চিকেন ফার্মের ব্যবসায় কীভাবে শুরু করবেন
চাকরি বা ব্যবসার আশায় না থেকে তুমি আত্মকর্মসংস্থান জন্য কিছু গঠনমূলক কাজ করলে তুমি তোমার সঙ্গে সঙ্গে সমাজকেও কিছু উপহার দিতে পারবে। এজন্য সর্বপ্রথম দরকার আত্ববিশ্বাস এবং পরিশ্রম ও নিষ্ঠা। অনেক ব্যতিক্রমী পেশা রয়েছে যেখানে একটু পরিশ্রম ও চিন্তাভাবনা নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করলে সফলতা দরজায় এসে কড়া নাড়বে। ভারতে এখন সফল মুরগী ফার্মের সংখ্যা অনেক। দিন দিন এর চাহিদাও বাজার বাড়ছে। এ থেকে আদর্শ খাবার হিসেবে ডিম, আমিষের চাহিদা মেটাতে মাংস এবং জৈব সার বিষ্ঠা পাওয়া যাবে। তেমনি অন্যদিকে এ খাত থেকে বেশ ভালো আয় করাও সম্ভব।
কিভাবে শুরু করবে?
মুরগীর ফার্মে করে ব্যবসা করা অন্যন্য ব্যবসার চেয়ে কারিগরি জ্ঞান থাকার বেশী প্রয়োজন হয়। সবচেয়ে ভালো হয় কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ নিলে। কোন মুরগীর ফার্মে কিছুদিন কাজ করেও প্রাথমিক মুরগি পালন করার জ্ঞান অর্জন করা যেতে পারে। একটা ভালো মানের ফার্ম গড়তে সবার আগে প্রয়োজন পপ্রস্তুতি। প্রস্তুতির উপর নির্ভর করে যে কোনো কাজের সফলতার ও ব্যর্থতা। ফার্ম গড়ে তুলতে প্রয়োজন আর্থিক সঙ্গতি, অভিজ্ঞতা ও মুরগির নিরাপদ আশ্রয়। প্রথমেই বিশাল ফার্ম তৈরিতে হাত না দিয়ে ছোট পরিসরে কাজে হাত দেওয়া ভালো। ৫০০ থেকে ১০০০ টি মুরগি নিয়ে যাত্রা শুরু করে আস্তে আস্তে ফার্মকে সম্প্রসারণ করাই উত্তম।
মুরগী পালন করার ঘর কেমন হবে?
একটি মোরগের সংসার গড়তে প্রথমে প্রয়োজন হবে মুরগির ঘর ঠিক করা। মুরগির থাকার ঘর উচ্চতায় চার ফুট, প্রস্থে সাড়ে ৪ ফুট এবং দৈর্ঘ্য ৬ ফুট করলে ভালো হয়। এর ভেতরে ডিম পাড়ার খাঁচি, খাবার পাত্র ও পানির পাত্র রাখতে হবে। এভাবে একটা মাপযোগ করে ৫০০ থেকে ১০০০ মুরগী পালন করার জন্য একটা ঘর বানিয়ে নেওয়া যেতে পারে। সব থেকে ভালো হবে যদি তুমি কোন খামারীর পরামর্শ অনুযায়ী ফার্ম করো। মুরগী পালন করতে আরও যা যা খেয়াল রাখবেঃ
(১) ঘর সব সময় শুকনো ও পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
(২) খোলামেলা স্থানে ঘর বানাতে হবে বিশেষ করে পূরব–পশ্চিম দিক করে।
(৩) ঘরের মেঝে তিন ইঞ্চি পুরু হয় এ পরিমাণ তুস, কাঠের গুঁড়া বা বালির সঙ্গে আধা কেজি গুঁড়া চূর্ণ ভালোভাবে মিশিয়ে সমানভাবে বিছিয়ে দিতে হবে।
(৪) মেঝের কাঠের গুঁড়া বা তুস ৭ দিন পরপর ওলট–পালট করে দিলে ভালো হয়। স্যাঁতসঁতে হলে বা জমাট বেধে গেলে তা পরিবর্তন করে দিতে হবে।
কোথায় থেকে মুরগী সংগ্রহ করবে?
আজকাল খুব সহজেই মুরগী সংগ্রহ করা যায়। মুরগী পালন করার জন্য উন্নত জাত খুব গুরুত্ব পূর্ণ। তোমার এলাকার আশেপাশে যদি কোন ফার্ম থাকে তবে সেখান থেকে মুরগীর বাচ্চা বা মুরগী সংগ্রহ করে নিতে পারো। তাছারা বাজারে যারা মুরগী বিক্রি করে থাকে তাদের বললে ওরাই তোমাকে উন্নত জাতের মুরগী যোগার করে দেবে।
কেমন খাদ্য খেতে দিতে হবে?
অধিক ডিম পেতে হলে মুরগিকে দৈনিক সুষম খাবার খেতে দেবে, প্রত্যহ প্রতিটি মুরগিকে ১১৫ গ্রাম সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি ও ২৫ গ্রাম সবুজ শাক–সবজি বা কচি ঘাস কুচি কুচি করে কেটে খেতে দেওয়া যেতে পারে।
এছাড়াও তুমজ চাইলে নিজেই সুষম খাদ্য তৈরি করতে পারো।
সুষম খাদ্যের উপাদানগুলো কি কি?
খাদ্য উত্পাদন–গম/ভুট্টা ভাঙা বা চালের খুদ ৪০০ গ্রাম। গমের ভুসি ৫০ গ্রাম। চালের কুঁড়া (তুষ ছাড়া) ২৫০ গ্রাম। তিলের খৈল ১২০ গ্রাম। শুঁটকি মাছের গুঁড়া ১০০ গ্রাম। ঝিনুকের গুঁড়া ৭৫ গ্রাম। সুষম খাদ্য মোট ১,০০০ গ্রাম বা ১ কেজি।
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাগূলো কি?
তোমার মুরগিকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত টিকা দেয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারের থেকে বিনামূল্যে রানীক্ষেত, কলেরা, বসন্ত রোগের প্রতিষেধক টিকা সংগ্রহ করতে পারো। আরেকটু খেয়াল রাখবে, তোমার মুরগি অসুস্থ হলে সঙ্গে সঙ্গে পশু চিকিত্সালয়ের পরামর্শ নিতে হবে। অসুস্থ মুরগিকে চিহ্নিত করে তত্ক্ষণাত্ আলাদা করে রাখবে। তা ছাড়া রোগাক্রান্ত মুরগির বিষ্ঠা ও লালা সতর্কতার সঙ্গে সংগ্রহ করে তা মাটিতে পুঁতে রাখার ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত জরুরী।
বাজারজাতকরণ কিভাবে হবে?
খুব সহজেই আমিষের প্রয়োজন মেটাতে গ্রাহকের কাছে মুরগী ও ডিমের চাহিদা ব্যাপক। তুমি চাইলে বাজারে যারা মুরগীর ও ডিমের দোকানের ব্যাবসা করে তাদের কাছে তোমার ফার্মের মুরগী ও ডিম গুলো বিক্রি করতে পারো। আশেপাশের ছোট বড় শহরের পাইকেরী বাজারে বা সুপার শপের সাথে কন্টাক্ট করেও মুরগী ও ডিম বিক্রি করা যায়। এছাড়া মুরগী ও ডিম বিক্রি করতে অনলাইন মারকেটপ্লেসের আশ্রয়ও নেওয়া যেতে পারে।
এছাড়াও কম বয়সী মুরগী, মুরগীর বাচ্চা খামারীদের কাছে এবং কৃষকদের জৈব সার হিসেবে বিষ্ঠাও বিক্রি করা যায়।
মুরগি পালনে ব্যায় কেমন?
একটি মোরগের সংসারের সাজানোর ঘর খাবার পাত্রসহ তৈরি করা বাবদ প্রায় ১৫০০ থেকে ২ রুপি খরচ হতে পারে। মোরেগের জন্য তৈরি কয়া ঘর কয়েক বছর ব্যবহার করা যাবে। ছয় মাস বয়সী ৯টি মুরগি এবং ১টি মোরগের ক্রয়মূল্য ১৮০০ থেকে ২৫০০ রুপি। এক বছর পরে মোরগ সহ ১০টি মুরগিকে প্রায় একই দামে বিক্রি করা যাবে। মানসম্মত ডিম কিনলে একটির দাম পড়বে ৮ থেকে ১০ রুপি। মুরগির ছোট বাচ্চা কিনলে একটির দাম পড়বে ৩৫ রপি প্রায়। এমন ভাবে মোরোগ সহ দশটি মুরগীর দাম হবে ৩৫০ রুপি। এক মাসে মুরগির খাবার ক্রয় বাবদ প্রায় ৮০০ রুপি ব্যয় হবে। আর তুমি নিজেই মুরগির সুষম খাবার তৈরি করতে পারো তাহলে খরচ আরও কম হবে।
এভাবে তুমি ৫০০–১০০০ হাজার মুরগী পালন করার জন্য একটা হিসেব বের করে ঠিক কেমন পুঁজি বিনিয়োগ করতে হবে সেটা সহিজেই বের করতে পারবে।
মুরগী পালনে আয় কেমন?
একটি মোরোগ ও নয়টি মুরগি থেকে প্রতিদিন গড়ে ৬টি ডিম পাওয়া যায়। ডিম বিক্রি করে প্রতি মাসে গড়ে ১৪৪০ রুপির মতন আয় করা যেতে পারে। আবার উত্পাদিত ডিম, খাবার এবং বাচ্চা ফুটানোর ডিম হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে। তোমার শ্রমে উত্পাদিত ডিমের একটি অংশ দিয়ে যদি বাচ্চা ফুটাতে পারো তবে খুব সহজেই তুমি তোমার ফার্ম থেকে ভালো আয় করতে পারবে।
প্রতি ১ মোরোগ ও ৯ মুরগী থেকে যদি ১৪৪০ রুপির মতন আয় হয় তবে একবার ভেবে দেখো ৫০০–১০০০ হাজার মুরগীর একটা ফার্ম থেকে কেমন আয় করা যেতে পারে। এছাড়াও মুরগীর বাচ্চা এবং জৈব সার হিসেবে বিষ্ঠা বিক্রি করেও আয় করা যায়।
মুরগীর ফার্মের ব্যবসা অত্যন্ত একটি লাভজনক ব্যবসা। এ ব্যবসায় কম পুঁজি বিনিয়োগ করে খুব সহজেই অল্প সময়ে অনেক বেশী আয় করে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব। তাই তুমিও এ ব্যবসার কৌশল কাযে লাগিয়ে একজন সফল উদ্যোগতা হতে পারো।