তোমার ইন্টিরিওর ডিজাইনের ব্যবসা কীভাবে শুরু করবে
মানুষ একদিকে যেমন চায় নিজেকে সুন্দর দেখতে, অন্যদিকে চায় তার বাসস্থান, ভেতরের সাজসজ্জা, অফিস–আদালত, হাসপাতাল, বিদ্যালয় থেকে শুরু করে সব কিছুর ভেতরের ও বাহিরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে। আর এ কাজটাই করতে হয় একজন ইন্টেরিয়র ডিজাইনারকে।
তুমি যে ঘরে বসবাস করছো সে ঘরের দেয়াল, মেঝে, দরজা, জানালা, আসবাব এমনকি পর্দাটাই বা কেমন হবে সে হিসাবটা করে ইন্টেরিয়র ডিজাইনার। এক কথায় বলা চলে, ঘরের দেয়ালের রঙ, মানানসই আসবাবপত্রের ডিজাইন ও রঙ থেকে শুরু করে স্বল্প পরিসরের জায়গাকে কীভাবে বেশি করে ব্যবহার করা যায়, সে বিষয়ে যাবতীয় ডিজাইন ও বাস্তবায়ন করাটাই ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের কাজ।
বর্তমান সময়ে এই ডিজাইন করার চাহিদা ব্যপক বৃদ্ধি পেয়েছে। শহরের পাশাপাশি ছোট শহর বা গ্রামের শৌখিন মানুষেরাও তাই ইন্টেরিওর ডিজাইন করাচ্ছে। সুতরাং, তুমিও একটা ইন্টেরিওর ডিজাইন প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু করিয়ে খুব সহজেই একজন সফল উদ্যক্তা হয়ে যেতে পারো।
কিভাবে শুরু করবে?
প্রতিটি দেশের মত আমাদের দেশেও বেড়ে চলছে দালান কোঠার সংখ্যা। আর এর সাথে সাথেই বেড়ে চলছে ইন্টেরিওর ডিজাইন ব্যবসার চাহিদা। প্রতিটি ব্যবসার ইমারতের জন্যই প্রয়োজন সঠিক ডিজাইন বা নকশা। ইন্টেরিওর ডিজাইন ব্যবসা শুরু করার জন্য তুমি একটি ছোট কোরস বা এর উপরে ডিপ্লোমা কোর্স করে নিতে পারো। কারণ, তোমাকে রং, আলো, বিভিন্ন রকম ডিজাইন সম্পর্কে অত্যন্ত সৃজনশীল হতে হবে। এর পাশাপাশি প্রতিযোগীতা একটু বেশী হওয়ায় সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন পরবে। এই ব্যবসায় তোমার প্রথম ও প্রধান মূল্ধন হলো তোমার পরিকল্পনা ও সৃজনশীলতা।
এবার একইরকম বিষয়ে আগ্রহ আছে এমন কিছু কাছের লোকদের সাথে নিয়ে তুমি তোমার ইনটোরিয়র ব্যবসার যাত্রা শুরু করতে পারো। মনে রাখবে, প্রথমে নিজের ও পরিচিতদের পারলে কোন রকম লাভ ছাড়াই কাজ করে দেবে এতে করে পরবর্তীতে তারাই তোমাকে আরও কাজ পাইয়ে দিতে সাহাযয় করতে পারে।
এছাড়াও অনলাইনে ওয়েবসাইট খুলে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমি তোমার ব্যবসার প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে নতুন গ্রাহক আকৃষ্ট করতে পারো।
অফিস বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কেমন হবে?
তুমি যদি তোমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য অফিস করতে চাও তবে সেই অফিসটার ইন্টেরিওর যেন তোমার সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এতে করে কাস্টমার সহজেই আকৃষ্ট হতে পারে।
কর্মীর দরকার আছে কি না?
একটি ইন্টেরিয়র ডিজাইনকে বাস্তবে রূপায়িত করতে হলে বিভিন্ন কাজে বিশেষজ্ঞ বেশ কিছু সংখ্যক মিস্ত্রিকে নিয়োগ করতে হয়। প্লাম্বিং, ইলেকট্রিশিয়ান, ছুতোর ইত্যাদি নানা ধরণের কর্মীর সহায়তাতেই আপনি ডিজাইনটিকে বাস্তবায়িত করতে পারবে।
এছাড়াও কয়েকজন ডিজাইনার মিলে যদি কোন প্রজেক্টকে এগিয়ে নিতে যাও তবে তোমার মেধা ও শ্রম কম ব্যয় হবে। তাই চাইলে কয়েক জন মিলে ব্যবসাটা শুরু করতে পারো। অন্যথায় তুমি নিজেও ব্যবসাটি শুরু করতে পারো।
তোমার ক্রেতা কারা হবে?
ইন্টেরিয়র ডিজাইনিংয়ের ব্যবসা একটি বিরাট ক্ষেত্র। তার মধ্যে তুমি কাদের সঙ্গে কাজ করতে চাও সেটি নির্বাচন করা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
এমন গ্রাহক রয়েছেন যারা টাকা খরচের বিষয়ে ভাবেন না, তাদের এক মাত্র লক্ষ্য উন্নতমানের অন্দরসজ্জা, আবার অন্যদিকে এমন গ্রাহক রয়েছেন যাদের কাছে বাজেট একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাদের জন্য একটি নির্দিষ্ট দামের মধ্যে কাজ করে দেওয়া জরুরি।
যাদের অঢেল বাজেট সেইরকম গ্রাহকের সংখ্যা কম কিন্তু লাভ বেশি, অন্যদিকে কম বাজেটে কাজ করতে চান এরকম গ্রাহক সংখ্যা অনেক বেশি। তুমি কাদের জন্য প্রাথমিকভাবে কাজ করতে চাইছও তার ওপর নির্ভর করবে অনেকটাই। তোমার মার্কেটিং থেকে শুরু করে সবটাই তার ওপর নির্ভরশীল।
পাশাপাশিই ঠিক করে নিতে হবে তুমি কোনও নির্দিষ্ট একটি ক্ষেত্রে কাজ করতে চাও কি না যেমন মডিউলার কিচেনের কাজ বা আধুনিক বাথরুমের ফিটিংয়ের কাজ। একেকটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে কাজের জন্য বিশেষ ইন্টেরিয়র ডিজাইন কোর্সও করায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
এছাড়াও ইন্টেরিয়র ডিজাইনিংয়ের ব্যবসার আরও একটি কাজের জায়গা হল সিনেমা বা সিরিয়ালের সেট তৈরি। এখানেও তৈরি হচ্ছে অনেক কাজের সুযোগ।
প্রয়োজনীয় মূলধন কেমন হবে?
আপনার ব্যবসার পরিকল্পনা ও আয়তনের ওপর নির্ভর করবে বিনিয়োগের পরিমাণ। অল্প পুঁজিতে নিজের বাড়ি থেকেও ইন্টেরিয়র ডিজাইনিংয়ের ব্যবসা শুরু করা সম্ভব। না হলে একটি অফিস স্পেস ভাড়া করতে হবে, সেই খরচ নির্ভর করবে এলাকার উপর। বাড়ির গ্যারাজ বা দোকানঘর ভাড়া করেও শুরু করতে পারেন ব্যবসা।
নমুনা মডেল তৈরি করে রাখতে পারেন অফিসে। মার্কেটিং এবং প্রচারণার জন্যও কিছু বিনিয়োগ প্রয়োজন। এছাড়া রয়েছে ইলেকট্রিসিটি ইত্যাদির খরচ যা প্রতি মাসে দিতে হবে। কর্মী নিয়োগ করলে থাকবে তাদের মাসিক বেতনের খরচ।
বিভিন্ন সংস্থাই নিয়মিত ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনের কাজ করায়, ভাল সম্পর্ক তৈরি হলে নিয়মিত কাজ পাওয়া যায়। বড় সংস্থা বা সরকারি অফিস টেন্ডার ডেকে ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের কাজ দেয়, তাই এবিষয়ও খোঁজ রাখা প্রয়োজন।
মার্কেটিং ও প্রচারণা কিভাবে হবে?
অন্য যেকোনও ছোট ব্যবসার মতোই ইন্টেরিয়র ডিজাইনিংয়ের ব্যবসাতেও মার্কেটিং ও প্রচারণা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মার্কেটিংয়েক জন্য ছবিসহ কিছু প্রচারপত্র ছাপিয়ে নিতে পারেন, তৈরি করতে পারেন নিজের কাজের পোর্টফোলিও। ক্রেতাকে সেই নমুনা দেখালে তিনি আপনার কাজ সম্পর্কে ধারণা করতে পারবেন। ভাল মানের কাগজে বড় করে ছবির প্রিন্ট নিতে হবে।
প্রচার চালাতে পারেন সোশ্যাল মিডিয়া সাইটের মাধ্যমেও। কাজ ভাল করলে লোক মুখেও প্রচার হবে, বিশেষতঃ আপনি যদি কম খরচের কাজ করতে চান।
এছাড়া নিয়মিত ব্যবসা পাওয়ার একটি উপায় হল বিভিন্ন প্রমোটার, বিল্ডার ও রিয়্যাল এস্টেট কোম্পানির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন। তাদের তৈরি বাড়ি, আবাসন বা অফিসে কাজ পেতে পারেন নিয়মিত।
তোমার সেবার মূল্য নির্ধারণ কতটা জরুরী ও কিভাবে হবে?
ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং ব্যবসায় তোমার সেবার দাম ভুল নির্ধারণের জন্য তোমার ব্যবসা থেকে আয় কম হতে পারে অথবা তোমার ক্রেতারা অন্য ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের কাছে চলে যেতে পারে। তাই তোমার কাজের মূল্য কীভাবে নির্ধারণ করবেন তা জেনে নেওয়াটা জরুরি।
সাধারণভাবে কয়েকটি ভিন্ন পদ্ধতিতে ইন্টেরিয়র ডিজাইনাররা তাঁর পরিষেবার মূল্য নির্ধারণ করে থাকেন।
১. প্রতি বর্গফুটের হিসেবে
ভারতের বড় শহরগুলো যেমন কলকাতা, দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, চেন্নাইতে একজন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার সাধারণত প্রচি বর্গফুটে ৪০-৪০০ টাকা অবধি নিয়ে থাকেন।
ইন্টেরিয়র ডিজাইন খরচ নির্ভর করে বাড়ি বা অফিসটি কি রকম তার ওপর। ১০০০ বর্গফুটের একটি ২ বেডরুমের ফ্ল্যাটে মোট ইন্টেরিয়র ডিজাইন খরচ দাঁড়াতে পারে ৪ লক্ষ থেকে ৬ লক্ষ টাকা। যদি একদম ফাঁকা ফ্ল্যাটকে সাজাতে হয় সেক্ষেত্রে ৭ থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চাওয়া যেতে পারে।
মড্যুলার কিচেন, ক্যাবিনেট. দেওয়াল আলমারি, ফ্লোরিং, সিলিং ইত্যাদির খরচ যদি আপনিই করেন সেক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে ২,০০০- ৪,০০০ টাকা পর্যন্ত নিতে পারেন।
আরো পড়ুন:ইন্টেরিয়র ডিজাইনিংয়ের ব্যবসা শুরু করতে চান? জেনে নিন ৯টি প্রাথমিক ধাপ
২. সামগ্রিক খরচের ওপর শতকরা হারে
ইন্টেরিয়র ডিজাইন খরচ হিসেব করার আরও একটি চালু পদ্ধতি হল সামগ্রিক খরচের ওপর একটি নির্দিষ্ট শতকরা হরে টাকা নেওয়া। এই পদ্ধতিতে ডিজাইনার ইন্টেরিয়র ডিজাইনে ব্যবহৃত যাবতীয় পণ্য ও পরিষেবার দাম যোগ করেন। এর পর নিজের পারিশ্রমিক বাবদ এই মোট ইন্টেরিয়র ডিজাইন খরচের ওপর সাধারণভাবে ৬% থেকে ১৫% অবধি নিয়ে থাকেন। ডিজাইনারের পারদর্শীতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে একজন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার ২০% পারিশ্রমিকও দাবি করতে পারেন।
৩. ব্যবহৃত সামগ্রীর ওপর মার্জিন রেখে
এই পদ্ধতিতে ডিজাইনার ডিজাইনে ব্যবহৃত যাবতীয় পণ্যের ওপর একটি লাভের মার্জিন রাখেন। যেমন একটি আলমারি কিনতে খরচ হল ২০,০০০ টাকা। আপনি তার ওপর ২ হাজার টাকার মার্জিন রেখে মোট নিলেন ২২ হাজার টাকা।
বর্তমান সময়ে এই ব্যবসাটি অত্যন্ত বেশী লাভজনক ও এর ভবিষ্যৎ ও রয়েছে। তাই তুমি চাইলে সহজেই ব্যবসাটি শুরু করে সফল উদ্যক্তা বনে যেতে পারো।