অনলাইন পেট শপ কিভাবে শুরু করবেন?
আমাদের দেশে পোষ্যকে নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করাটা এতো দিন ঠাট্টার বিষয় ছিল। কুকুর পোষা হতো শুধুই সামাজিক প্রতিষ্ঠা প্রদর্শন করার জন্য। আর বেড়াল তো দেখলেই মেরে তাড়ানো ছিল রেওয়াজ। ছিল বলছি বলে ভাববেন না এখন এসব অতীত, সারা দেশ পুরোটাই পশুপ্রেম। তা নয়, এখনো রাস্তার ধারে কুকুরকে বিস্কিট খাওয়ালে বাঁকা মন্তব্য শুনতে হয় ” মানুষকে খাওয়ালে কাজের কাজ হবে ”। কিন্তু সত্যিই কি পশুপ্রেম বা পোষ্যপ্রেম আমাদের কম বিদেশিদের থেকে? যতই আধুনিকতার দোষ ধরিনা কেন, ভালো পরিবর্তন যে সমাজে এসেছে তা অনস্বীকার্য। মিলেনিয়াল বা তরুণ প্রজন্ম একাকিত্ব থেকেই হোক বা ভালোবেসেই হোক অবলা জন্তুগুলোকে নিজের প্রথম সন্তানের থেকে কম ভালোবাসে না আর তাই নিজে ডাল ভাত খেলেও সারমেয় শিশুর জন্য আসে চিবোনোর জন্য ক্যালসিয়ামের হাড়, বেড়ালের জন্য ওয়েট ফুড ইত্যাদি। আর এখানেই আসে অনলাইন পেট শপের প্রয়োজনীয়তা। কারণ অধিকাংশ পশু প্রেমী তরুণ প্রজন্মের আর তারা তাদের ব্যস্ত জীবনে কেনাকাটা অনলাইনেই সারতে অভ্যস্ত।
ব্যবসা শুরু করার আগে কি মনে রাখতে হবে
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করে ফেলুন। ব্যবসার একটি প্ল্যান বা ছক কষে ফেলুন। প্রথমে ভাবুন কেন আপনি এই নির্দিষ্ট ব্যবসা টাই করতে চাইছেন। তারপর ভাবুন কিভাবে আপনি আপনার ব্যবসার কথা জনসাধারণকে জানাবেন? মার্কেটিং বা বিজ্ঞাপনে কিরকম খরচ করতে চান? আপনার সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী কারা হতে পারে। আপনার কর্মচারী রাখার প্রয়োজন আছে কিনা । কতটা বিনিয়োগ করতে হবে আর সেই মূলধন কিভাবে জোগাড় করবেন ইত্যাদি।
গবেষণা করে নিন আপনি যেটুকু ব্যাপ্তিতে আপনার ব্যবসা ছড়াতে চান সেখানে পোষ্যদের জিনিসপত্রের কি রকম চাহিদা। কারা কারা এই জিনিসগুলি উৎপাদন ও সরবরাহ করে। তাদের বিক্রয় মূল্য কিরকম ইত্যাদি।
কর সংক্রান্ত নথিভুক্তিকরণ ও অনুমতি পত্র প্রাপ্তির কাজ সেরে রাখতে হবে ব্যবসা শুরুর করার আগেই।
কি কি জিনিস বিক্রি করবেন আপনার অনলাইন দোকানে
পোষ্যদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস মানুষদের থেকে কিছু কম নয়। শ্রেণী বিভাগে এই কটি বস্তু বিশেষভাবে বিক্রি হয়:
- বিছানা, চাদর, তোয়ালে ইত্যাদি
- খেলনা
- সাবান, শ্যাম্পু, পোকা মারার ওষুধ, কান পরিষ্কার করার ওষুধ ইত্যাদি
- কলার,লিশ ইত্যাদি
- ব্রাশ,ডিওড্রেন্ট, নেল কাটার
- ভিটামিন আর অন্যান্য সাপ্লিমেন্ট
- দাঁতের যত্নের জিনিস
- ভেজা ও শুকনো খাবার, বিস্কিট, ট্রিট, চেবানোর হাড়
- জল ও খাবারের বাসন
- শীতের ও বর্ষার পোশাক
- খাঁচা
- ট্যাব্লেটস
- চিরুনি, ব্রাশ
এরপর কি কি পদক্ষেপ নেবেন
কি কি জিনিস আপনি আপনার স্টোরে রাখবেন সেটা ঠিক করে ফেলার পরের পদক্ষেপটি হলো একাধিক সরবরাহকারী সাপ্লায়ার ঠিক করা যারা যারা সঠিক গুণগত মানের জিনিস আপনাকে ঠিকঠাক দামে দেবে।
এবার আপনার ব্যবসাটিকে অনলাইন উপস্থিতি দিতে সবার আগে একটি ডোমেন নাম বাছুন ও সেটিকে নথিভুক্ত করুন। তাহলে আপনার ব্যবসার নামটি আর কেউ নিতে পারবেনা। পোষ্য বিষয়ক কোনো নাম রাখতে পারেন বা যদি কোনো নির্দিষ্ট জিনিস বিক্রি করেন সেই রকম নাম ও ভাবতে পারেন। একটু সৃষ্টিশীল হতে হবে আপনাকে এই বিষয়।
এবার ওয়েবসাইট আর মোবাইল ফোনের এপ্লিকেশান তৈরী করুন। সাহায্য নিতে পারেন ওয়েবসাইট ডিজাইনার বা সফ্টওয়ার পরিষেবার। যথেষ্ট যত্নবান হন এই দুটি জিনিসের প্রতি কারণ এর দ্বারাই আপনার ব্যবসা আসবে। ওয়েবসাইট আর এপ্লিকেশান দুটিই যেন হয় সহজ আর ইউসার ফ্রেন্ডলি।
একটি সার্ভার হোস্ট পরিষেবায় বিনিয়োগ করুন যা আপনার ওয়েবসাইট টির ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবে খেয়াল রাখবে।
একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কাজ হচ্ছে বিস্বস্ত পেমেন্ট গেটওয়েগুলির সাথে আপনার অনলাইন দোকানটিকে সুসংহত করা যাতে করে আপনার ক্রেতারা আপনার দোকান থেকে কেনা জিনিসের দাম মেটাতে পারে নিরাপদভাবে।
অনলাইন উপস্থিতি সম্বন্ধে খেয়াল রাখুন। বিভিন্ন ই কমার্স সাইটের সাথে যুক্ত হন। সোশ্যাল মিডিয়ার মঞ্চগুলি ব্যবহার করে আপনার দোকানের কথা ছড়িয়ে দিন ইন্টারনেটের বিভিন্ন প্রান্তে। সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশান বা এস ই ও এবং ই কমার্স সাইটগুলিতে বিজ্ঞাপন দিলে আপনার সংস্থার পরিচিতি বাড়তে বাধ্য।
বছরের বিভিন্ন সময় গুলিতে অন্যান্য অনলাইন সংস্থার মতো আপনিও বিশেষ বিশেষ ছাড় দেয়ার কথা ভাবুন। এতে দুরকম লাভ হবে। এক, আকর্ষণীয় ছাড় দেখে অনেক ক্রেতা আকৃষ্ট হবে আর বিক্রি বাড়ার সাথে সাথে পরিচিতিও বাড়বে। দুই, আপনার পণ্য গুলি তাজা আর নতুন থাকবে। পুরোনো স্টক পড়ে থাকবে না।
বিতরণ পরিষেবা যদি ভালো না হয় তাহলে আপনার পসার একদমই জমবে না। তাই একটি ভালো শিপিং আর ডেলিভারি পরিষেবার সাথে যুক্ত হওয়া টা খুব জরুরি যারা আপনার পণ্য গুলি দায়িত্ব সহকারে পৌঁছে দেবে ক্রেতার কাছে। যদি দেশের বাইরে পণ্য পরিষেবা দিতে চান খেয়াল রাখতে হবে বাড়তি খরচা ডিউটি ফী বাবদ।
বিক্রি পরবর্তী পরিষেবার কথা ভুলে যাবেন না। আপনার পণ্যের মূল্য আপনার একাউন্টে ঢোকার পরই যদি আপনি ক্রেতার স্বার্থের কথা ভুলে যান, তাহলে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে পড়তে বিলুপ্ত হয়ে যাবেন। ঠিক সময়ে জিনিস ক্রেতার হাতে অর্পণ করা থেকে খারাপ বা নষ্ট হয়ে যাওয়া জিনিস বদলি বা নির্দিষ্ট সময় সীমার ভেতর জিনিস ফেরত দিয়ে মূল্য ফেরত পাবার সুবিধে অবশ্যই রাখবেন আপনার ব্যবসার নীতিমালায়। আর এই সংক্রান্ত নিয়মগুলি স্বচ্ছ ভাষায় তুলে ধরবেন আপনার অনলাইন উপস্থিতির প্রত্যেকটি মঞ্চে।
মনে রাখতে হবে শেষ কটি কথা
একটি সুগঠিত অনলাইন পেট স্টোর তৈরী করতে অনেক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। তার জন্য লাগবে লোকবল। একার কাজ নয় এটি। পেশাদার একটি দল কে নিয়োগ করবেন আপনার কাজে।
একবারই অর্থ আর শ্রমসাধ্য প্রক্রিয়ার দরকার পড়বে; অনলাইন পেট স্টোরটি তৈরী করার সময়। একবার তৈরী হয়ে গেলে শুধু প্রয়োজন হবে রক্ষনাবেক্ষন ও প্রচারের।
একটি ইঁট কাঠের পেট স্টোর থেকে অনলাইন পেট স্টোরের অনেক বেশি সুবিধে। আপনার খরচ কম পড়বে, অনেক বেশি জায়গায় আপনার ব্যবসা ছড়িয়ে পড়বে, পরিচিতি বাড়বে বেশি, তাছাড়াও পণ্য সমূহ নিয়ন্ত্রণ করাও সুবিধে।
আপনার প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে নিজেকে আলাদা কিভাবে করবেন সেটা ঠিক করতে হবে আপনাকে। হয়তো আপনি পোষ্যদের কোনো একটি বা বেশি নির্দিষ্ট জিনিস নিয়ে নিজের বিশেষত্ব গড়ে তুললেন। কিংবা হয়তো আপনি নিজেই উৎপাদন করলেন আপনার পণ্য গুলি। সেক্ষেত্রে আপনি কোনো একটি বিশেষ শ্রেণীর পোষ্যকে নিয়ে ভাবতে পারেন। যেমন সারমেয়দের সবরকম প্রয়োজনীয় জিনিস আপনি উৎপাদন ও সরবরাহ করলে আপনি এই নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে তৈরী করে তুলতে পারবেন আপনার পরিচিতি সহজেই।
পেট স্টোর ব্যবসা কতটা লাভজনক?
পেট স্টোর ব্যবসার কোনো নির্দিষ্ট লাভ এর পরিমান বাঁধা ধরা নেই। মাসিক পণ্য বিক্রির ওপর আয় সম্পূর্ণ নির্ভর করে। কিন্তু বর্তমানের রীতিনীতি বলছে মানুষ এখন প্রচুর পরিমানে অর্থ ব্যয় করছে তাদের পোষ্যের ওপর তাই বিদেশ থেকে আমদানি করা বেড়ালের ভেজা খাবার হোক বা খরগোশের খাঁচা; সবকিছুরই প্রচুর চাহিদা আছে এখন বাজারে।
একটি খুব সুখের পরিবর্তন হচ্ছে পৃথিবী জুড়ে। মানুষ, কুকুর বেড়াল কেনার থেকে দত্তক নিতে চাইছে বেশি। রাস্তা থেকে তুলে আনছে অসহায় ক্ষুধার্থ মূক জীবগুলিকে। তাদের সব দায়িত্ব, ভ্যাকসিনেশান থেকে খেলনা, খাবার থেকে বিছানা, পূরণ করছে ভালোবেসে। আগের প্রজন্মর থেকে বেশি যত্নবান হয়েছে তারা তাদের পোষ্যদের প্রতি। বিশ্বজোড়া অতিমারীর প্রকোপে মানুষ গৃহবন্দী হতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু খালি হয়ে যাচ্ছে একের পর এক পেট শেল্টার গুলি দেশে বিদেশে। না ইউথানাসিয়া নয় মানবতার কারণে। নতুন প্রজন্ম ঘরে নিয়ে আসছে তাদের, নিজেদের সহচর করে, সন্তান করে।
তাই অতি অবশ্যই যত্নবান হবেন আপনার বিক্রি বা উৎপাদন করা জিনিস গুলির প্রতি। কুকুর, বেড়াল, মাছ, কারুর কোনো জিনিসে যেন কোনো ক্ষতি না হয়।