন।