কীভাবে ঘরে বসে তুমি নিজের প্রসাধনী ব্যবসা শুরু করবে
বর্তমান সময়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির আধুনিকায়নের সাথে সাথে মানুষের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। তারা তাদের জীবনধারণের জন্য বেছে নিচ্ছে বিভিন্ন ধরনের জীবিকা। যার মধ্যে অন্যতম জীবিকা হলো প্রসাধনীর ব্যবসা। আজকালকার বাজারে প্রসাধনী ব্যবসার ব্যপক একটা চাহিদা রয়েছে। আমাদের দেশে সব জায়গাতেই কমবেশি এই ব্যবসার প্রচলন রয়েছে। এটি এমন একটি ব্যবসা যার পন্যগুলোর চাহিদা সব সময় বেশি বিশেষেত মেয়েদের কাছে। দিন দিন প্রসাধনীর চাহিদাগুলো বেড়ে চলেছে যার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিভিন্ন রকম বিউটি প্রোডাক্ট এর সংখ্যা। তবে প্রসাধনীগুলোর দোকান সব জায়গায় থাকলেও সকল ধরনের প্রশাধনী সব জায়গায় কিন্তু পাওয়া যায় না। আর এই ব্যাবসাটি খুব অল্প পুঁজিতেই করা যায়। এবং এটি এমন একটি ব্যাবসা যার লাভজনক দিক অন্যন্য ব্যাবসার তুলোনায় খুব ভালো । তাই তুমি চাইলে নিজের বাড়িতেই এই প্রসাধনীর ব্যবসা শুরু করে একজন সাফল্ উদ্যোক্তা হতে পারে।
এই ব্যবসাটি কিভাবে শুরু করবে?
অল্প কিছু পুঁজি নিয়ে ব্যবসাটি শুরু করতে পারো। এক্ষেত্রে দরকার হবে ধৈর্য্য। এছাড়া তুমি যে এলাকায় ব্যবসাটি শুরু করবে সেখানে দেখতে হবে কোন পণ্যের চাহিদা খুব বেশি। বর্তমানে মহিলাদের সাজ সামগ্রী যেমন ভালো ব্র্যান্ডের স্নো, পাউডার ,ফাউন্ডেশন, লিপস্টিক, মেকাপ,ব্লাক পিল ফেস মাস্ক, কাউন্সিলার, হাইলাইটস কাজল এগুলোর চাহিদা খুব বেশি। তাই এগুলো দিয়েই প্রথম প্রথম শুরু করা যেতে পারে। পুঁজি বেশি হলে এগুলোর পাশাপাশি সাজসজ্যা বাড়াতে আরও প্রসাধনী রাখা যেতে পারে।
যাই রাখো না কেনো গ্রাহকের নিকট পণ্যগুলো চাহিদার উপর ভিত্তি করে দোকানে প্রসাধনীর জিনিস রাখা উচিত। এতে করে ব্যবসা ভালো চলবে। এছাড়া আরও দেখতে হবে তুমি যেখানে ব্যবসাটি শুরু করবে তার আশেপাশে কোন প্রসাধনীর ব্যবসা আছে কিনা। যদি প্রসাধনীর ব্যবস্থা থাকে তাহলে তার দুর্বল দিকগুলো দিকে তোমাকে লক্ষ রাখতে হবে। এছাড়া দেশি–বিদেশি প্রডাক্ট এর চাহিদার ওপর ভিত্তি করে তোমাকে পণ্য রাখতে হবে। এতে করে তোমার দোকান যেমন ভালো সার্ভিস দেবে তেমনি তুমি এ দোকান কে টিকিয়ে রাখতে পারবে। এছাড়া দোকানের জন্য উপযুক্ত জায়গা নির্বাচন করা জরুরি। সেক্ষেত্রে বাড়িতে প্রসাধনীর ব্যবসা করার জন্য যে স্থান্টি নির্বাচন করবে তা যেনো তোমার বাড়ির সদরের জায়গাটি সাথে হয়। এতে করে লোকজনের দোকানটি যেমন চোখে পড়বে তেমনি দোকানের ক্রেতা বেশি হবে। যা ব্যবসা এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক।
ডেকরেশন কেমন হবে?
প্রসাধনী ব্যবসা বাড়িতে করার জন্য যদি আলাদা রুম হয় তাহলে ক্রেতা বিক্রেতাদের জন্য সুবিধা হয়। ডেকরেশন এর জন্য ঘরের এক কোনায় পণ্য রাখার জন্য সেল্ফ রাখতে হবে। সেল্ফটি অবশ্যই হতে হবে তাক বিশিষ্ট। এছাড়া একটি হাফ সেল্ফ রাখতে হবে। এটি যেমন পণ্য গোছাতে সাহায্য করবে তেমনি টেবিলের ন্যায় কাজ করবে। এক্ষেত্রে প্রত্যেক তাকে একই রকমের পণ্য গুলো একসাথে রাখতে হবে। এছাড়া ছোট জাতীয় পণ্য গুলোর জন্য সেল্ফ এ রাখতে হবে আলাদা স্বচ্ছ কিছু বক্স। এতে করে পণ্য যেমন সুরক্ষিত থাকবে তেমনি ভাবে প্রয়োজনীয় পণ্য কম সময়ে হাতের নাগালেই পাওয়া যাবে। এছাড়া মহিলাদের জরুরী প্রয়োজনীয় সামগ্রীও রাখতে হবে।
বর্তমানে যেহেতু পার্লার এর জিনিসপত্রের এর চাহিদা বেশি তাই পুঁজি যদি বেশি হয় তাহলে ডেকোরেশন এর সময় বিভিন্ন ধরনের ফেসিয়াল সামগ্রী রাখতে হবে। এছাড়া শিশুদের জন্য দোকানের একপাশে স্কুল ব্যাগ হেয়ার ক্লিপ এমনকি কালার পেন্সিল, খাতা, কলমও রাখা যেতে পারে। পুঁজি বেশি হলে একই সামগ্রী দেশি ও বিদেশি প্রডাক্ট রাখলে ব্যবসা ভালো চলবে । মোটকথা ক্রেতাদের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে সামগ্রী রাখা উচিত।
দোকানের আয়তন কেমন হওয়া উচিত?
সাধারণত পুঁজির ওপর নির্ভর করবে দোকানের আয়তন। এক্ষেত্রে পুঁজি কম হলে দোকানের আয়তন কম হবে আর পুঁজি বেশি হলে দোকানের আয়তন বেশি হবে। সেক্ষেত্রে ভালো জায়গা নির্বাচন করা খুবই জরুরী।
শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা দরকার কিনা?
এই ব্যবসার জন্য কোন শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন নেই। শুধু তোমার ব্যাবসার লাভ লোকসান এর হিসাবটা বুঝতে পারলেই চলবে । তাছাড়া ব্যবসায়ের মূল বিষয় হলো সততা ও ভালো ব্যবহার যা ক্রেতাদের সাথে বিক্রেতার মানে তোমার ভালো সম্পর্কের কারন হবে। এছাড়া আমাদের দেশের অনেক শিক্ষিত ব্যক্তিরা এই পেশাকে তাদের জীবিকা হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
প্রাথমিক প্রচার প্রচারণা ও ক্রেতা সংগ্রহ কি করে হবে?
সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে গেলে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে ব্যবসাটির যাত্রা শুরু করাও । সেই সাথে ক্রেতাদের কয়েক মাস পর্যন্ত বিশেষ সুবিধা দাও যেন তারা আকৃষ্ট হয়। এতে করে তোমার দোকানের প্রচার প্রচারণা ভালো হবে। তোমার দোকানে প্রথম একশ জন কে নিয়ে শুরু করতে পারো বিশেষ কৃতজ্ঞতা স্বারকের ব্যবস্থা এতে করে তোমার দোকানের প্রচার প্রচারণা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তোমার ব্যবসায়ের একটা আইডি খুলে প্রচার প্রচারণা করতে পারো। অন্য দিকে তোমার দোকানের একটি ফেসবুক পেজ খুলে তোমার দোকানে থাকা জিনিসগুলো পোস্ট করে দিতে পারো এতে করে অনেকে তোমার দোকান সম্পর্কে জানতে পারবে এবং তোমার দোকান এর প্রচারণাও হয়ে যাবে।
প্রসাধনী সামগ্রীগুলো কোথা থেকে ক্রয় করা উচিত?
সাধারণত ব্যবসায়ের দিক লক্ষ্য রেখে প্রসাধনী সামগ্রী ক্রয় করা উচিত। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের খুচরা বিক্রেতাদের কাছে থেকে ও পাইকারি বাজার থেকে কিছু পণ্য ক্রয় করা যায়। পাইকারি দোকান থেকে ক্রয় করলে স্বল্পমূল্যের অধিক পণ্য ক্রয় করা যাবে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের কোম্পানির লোকেদের সাথে যোগাযোগ করেও প্রসাধনীর সামগ্রী কেনা যায়। প্রয়োজনে ভালো মানের প্রোডাক্টগুলো তাদের থেকে নেওয়া যেতে পারে। এতে করে ব্যবসায়ের যেমন বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করা যাবে তেমনি ব্যবসা পরিচালনা করতে সহজ হবে। এছাড়া যারা এ ব্যবসা করে থাকে তাদের থেকে প্রসাধনী ক্রয়ের ব্যাপারে পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
আজকাল আমাজানের মতো বড় অনলাইন শপ গুলোতেও প্রসাধনীর সামগ্রী পাওয়া যায়। তাই তুমি সেখান থেকেও পছন্দসই প্রসাধনী ক্রয় করতে পারো। অনলাইনে প্রসাধনী ক্রয় করার বড় সুবিধা হলো ওরা তোমার ঘরের দরজায় পণ্য দিয়ে যাবে। আর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম অফার তো আছেই।
কর্মী সংগ্রহের দরকার আছে কিনা?
ছোট আকারের এই ব্যবসার ক্ষেত্রে কোনো কর্মী না রেখে নিজেই এই ব্যবসাটি করা যায়। আর যদি ব্যবসাটি বড় আকারের হয় সে ক্ষেত্রে কর্মী সংগ্রহের দরকার হবে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই এই ব্যাবসা সম্পর্কে ভালো জানে এমন বিশ্বস্ত কাউকে কর্মী নিয়োগ করতে হবে।
সম্ভাব্য পুঁজি :
ব্যবসায় পুঁজি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদি তোমার কাছে খুবই অল্প পয়সা থাকে তাহলে তোমাকে অবশ্যই পাইকারি বাজার থেকে স্বল্প মানের প্রসাধনী কিনতে হবে । সেখানে তুমি সল্প দামের ভালো প্রডাক্ট কিনতে পারবে। যেগুলোর চাহিদা গ্রাহকদের কাছে খুবই বেশি তোমাকে সেইদিক লক্ষ্য রেখেই প্রসাধনীর জিনিস কিনতে হবে। বিনিয়োগ এর ক্ষেত্রে শুধু প্রসাধনীর জন্য প্রথম ধাপে অবশ্যই ১৫–২০ টাকা বিনিয়োগ করতেই হবে। দোকান ডেকোরেশন মটামুটিভাবে করলে আরও ১৫ থেকে ২০ হাজার টকা খরচা হবে। আর কর্মী রাখলে তার মাসিক বেতন। সে যাইহোক, বিনিয়োগ এর বিষয়টি তুমি ব্যবসাটি কেমন পরিসরে শুরু করতে চাও তার ওপর নির্ভর করবে।
প্রসাধনী ব্যবসার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য আয় কেমন?
প্রথমেই বলে রাখি এটি একটি নির্ভেজাল এবং সহজলভ্য ব্যবসা। মোটামুটি একবার ব্যবসাটি দাঁড় করাতে পারলেই তোমাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হবে না। এছাড়া ইন্ডিয়াতে আজকাল ব্যবসাটি প্রচুর বাড়ছে। প্রসাধনীর ব্যবসায় সর্বনিম্ন দেশী বিদেশী পণ্যভেদে তুমি ১৫ থেকে ৪৫ শতাংশ আয় করতে পারো। এছাড়া তুমি যদি পার্লার ইন্সট্রুমেন্ট বাড়িতে রাখো তাহলে তোমার আয় হতে পারে ২০ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত।
এভাবে সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে যাচাই–বাছাই এর মাধ্যমে তুমি তোমার বাড়িতে প্রসাধনী ব্যবসা চালু করতে পারো। এ ব্যবসায় বিভিন্ন কসমেটিক্স এর যেমন চাহিদা রয়েছে তেমনি এটি লাভজনকও। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে তোমার ব্যবসায় প্রথম প্রথম ক্রেতা টানতে অনেক পথ অবলম্বন করতে হবে। তবে সেসব কৌশলের সবটাই যেন হয় তোমার ব্যবসায়ের বিশ্বাসেরর ভিত্তি স্বরূপ। এভাবেই তুমি একজন সফল ব্যবসায়ীক হতে পারবে।