ভারতবর্ষে মশলার ব্যবসা শুরু করার একটি সম্পূর্ণ গাইড
যেকোনো সুস্বাদু রান্না করার জন্যে মসলার অবদান অনস্বীকার্য। পৃথিবীতে মসলা উৎপাদক দেশ গুলির মধ্যে ভারত অন্যতম।প্রতিবছর বিদেশে বিভিন্ন রকম মসলা রপ্তানি করে ভারত বেশ মোটা এমাউন্টের বিদেশী মুদ্রা অর্জন করে। তাই ভারতে মশলার ব্যবসা শুরু করা একটি খুব লাভজনক ব্যবসায়ের বিকল্প।আর গোটা মসলা হোক বা গুঁড়ো মসলা তৈরী করে প্যাকেটজাত করে বিক্রয় করা যে কোনো ব্যাবসায়ির জন্যে স্বল্প বিনিয়োগের মাধ্যমে বেশি লাভ করার রাস্তা খুলে যাওয়া। হোম বেসড হোক বা ছোটো খাটো কোনো কারখানা যে কারুর জন্যেই স্পাইস বিসনেস বা মসলার ব্যবসা খুব লাভজনক একটা সমাধান। এমনকি অনেক মহিলারাও মসলার ব্যবসা করে থাকেন। অনেকে হোম বেসড মসলা তৈরী করে বিভিন্ন কোম্পানিতে সেগুলো সার্ভ করেন, বিক্রি করে প্রচুর অর্থ উপার্জন
ভারতে মসলা ব্যবসায়ের ফলে কি কি সূবিধা হতে পারে ?
যে কোনো ভারতীয় রান্না করার জন্যে সব ধরণের মশলা গুঁড়ো ব্যবহার করা হয় এবং সেটা খুব সুদক্ষ ভাবে।এটা সবারই জানা বিদেশ থেকে যখনই কেউ আমাদের দেশে এসেছে, কোনো খাবার খেয়েছে সেই খাবার সবসময় প্রশংসিত হয়েছে। একথা ঠিকই ভারতীয় রান্নায় মসলার স্পর্শ আবশ্যক। গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসাবে প্রতিটি রেসিপিতে এক বা একাধিক ধরণের মশালা যোগ করা হয়। যে কোনো খাবারের সুগন্ধ, রং এবং ভাল স্বাদ আনার জন্যে বিভিন্ন মসলাই আসল কারণ।
ভারতে যে মসলা গুলো ব্যবহার করা হয় তাদের মধ্যে সাধারণ মশলার নাম গুলি হল হলুদ গুঁড়া , মরিচ গুঁড়ো, ধনিয়া গুঁড়ো, জিরা গুঁড়া ইত্যাদি এবং গোটা মশলার মধ্যে আছে এলাচ, গোলমরিচ, জিরা, তেজপাতা, দারুচিনি এবং আরও অনেক কিছু যেগুলি সাধারণত কোনো খাবারে গন্ধ আনতে সাহায্য করে। সুতরাং, মশলা ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করে সফল হওয়ার সম্ভাবনা সব দিক থেকেই রয়েছে।
যে কোনো ব্যবসা শুরু করতে হলে কয়েকটি ব্যাপারে ভীষণ ভাবে সতর্ক থাকতে হয়, সেই ব্যবসায় লাভের পরিমান কত হবে, কিভাবে লাভ বেশি করা যাবে, কিভাবে বিক্রি বেশি করা যাবে, কোন কোন প্রোডাক্টের চাহিদা বেশি, কোন কোন প্রোডাক্ট মানুষ অল্প পরিমানে কেনে, এবং যখন এটা মসলার ব্যবসা তাই কোন মসলা কেনার জন্যে মানুষের ঝোক বেশি থাকে, কোন মসলা দামি, কোন মসলার গুঁড়ার চাহিদা বেশি থাকে, গোটা কোন মসলা বেশি বিক্রি হয় সব টাই মসলার ব্যবসার বিষয়গুলির অন্তর্ভুক্ত। এই সব ব্যাপারগুলো তোমাকে ব্যবসা শুরু করার আগে ভাবতে হবে। কারণ এগুলোই তোমাকে সাহায্য করবে কোন মসলার স্টক তোমার দোকানে কিভাবে করবে। কোন প্রোডাক্টের কিরকম সাইজে প্যাকেট করলে ব্যবসা বৃদ্ধি পাবে।
যেহুতু সব মানুষই লুস কোনো প্রোডাক্ট থেকে প্যাকেটজাত দ্রব্য বেশি পছন্দ করে, র এই প্যাকেট গুলো অনেকদিন ফ্রেশ থাকে, বা হাতে হাতে নোংরা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে , তাই মসলার ব্যাবসায় প্যাকেজিং একটা অন্যতম বিষয়। ধরো গোলমরিচের মতো একটা মসলা , যেটা যথেষ্টই দামি মসলার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত, অনেকের পক্ষেই সেটা ১০০ গ্রাম একেবারে কেনা সম্ভব নয়, তাই তোমাকে বুঝে ১০ গ্রাম, ২৫ গ্রাম বা ৫০ গ্রামের প্যাকেট বেশি করে তৈরী করে রাখতে হবে।
মানুষের পছন্দ সময়ের সাথে বদলে যায় , হয়তো ছয় মাস আগে যে প্রোডাক্টটা সবথেকে বেশি বিক্রি হতো সেটা এখন অনেকটাই নিচের দিকে। মানুষ সেই মসলা পছন্দ করছে না, এবার তুমি যদি সেই জিনিসটাই বেশি করে কয়মাস আগে তৈরী করে রেখে দিলে, ভাবো সেটা তোমার জন্যে কতটা হতাশার হতে পারে।তাই প্রথম থেকে স্মার্ট এবং বুদ্ধিদীপ্ত প্রসেসে বিসনেস করে হবে তোমার মৌলিকত্ব।
তুমি কখনোই চাইবে না ব্যবসা শুরু করেই কোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে আর তাই মসলার উপযুক্ত ব্যবসাকে চিনে নিতে তোমার দোকানের পসিশনকেও সঠিক ভাবে বিবেচনা করতে হবে। সেটা যেন সঠিক জায়গায় সঠিক ভাবে সাজানো হয় ,প্যাকেট গুলো যেন দোকানে কাস্টমার এলে সবার সামনে দেখতে পায়।
মসলার ব্যবসা শুরু করার জন্যে যে বিষয় গুলো জানা উচিত-
তোমার ব্যবসা ক্ষুদ্র বা বৃহৎ যাই হোক না কেনো তোমাকে কিছু নিবন্ধকরণ এবং লাইসেন্স পেতে হবে। তার মধ্যে ফার্মস রেজিস্ট্রার ছাড়াও প্রাথমিক পর্যায়ে ওয়ান পার্সন কোম্পানী রূপে প্রতিষ্ঠা করলে তোমার জন্যে ভালো হবে।
- তোমাকে প্রথমে স্থানীয় পৌর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে যেটা খুবই দরকারি।
- দ্বিতীয়ত উদ্যোগ আধার পাওয়া এবং এমএসএমই নিবন্ধকরণ করতে হবে তবে এগুলো ঐচ্ছিক। এটির সাহায্যে তুমি সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় ভর্তুকি পাওয়ার উপযুক্ত হয়ে উঠবে।
- তোমাকে খাদ্য ব্যবসায়ের লাইসেন্স অথবা এফএসএসএআই লাইসেন্স জোগাড় করতে হবে।
- তুমি যদি বিশ্ববাজারের বা ইন্টারন্যাশনাল ক্ষেত্রে কাজ করার পরিকল্পনা করে থাকো ,তবে তোমার আইইসি বা আমদানি রফতানির কোড দরকার হবে।
- তোমাকে সমস্ত এফপিও রেগুলেশন মেনে চলতে হবে।
- এছাড়াও, তোমার বিআইএস শংসাপত্র নিতে হবে। গ্রাউন্ড মশলার জন্য আইএসআই স্পেসিফিকেশনগুলি ভিন্ন রকমের হয়ে থাকে সেগুলো তোমাকে মসলা তৈরির সময় মনে রাখতে হবে। গ্রাউন্ড মশলার অন্তর্ভুক্ত হলো চিলি পাউডার বা লঙ্কার গুঁড়া, ধনে গুঁড়া, হলুদ গুঁড়া, কারিপাতার গুঁড়া, এবং এর সাথে মশলা এবং মশালার নমুনা ও পরীক্ষার পদ্ধতি ও নিবদ্ধকৃত থাকে।
- সবশেষে তোমাকে আগমার্ক শংসাপত্র পাওয়ার জন্যে পরামর্শ দেওয়া হবে।
মশলার ব্যবসায় এই প্রয়োজনগুলো ছাড়াও অন্যান্য প্রয়োজনীয়তা আছে যেমন
রেজিস্ট্রেশন এবং লাইসেন্স পাওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য প্রাথমিক জিনিস যেমন কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামও প্রয়োজন। এছাড়াও, তোমাকে তোমার মশলা ব্যবসায়ের জন্যে কত খরচ করতে হবে তার একটা প্লানিং করতে হবে। মশলা গুঁড়ো তৈরির শিল্প বা কারখানা গুলিকে প্রায় 500 বর্গফুট উচ্চতায় একটি জায়গায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠার জন্যে পরামর্শ দেওয়া হয়, যেখানে তুমি পুরো জায়গাটিকে কয়েকটা বিভাগে ভাগ করতে পারবে । একটি বিভাগ টুকরো বা খন্ড গুলো প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য হওয়া উচিত এবং দ্বিতীয় ভাগটি মশলা প্যাকিংয়ের জন্য বরাদ্দ করা উচিত।
এ ছাড়াও তোমার একটি বাণিজ্যিক অঞ্চল পছন্দ করা উচিত যেখানে জল এবং বিদ্যুত সরবরাহের মতো মৌলিক সুবিধা পর্যাপ্ত পরিমাণে উপলব্ধ। এছাড়াও,তুমি যদি হোম–ভিত্তিক মশলা ব্যবসায স্থাপন করতে চাও তাহলে পর্যাপ্ত জায়গা আছে তা নিশ্চিত করতে হবে।
কাঁচামাল সংগ্রহ
আপনার মশলা শিল্পকে সফল করার জন্য প্রাথমিক এবং সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হ‘ল কাঁচামাল; যেগুলো গোটা মশলা বিক্রি হয় না । তুমি যে আইটেমগুলিকে পাইকারিভাবে কিনে ব্যবসা শুরু করতে পারো সেগুলো হলো লঙ্কা, ধনে , জিরা , মেথি , সরষে , হলুদ , মরিচ, পপিসিড, মৌরি বীজ, ইত্যাদি। অনুমোদিত বা খাদ্য–গ্রেড প্যাকিং উপকরণ, অনুমোদিত খাবারের রঙ এবং সংরক্ষণকারীও তোমাকে জোগাড় করতে হবে।
মসলা তৈরী করার জন্যে যে যন্ত্রপাতি গুলো তোমার লাগবে তার মধ্যে ইমপ্যাক্ট পালভারাইজার, স্পাইস মিল, পাউন্ডিং মেশিন, ডাবল স্টেজ পুলভারাইজার এগুলো প্রথম স্তরেই থাকবে। এছাড়াও প্যাকেজিং মেশিন, রোস্টার, কম্প্রেসর , মশলা পেষক, ওজন স্কেল এগুলো থাকতেই হবে।