পরিবহন ব্যবসার লাভজনক দিক গুলি
পৃথিবী যতই ছোট হচ্ছে পরিবহন ব্যবসার চাহিদা ততই বাড়ছে। যুব সম্প্রদায় ও মধ্যবিত্ত সমাজের পরিবহন চাহিদার নিরীক্ষা করলেই একটি চিত্র ফুটে ওঠে যা বলে দেয় বর্তমান সমাজ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা যাওয়ার পরিবহন নির্বাচনে আরাম ও সুরক্ষা দুইকেই যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। সময়ের সাথে সমাজের ব্যয় ব্যবহার পরিবর্তিত হয়েছে। উপার্জন বেড়েছে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর। তার সাথে বেড়েছে ব্যস্ততা, কমেছে সময়।
ভিড়ে ঠাসা বাসে বাদুড়ঝোলা হয়ে অফিস যাত্রা এই যুগের নিত্য যাত্রীদের পছন্দ নয় মোটেই। আবার নিজের পোষ্যকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাওয়া বা শহরের বাইরে সপ্তাহান্ত কাটানো, সবেতেই উন্নতমানের পরিবহন পরিষেবার চাহিদা চোখে পড়ে।
তাছাড়া পরিবহনের প্রয়োজনীয়তা জীবনের আরো অনেক ক্ষেত্রে উপস্থিত। যেমন এম্বুলেন্স, স্থানান্তরিত করার পরিষেবা, ইত্যাদি।
স্বভাবতই তাই পরিবহন পরিষেবা বাণিজ্য হঠাৎ বর্ধিত হয়ে উঠেছে এবং লগ্নিকারী ও নবীন উদ্যোগপতিদের আগমন ঘটছে নিয়মিত।
পরিবহন পরিষেবার বাণিজ্য বিকাশের কিছু বুনিয়াদি উপায়:
ওলা/ উবার প্রভৃতি অনলাইন ট্যাক্সি:
শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ট্যাক্সিতে অতি আরামে পৌঁছনো যায় সিনেমা হল বা চাকরি ক্ষেত্রে। এই বিশিষ্ট পরিবহন ক্ষেত্রের সাথে যুক্ত হতে চাইলে নিজস্ব অনলাইন ক্যাব পরিষেবা খোলার থেকে অনেক বেশি সহজ উপায় ওলা বা উবার সংস্থার সাথে যুক্ত হয়ে তাদের ভাবমূর্তি অবলম্বন করে খুলে দিন নিজের উপার্জনের রাস্তা। আপনার নিজের গাড়িগুলি নথিভুক্ত করুন এই সংস্থা গুলির আঞ্চলিক কার্যালয় আর শুরু করে দিন কাজ। যত বেশি গাড়ি নথিভুক্ত করবেন তত লাভ। তবে মনে রাখবেন দক্ষ চালক না পেলে আকাঙ্খিত আয় হবে না।
শাটল পরিষেবা:
একটা সময় ছিল এয়ারপোর্ট গামী চালকরা, বিমানবন্দরে তাদের মালিক কে নামিয়ে দিয়ে ফেরার সময় খালি গাড়িতে সোয়ারি তুলতে তুলতে যেত। এভাবেই আমরা শাটল পরিষেবাকে চিনেছি। সেই ক্ষেত্রে এখন অভাবনীয় পরিবর্তন হয়েছে। প্রথমে বহুজাতিক সংস্থা গুলি দ্বারা প্রচলিত শাটল পরিষেবা শুধুই অফিস কর্মীদের সময় অসময় বাড়ি থেকে অফিস ও অফিস থেকে বাড়ি নিয়ে যেত। এই পরিষেবায় এখনো বিপুল অর্থলাভ হয় শাটল পরিষেবার মালিকদের। কিন্তু এছাড়াও বাজারে এসে গেছে শাটল নামের একটি উন্নতমানের পরিষেবা যা নিত্য অফিস যাত্রীদের কাছে আশীর্বাদ ছাড়া কম নয়। ওলা উবারও ব্যবসা বাড়াতে নিয়ে এসেছে কার পুল বা শেয়ার বিকল্প যার সাহায্যে যাত্রীদের অনেক আর্থিক সুরাহা হয়। আবার ক্যাব পরিষেবার লাভের ঘরেও শুন্য থাকে না। এছাড়াও কিছু গাড়ির মালিকরা নিত্য অফিস যাত্রীদের জন্য একটি পরিষেবা দিয়ে থাকেন। যেখানে এক একটি গাড়িতে গাদাগাদি করে যাত্রী ঠেসে কিছু লাভ করে থাকেন। যদিও এই উপার্জনের রাস্তা টি নিয়ন্ত্রিত নয় ও করোনা পরবর্তী সময়ের জন্য একেবারেই উপযোগী নয়।
পেট ক্যাব:
শুধু মাত্র আদরের পোষ্যদের নিয়ে যাওয়ার জন্য এই পরিষেবা। বিভিন্ন সংস্থা অসহায় পশু প্রেমিকদের সাহায্য করে কিছু উপার্জন করতে এই ক্ষেত্রে আসছে। তবুও এখনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা খুব বেশি নেই এই বাণিজ্যে। যদি অবলা জন্তুদের প্রতি বিরূপ মনোভাব না পোষণ করেন তো এই পরিষেবার কথা ভেবে দেখতে পারেন।
আউটস্টেশান গাড়ি ভাড়া:
গাড়ির মালিকদের একটি লাভজনক ব্যবসা হচ্ছে ভ্রমণ পিপাসী মানুষদের নিয়ে দু তিন দিনের জন্য শহরের কাছে পিঠে বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত। এই কাজে যাওয়া, আসা, শুল্ক, চালকের থাকা, খাওয়া দাওয়া সব কিছুর মূল্য অন্তর্গত থাকে। এই পথের পথিক এখন ওলা উবারও। তবে ওলা বা উবার যাত্রীর জন্য গন্তব্যে অপেক্ষা করেনা। কিন্তু যাত্রীকে দু পিঠের ভাড়াই দিতে হয়।
সরবরাহ ব্যবস্থা:
সমাজের ব্যায় করার অভ্যাস বাড়ার প্রতক্ষ প্রভাব ছাড়াও পরোক্ষ প্রভাবও পড়েছে পরিবহন ব্যবসার ওপর। আমাজন, ফ্লিপকার্টের মতো বিভিন্ন ছোট বড় ই কমার্স সাইটের পণ্য সরবরাহের জন্য পরিবহন পরিষেবা বাণিজ্যের পথ প্রশস্ত হয়েছে। উপার্জন খুবই লোভনীয় আর কাজের সুযোগ প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকে।
ট্রাক পরিষেবা:
ট্রাক পরিষেবা, পরিবহন ব্যবস্থার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শাখা। দীর্ঘ সময় ধরে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ট্রাক বোঝাই ভারী ভারী পণ্য ও গবাদি পশু চালান হয়। এই কাজ অবিরাম হয় আর এটি অত্যন্ত ঝুঁকি পূর্ণ। তাই উপার্জনের অংশও অধিক। যদিও এই কাজে নামার আগে লাইসেন্স, পারমিট, সুদক্ষ চালক, যথাযত কাগজপত্র ইত্যাদির ব্যবস্থা করে রাখতে হবে। যদিও বিনিয়োগ এই ক্ষেত্রে প্রচুর করতে হয়, অর্থ লাভ আখেরে সেরকমই ভালো হয়।
লাক্সারি ও দূরপাল্লার বাস:
কাছে পিঠের শহরে যেতে গেলে, আরামদায়ক লাক্সারি বাসের প্রলোভন এড়ানো সত্যিই কঠিন। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বাসগুলিতে চাপলে বোঝাই যায় না আপনি বসে ভ্রমণ করছেন। হেলানো সিট্, জানলায় পর্দা, সিনেমা প্রদর্শন, রাইডিং লাইট, প্রভৃতি সুব্যবস্থা আপনাকে মনে করবে বিমান যাত্রার কথা। এই ব্যবসায়ও প্রাথমিক বিনিয়োগ বেশি কিন্তু সুদক্ষ চালক থাকলে লভ্যাংশের পরিমান রীতিমতো আকর্ষণীয়। শুধু মনে রাখবেন আপনাকে বাসটিকে আর টি ও কার্যালয়ে নথিভুক্ত করাতে হবে।
জরুরি চিকিৎসা ভিত্তিক পরিষেবা:
বাস্তবিকতা বিচার করে দেখতে গেলে অতিমারী পরবর্তী সময়ে বিনোদন কেন্দ্রিক পরিষেবার তুলনায় জরুরি চিকিৎসা ভিত্তিক পরিষেবার চাহিদা ও ব্যবসার সুযোগ দুই বেশি। প্রাথমিক বিনিয়োগ ও আধুনিক রুগী পরিচর্যার সাধনযুক্ত এম্বুলেন্স প্রস্তুত করে একবার কোনো বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিং হোমের সাথে গাঁটছড়া বাধা যায়, তবে এই বাণিজ্যিক বিকল্পে প্রচুর লাভ।
সাধারণ চিকিৎসা ভিত্তিক পরিষেবা:
এই পরিষেবার আওতায় পরে ডাক্তারি সাজ সরঞ্জাম সহ ওষুধ থেকে চেয়ার টেবিল মায় পেন পর্যন্ত। বিখ্যাত হাসপাতাল গুলির সাথে যোগাযোগ এবং ভালো কোনো সরবরাহ সংস্থার সাথে যুক্ত হয়ে এই কাজটি করা যায় এবং সন্তোষজনক উপার্জন সম্ভব হয়।
দু চাকার পরিষেবা:
গাড়ির সাথে সাথে শহরে এখন বাইক পরিবহন পরিষেবা চালু হয়েছে। যাতে আপনি সহজেই অল্প খরচে নিজের গন্তব্যে যেতে পারেন কম সময়ের মধ্যে। তাছাড়াও সাইকেল ভাড়া পরিষেবা বিভিন্ন ব্যস্ত শহরে, যেখানে যানজট খুব বেশি ও সরকারি বেসরকারি পরিবহনের বেশি বিকল্প নেই, সেখানে ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করছে।
স্থানান্তরণ পরিষেবা:
অতীতে এক জায়গা থেকে ওপর জায়গায় মালপত্র পৌঁছে দেয়ার কাজটি শুধু ব্যবসায়ী ও কর্ম সংস্থা গুলিই দিতো মুভার্স আর প্যাকার্সদের। কিন্তু বর্তমানে সময়ের অভাব ও বিভিন্ন কারণে প্রায় অধিকাংশ সচ্ছল পরিবার এবং চাকরি রত যুবক যুবতীরা এই পেশাদারি পরিষেবার শরণাপন্ন হয় এক বাসস্থান থেকে ওপর ঠিকানায় যাওয়ার সময়ে। এই পরিষেবায় উপার্জনের সুযোগ আছে কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যেন কোনো জিনিস যাত্রার সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
ভ্রমণ সংস্থা:
এখন অনেকেই ট্র্যাভেল এজেন্সির মাধ্যমে বেড়াতে যান দেশে বিদেশে। সেক্ষেত্রে এরকম কোনো পরিষেবায় সাথে যুক্ত হতে পারলে আপনার পরিবহন ব্যবসা বিপুল অর্থ লাভ করতে পারে। বিনিয়োগ আপনার সুবিধে মতো করতে পারবেন। এই কাজে সফল হতে গেলে আপনাকে আপনার পরিষেবার প্রচার নিয়ে ভাবতে হবে ও পরিচিতি গড়ে তুলতে হবে বাজারে। বিস্বস্ত ও গুণান্বিত যানবাহন, চালক প্রভৃতি থাকা অত্যন্ত জরুরি মক্কেলের কাজ পেতে গেলে। একবার আপনার ব্যবসা দাঁড়িয়ে গেলে আর ঘুরে তাকাতে হবে না আপনাকে।
ভার্চুয়াল মুদিখানা:
বিগ বাস্কেট বা গ্রফর্সের মতো সংস্থার সাথে যুক্ত হলে দৈনিক প্রয়োজনীয় খাবার সামগ্রী সরবরাহ করে পেতে পারেন উপার্জনের সুযোগ।
স্কুল বাস ও কার পুল:
ছাত্র ছাত্রীরা সারা বছর স্কুল যাতায়াত করে বাস বা কারপুলের সাহায্যে। এই কাজে উপার্জনের রাস্তা সারা বছর খোলা থাকে। কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হতে পারলেই আপনি এই পরিষেবায় নিজের পরিবহন বাণিজ্যকে কাজে লাগাতে পারবেন।
পরিবহন পরিষেবাকে সাফল্যমন্ডিত করে তোলার অনেক রাস্তা আছে। ওপরে তার মধ্যে প্রমুখ বিষয়গুলি আলোচনা করা হলো। এই পরিষেবায় নিযুক্ত হবার আগে মনে রাখবেন ২০২০ সালের আগে ও পরে, বাণিজ্যের দৃশ্যপটে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। পরিবহন পরিষেবাও তার মধ্যে পড়ে। বর্তমান অবস্থা জরিপ করে তবেই এই ব্যবসায়ে নামার সিদ্ধান্ত নেবেন।