আমি কিভাবে একটি সৌর প্যনেল বিক্রির ব্যবসা শুরু করবো?
আমদের ভারতে বর্তমান সময়ে সৌর প্যানেলের ব্যবসা খুব সময়োপযোগী এবং লাভজনক একটি ব্যবসা। প্রকৃতপক্ষে, সৌর শক্তি ব্যবসায়ের বাজারে আমাদের ভারত দেশ সম্প্রতি শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে এবং এটি ভবিষ্যতেও থাকবে। এজন্য ব্যবসাটি শুরু করলে এটি তার উদ্যগক্তাকে কয়েকগুন বেশী মুনাফা দেবে।
কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার সৌর ব্যবসার উপর প্রকল্প চালু করেছেন এবং ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কৃষিতে সেচ ব্যবস্থা সহজীকরণের জন্য সৌর সেচ পাম্প প্রকল্প শুরু হয়েছে। ফলস্বরূপ, বিভিন্ন উদ্যোক্তারা ব্যবসাটির প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরেছেন এবং সৌরশক্তির উপর তাদের ব্যবসায়িক উদ্যোগ আরও ভালোভাবে শুরু করছেন। এই ব্যবসাটি একটি দীর্ঘ মেয়াদী এবং খুব লাভজনক একটি ব্যবসা হতে চলেছে তাই তুমি চাইলে ব্যবসাটি শুরু করে খুব সহজেই একজন সফল উদ্যক্তা বনে যেতে পারো।
কিভাবে শুরু করবে?
সোলার প্যনেল বিক্রির ব্যবসাটি অত্যন্ত লাভজনক। একেক কোম্পানি একেকভাবে এই ব্যবসাটির জন্য উদ্যক্তাকে সুযোগ দিয়ে থাকে। কম্পানি ভেদে উদ্যক্তা হতে তুমি ৫ টি ক্যাটাগরিতে ব্যবসাটি শুরু করতে পারো। কোম্পানির ফ্র্যাঞ্চাইজি নিতে পারো, এসোসিয়েট হতে পারো, সিস্টেম ইন্টিগ্রেটর মানে তুমি নিজেই সোলার প্যানেল ইন্সটল করার কাজ করতে পারো, সোলার প্যানেলের ডিলারশিপ বা এজেন্ট হিসেবেও ব্যবসাটি করতে পারো।
এছাড়াও ছোট ছোট সোলার পণ্য নিয়ে তুমি নিজেই একটি স্টোর সাজিয়ে ছোট পরিসরে ব্যবসা শুরু করতে পারো। কিন্তু এ ব্যবসায় যেহেতু ভালো আয় রয়েছে এবং এর সম্ভাবনাও উজ্জ্বল তবে কেনো তুমি আরেকটু বড় করে শুরু করার কথা ভাবছো না। যাইহোক, সোলার ব্যবসায় তেমন কোন লসের ভয় নেই। তাই নিশ্চিন্ত মনে এই ব্যবসায় পুঁজি বিনিয়োগ করা যেতে পারে।
কিভাবে ফ্র্যাঞ্চাইজি হবে?
আজকাল সোলার কোম্পানিগুলো ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে ব্যবসায়িকদের সোলার প্যানেলের ব্যবসা করার অনুমোদন দিয়ে থাকে। কোম্পানি ভেদে তোমাকে ফ্র্যাঞ্চাইজি হতে হলে তোমাকে কিছুটাকা ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি হিসেবে কম্পানিকে দিতে হবে। তুমি যদি শহরে ফ্র্যাঞ্চাইজি হতে চাও তবে তোমাকে ৩০ হাজার রুপি পুঁজি বিনিয়োগ করতে হবে। টি আর থ্রি এবং টি আর টু সিটির জন্যেও ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি ৩০ হাজার রুপি গুনতে হতে পারে। টি আর ওয়ান সিটিতে ৪০ হাজার রুপি ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য বিনিয়োগ করতে হবে। সোলার কোম্পানি ভেদে ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য পুঁজি বিনিয়োগের পরিমাণ কম বা বেশী হতে পারে। আর তুমি যে পুঁজি বিনিয়োগ করবে তার মধ্যে কিছু টাকা কোম্পানি জামানত হিসেবে রেখে দেয় যা একরকম অফেরতযোগ্য।
ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য তোমাকে কমপক্ষে ১৫০ থেকে ২০০ স্কোয়ার ফিট সোলার পণ্য স্টোরের জায়গা রাখতে হবে। এছাড়াও যাবতীয় ট্রেইনিং কোম্পানি নিজেই তোমাকে দিয়ে দেবে। সেক্ষেত্রে কোম্পানি তোমাকে একটা নির্দিষ্ট সমেয়ে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ বিক্রয়ের লক্ষ্য ঠিক করে দিয়ে থাকে। যাইহোক, তুমি ফ্র্যাঞ্চাইজি হতে চাইলে যে কোন সোলার কোম্পানির ওয়েবসাইটে বা সরাসরি গিয়ে আবেদন করতে পারো।
কোন সুনামধন্য সোলার কোম্পানির দক্ষ ফ্র্যাঞ্চাইজি হয়ে তুমি বছরে ৩ থেকে ৫ লক্ষ রুপি পর্যন্ত আয় করতে পারো।
কিভাবে বিজনেস এসোসিয়েট হবে?
কিছু কিছু সোলার কোম্পানি রয়েছে যেখানে তুমি ২০ থেকে ৪০ হাজার রুপি পুঁজি বিনিয়োগ করে বিজনেস এসোসিয়েট হতে পারবে। বিজনেস এসোসিয়েট হতে গেলে তোমাকে কম্পানির ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদন করতে হবে। তুমি সরাসরি কোম্পানিতে গিয়েও বিজনেস এসোসিয়েট হওয়ার জন্য কোম্পানির নির্দিষ্ট ফর্মে আবেদন করতে পারো। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে কোম্পানি তোমাকে তাদের বিজনেস এসোসিয়েট করে নেবে এবং এ সংক্রান্ত সকল প্রশিক্ষণ কোম্পানি নিজেই তোমাকে দিয়ে দেবে।
কোন সোলার কম্পানির বিজনেস এসোসিয়েট হয়ে তুমি মাসে ১৫ হাজার রুপি থেকে শুরু করে ১ লক্ষ রুপি পর্যন্ত মাসে আয় করতে পারো।
কিভাবে সিস্টেম ইন্টিগ্রেটার হবে?
কোন সুনামধন্য সোলার কোম্পানির সিস্টেম ইন্টিগ্রেটার হতে গেলে তোমাকে ৫০ থেকে ৬০ হাজার রুপি বিনিয়োগ করতে হতে পারে। এর মধ্যে কিছু রুপি অফেরতযোগ্য হিসেবে কোম্পানি রেখে দেবে। কোম্পানি তোমাকে একজন দক্ষ সিস্টেম ইন্ট্রিগ্রেটর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রশিক্ষণো প্রদান করে থাকে। সিস্টেম ইন্টিগ্রেটর হয়ে তোমাকে সোলার ইন্সটল ও কমিশনিং করতে হবে বা কর্মী দিয়ে তোমকে করাতে হবে।
কোন কম্পানির দক্ষ সিস্টেম ইন্ট্রিগ্রেটর হয়ে তুমি প্রতি মাসে ৫০ হাজার থেকে শুরু করে কয়েক লক্ষ রুপি পর্যন্ত আয় করতে পারো। আয়ের বিষয়টি আসলে তোমার উপরে নির্ভর করে। তুমি যতো বেশী কাজ করতে পারবে ততো বেশী আয় করতে পারবে।
কিভাবে সোলার কোম্পানির ডিলার হবে?
কোন কম্পানির ডিলারশিপ নেওয়া হলো তোমার এরিয়াতে কোম্পানির প্রতিনিধিত্ব করা। অর্থাৎ একটি বড় এলাকায় তুমি একচেটিয়া ভাবে ব্যবসাটি পরিচালনা করতে পারবে। কোন কোম্পানির ডিলারশিপ নিতে গেলে কোম্পানির কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। সোলার কোম্পানি গুলোও এর বেতিক্রম নয়। ডিলারশিপ নিতে গেলে কোম্পানি ভেদে তোমাকে ৫০ হাজার থেকে ৮০ হাজার রুপি পুঁজি বিনিয়োগ করতে হতে পারে এবং ২ লক্ষ রুপি থেকে শুরু করে ৫ লক্ষ রুপির সোলার সামগ্রী কিনতে হতে পারে। যাইহোক, যে কোন সোলার কোম্পানির ওয়েবসাইটে গিয়ে বা কোম্পানিতে সরাসরি গিয়ে তুমি ডিলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারো।
একবার কোন সোলার কোম্পানির ডিলারশিপ বনে যেতে পারলে তুমি মাসে সর্বনিম্ন ১ লক্ষ রুপি থেকে শুরু করে কয়েক লক্ষ রুপি পর্যন্ত আয় করতে পারবে।
সোলার কোম্পানির এজেন্ট কিভাবে হবে?
আমাদের দেশে অনেকগুলো সোলার কোম্পানি আছে। তাই আজকাল যেকোনো সোলার কোম্পানির এজেন্ট হতে গেলে তোমাকে ৮ থেকে ১৫ হাজার রুপি পুঁজি বিনিয়োগ করতে হতে পারে। একজন দক্ষ সোলার কোম্পানির এজেন্ট হিসেবে গড়ে তুলতে তোমাকে যাবোতীয় ট্রেনিং সোলার কোম্পানি দিয়ে দেবে। সে ক্ষেত্রে তুমি কোম্পানির ওয়েবসাইটে গিয়ে আরও বেশী তথ্য জেনে নিতে পারো এবং ওয়েবসাইটে বা সরাসরি কোম্পানিতে গিয়ে নির্দিষ্ট ফরম আবেদন করে সোলার কোম্পানির এজেন্ট হতে পারো।
একজন দক্ষ সোলার কোম্পানির এজেন্ট হয়ে, সোলার পণ্য বিক্রি করে, ইন্সটল করে, রিপেয়ার করে তুমি প্রতি মাসে সর্বনিম্ন ২০ থেকে ৫০ হাজার রুপি পর্যন্ত আর করতে পারবে। আয় করার বিষয়টি তুমি কত বেশি কাজ করছ আসলে তার উপর নির্ভর করে। আসলে যত বেশি কাজ করবে তত বেশি আয় করতে পারবে।
ভারত সরকার সোলার প্ল্যান্ট প্রতিস্থাপনে জোর দিচ্ছে। অনেক রাজ্যে, শিল্প খাতে সোলার প্ল্যান্ট প্রতিস্থাপন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই আজকাল সৌর পণ্য বিক্রয় শুরু করা তোমার পক্ষে একটি লাভজনক ব্যবসা হতে পারে। সোলার পিভি, সোলার অ্যাটিক ফ্যান, সোলার থার্মাল সিস্টেম, সোলার কুলিং সিস্টেমের ব্যবসা তুমি চাইলেই শুরু করতে পারো, এতে এই ব্যবসা থেকে লক্ষাধিক টাকা উপার্জন করতে পারবে। তদুপরি, অনেক ব্যাংক সৌর-সম্পর্কিত ব্যবসায়ের জন্য লোনও প্রদান করে থাকে।