অনলাইনে ফল ও সবজির দোকান ব্যবসার পরিকল্পনা
অনলাইনে ফল ও সবজির দোকানের ব্যাবসা এমন একটি ব্যাবসা যা গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় দ্রব্য বাসায় পৌঁছে দেওয়া এবং এই সেবার পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট চুক্তিতে টাকা উপার্জন করা। অল্প পুঁজিতে অনলাইনে ফল ও সবজির দোকানের ব্যাবসা হতে পারে একটি অত্যন্ত লাভজনক ব্যাবসার খাত।
প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়নের সাথে সাথে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। আর এসবের আওতা থেকে বাদ যায়নি মানুষের প্রত্যাহিক কিছু কাজও। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো একটি পরিবারের প্রিতিদিনের ফলমূল ও শাক সবজির চাহিদা।
কাঁচাবাজারে গিয়ে বাজার করা ব্যস্ত মানুষের জন্য চরম কষ্টদায়ক ও বিরক্তিকর। বিশেষ করে যারা সারাদিন আফিসে কাজকর্ম করে ক্লান্ত শরীরে কাঁদা–ধুলো–বালির ভিড় সামলে এই বাজার করার কাজটি সমাধা করেন তাদের জন্য এটি চরম দুঃসহ একটি অভিজ্ঞতা। অনলাইনে ফল ও সবজির দোকান ব্যাবসার পরিকল্পনাটি তাদের জন্য ফলপ্রসূ সমাধান বয়ে নিয়ে আসতে পারে তার সাথে সাথে এটি হতে পারে ব্যাবসার উদ্যোগ হিসেবে অত্যন্ত সাহসী ও সৃজনশীল উদ্যোগ।
কেনো অনলাইনে ফল ও সবজির দোকানের ব্যাবসা করবেন?
এই অনলাইনে ফল ও সবজির দোকানের ব্যাবসা পরিচালনা করা খুব সহজ। গ্রাহকদের নিকট ফল ও সবজিরর চাহিদাও প্রচুর। ফল ও সবজির দোকানের ব্যাবসাটি করতে তেমন বেশি পুঁজি বিনিয়োগ করার ও প্রয়োজন নেই। এই ব্যাবসায় লাভের পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলছে। স্থানীয় বাজারের সাথে দ্রব্যমূল্যের সংগতি রেখে ব্যাবসাটি শুরু করে যে কোন উদ্যোগতা সহজেই সবালম্ভী হতে পারেন।
কোথায় শুরু করবেন?
শহরের ব্যাস্ত আবাসিক এলাকায় অনলাইনে ফল ও সবজির দোকানের ব্যাবসা শুরু করা যেতে পারে। এছাড়াও এমন যায়গায় ব্যাবসাটি শুরু করতে পারো যেখানে ফল ও সবজির ভালো চাহিদা আছে।
কিভাবে ব্যাবসাটি শুরু করবেন?
ব্যাবসাটি যেহুতু অনলাইন ভিত্তিক তাই একটি ওয়েবসাইট থাকলে সবথেকে ভালো হয়। তাছারা ফেসবুক পেজের মাধ্যমেও এটি শুরু করা যায়।
কাস্টমারের অর্ডার ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই পাওয়া যায়। তাছারা ফেসবুক পেজের মাধ্যমে পরিচালনা করতে চাইলে কাস্টমারদের জন্য কল সেন্টার সার্ভিস রাখতে হবে যা ২৪ ঘন্টা না হলেও অন্তত ১৬-১৮ ঘন্টা কার্যকর থাকবে।
ওয়েবসাইটে বা ফোনের মাধম্যে অর্ডার গুলো পাওয়ার পর গ্রাহকদের বাজারের তালিকা নিয়ে বাজারে চলে যেতে হবে। আপনি যদি খুচরো বাজারে না গিয়ে পাইকারি বাজারে যান তবে সেখান থেকে আরও কম মূল্যে বাজার করতে পারবেন। মনে রাখবেন, সকল খুচরো বিক্রেতা পাইকারি বাজারে থেকে তাদের দোকানের জন্য মালামাল ক্র্য করে নিয়ে আসে।
সবথেকে ভালো হয়, আপনি যদি তাদের সাথে যোগাযোগ কতে পারেন যারা ফল ও সবজির বাগান করে থাকে। ফল য় সবজির বাগান থেকেই পাইকারি বাজারে পণ্য আসে। একবার বাগান মালিকদের সাথে যোগাযোগ হয়ে গেলে আপনি খুব কম মূল্যে পণ্য ক্রয় করে আপনার গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে যেমন টাটকা সবজি পাবেন তেমনব গ্রাহক সন্তুষ্টিও অর্জন করতে পারবেন।
যাইহোক, চাহিদা অনুযায়ী ফল ও সবজির দোকান গুলো থেকে বাজার করে বাজার গুলো নির্দিষ্ট স্থানে জড়ো করতে হবে।
তারপর বাজার গুলো আলাদা আলাদা ভাবে আপনার ব্যাবসার প্যাকেজিং এ প্যাকেট করে যত দ্রুত সম্ভব গ্রাহকদের বাড়িতে পৌঁছে দিতে হবে। এক্ষেত্রে ৩ থেকে ৪ জন ডেলিভারি ম্যান নিয়োগ করতে পারলে সবথেকে ভালো হবে অন্যথায় আপনি নিজেও করতে পারেন।
ব্যাবসাটি আরও বেশী সহজ করতে চাইলে একটি মোবাইল এপ্লিকেশনও বানিয়ে নিতে পারেন। গ্রাহক পছন্দ অনুযায়ী আপ্লিকেশনের মাধ্যমে অর্ডার করতে পারবে।
এই ব্যাবসার গ্রাহক কোথায় পাবেন?
সাধারণত শহরের ব্যাস্ত মানুষেরাই এর প্রধান গ্রাহক। কিন্তু বর্তমানে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সারা বিশ্বের ছোট-বড় শহর গুলোতে লকডাউন চলছে। মানুষজন নিজে এবং পরিবারকে করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত রাখতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির জন্য আগের থেকে আরও বেশী অনলাইন কেনাকাটার উপরে নির্ভরশীল হয়ে পরেছে। তাই চাইলে যে কোন ছোট শহরে এটি শুরু করা যায়। প্রথমে একটি পাড়া বা মহল্লাকে কেন্দ্র করে এটি শুরু করে পরবর্তী সময়ে ব্যাবসার পরিধি বৃদ্ধি করা যেতে পারে। নতুন গ্রাহক পেতে বাসায় বাসায় লিফলেট বিতরণ করতে পারেন। তাছারা দেওয়ালে পোস্টার লাগিয়ে, মাইকিং করে বা ফেসবুক প্রচার প্রচারণা চালিয়েও মার্কেটিং করতে পারেন।
যোগ্যতাঃ
যে কোন ব্যাবসা শুরু করার প্রথম যোগতা হলো সততা। যোগ্যতার সাথে সাথে এই ব্যাবসার বেলায় ভালো ব্যাবহার,সময়ের কাজ সময়ে করা, ভেজাল না করা, অতিরিক্ত দাম না নেওয়া গুণাবলী গুলোর ও সমান দরকার আছে।
যেহুতু ব্যাবসাটি হবে অনলাইন নির্ভর সেক্ষেত্রে আপনার ব্যাবসার ওয়েবসাইট থাকলে ওয়েবসাইট পরিচালোনা, আপডেট রাখার মতন বিষয়গুলোতে দক্ষতা থাকার দরকার আছে। ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে যদি পরিচালনা করতে চান তবে আপনাকে ফেসবুকের বিজনেস পেইজ কিভাবে পরিচালোনা করতে হয় সেটি জানতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিপণনের ব্যাপারে দক্ষতা আপনাকে যে কোন দক্ষতা থেকে ব্যাবসা বাড়ানোর ক্ষেত্রে আপনাকে বেশী লাভবান করবে। এ সব দক্ষতা খুব সহজে অল্প সময়ে শিখে নেওয়া যায়।
আপনার গ্রাহক যদি ফোনের মাধ্যমে আপনাকে পণ্যের অর্ডার দেয় তবে আপনাকে খুব ভালো মানের একজন শ্রোতা হতে হবে। গ্রাহক অর্ডার করার সাথে সাথে সেগুলো লিখে রাখার বিষয়টিও আপনার নখদর্পণে থাকতে হবে।
সম্ভাব্য পুঁজিঃ
ব্যাবসাটি শুরু করতে হলে প্রাথমিক ধাপে ১৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলেই হবে। টাকা বিনিয়োগের বিষয়টি ব্যাবসাটি কেমন পরিসরে শুরু করতে চান তার উপরে নির্ভর করে। যদি খুব বড় পরিসরে শুরু করতে চান তবে তার জন্য বড় ধরনের পুঁজি বিনিয়োগ করতে হবে। আর যদি আপনার নিজ পাড়া মহল্লা থেকে শুরু করেন তবে স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করেও ব্যাবসাটি শুরু করা যেতে পারে। এসব বিষয়গুলো মূলত নির্ভর করে আপনার এলাকার গ্রহকদের চাহিদা ও পন্যের যোগানের উপরে।
সম্ভাব্য আয়ঃ
আপনি যদি আপনার লোকাল মার্কেট অর্থাৎ খুচরো বাজারের দোকান থেকে আপনার গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য ক্রয় করে তাদের সরবরাহ করেন তবে আপনার লাভ হিসেবে পণ্যভেদে গ্রাহক অনুযায়ী ৮ থেকে ১০ শতাংশ হতে পারে।
একি পরিমাণ বাজার যদি পাইকারি দরে পাইকারি ফল ও সবজির দোকান থেকে কিনে আপনার গ্রাহকদের সরবরাহ করেন তবে পণ্যভেদে ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত আপনি লাভ করতে পারবেন।
আবাএ অন্যাদিকে আপনার যোগাযোগ যদি এমন সব মানুষের সাথে থাকে যারা ফল ও সবজি উতপাদন করে তবে আপনি তাদের কাছ থেকে পণ্য নিয়ে আপনার গ্রাহকদের সরবরাহ করে আরও বেশী লাভোবান হতে পারবেন। সেক্ষেত্রে পণ্যভেদে আপনার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ আবার কখনও এরও বেশী লাভ থাকতে পারে। আর ডেলিভারি চার্জ তো আছেই।
করোনা ভাইরাস আমাদেরকে নতুনভাবে ব্যাবসা করতে শিখিয়ে দিয়েছে। এখন বেশিরভাগ মানুষই নিজেদের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে সবার আগে অনলাইন সার্চ করে থাকে। একটি ব্যাস্ত পরিবার, হোটেল, রেস্টুরেন্ট এর সবগুলোই আপনার অনলাইনে ফল ও সবজির দোকানের ব্যাবসার ভালো কাস্টমার বয়ে আনতে পারে। যাইহোক ব্যাবসাটি শুরু করার মধ্যে দিয়ে এই লকডাউন চলাকালীন সময়েই আপনি একজন সফল উদ্যোগক্তা হয়ে যেতে পারেন।