ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি কিভাবে শুরু করা যায়?
ধরে নিন ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সির উন্নতির শিখরে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলি আপনার নখদর্পণে, আপনি একান্তে, আপনার সুনিপুন বানিজ্যিক দক্ষতায় গ্রাহকদের আকৃষ্ট করছেন এবং অবলীলায় অর্থাগম এর সাক্ষী হতে পারছেন শুধুমাত্র মাউসের কয়েকটি ক্লিকে। অবিশ্বাস্য মনে হলেও নীচের কয়েকটি ধাপ অনুসরন করে আপনি আপনার স্বপ্নকে অতি সহজেই বাস্তবায়িত করতে পারবেন।
এবার দেখে নেওয়া যাক কিভাবে এই ব্যবসা শুরু করা যায়।
ডিজিটাল এজেন্সি শুরুর কয়েকটি ধাপঃ
১। পরিকল্পনাঃ
যে কোন বিষয়েই পারদর্শী হওয়ার প্রথম ধাপ হল লক্ষ্য স্থির করা এবং লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য সঠিক ছক কষে ফেলা। বিজ্ঞাপন জগতের কিংবদন্তি পল আরডেন বলেছেন লক্ষ্য স্থির না করে বেশী দূর এগোনো মুশকিল। কি কি ভাবে আপনি সঠিক পরিকল্পনা করতে পারবেন সেই বিষয়ে গুগল করলে আপনি হয়ত অনেক কিছুই পেয়ে যাবেন। তবে এ ক্ষেত্রে সব থেকে ভালো উপায় হল উল্টো দিক দিয়ে ভাবা। এই ব্যাপারে একটু বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা যাক।
ধরুন আপনি একটি এজেন্সি শুরু করেছেন তাহলে পাঁচ বছর বাদে আপনি সেই এজেন্সিকে কোন জায়গায় দেখতে চান
- আপনার বার্ষিক আয়ের লক্ষ্যমাত্রা কি?
- সেই লক্ষ্যে পৌছতে হলে আপনার গ্রাহক পিছু আয় কত করতে হবে?
- সেই অনুযায়ী আপনার বার্ষিক গ্রাহক সংখ্যা কত হবে?
- আপনি কোন ক্ষেত্রের গ্রাহক আকৃষ্ট করতে চান?
উপরের প্রশ্নের উত্তরগুলো যখন আপনার জানা তখন আপনি আস্তে আস্তে শুরুর দিকে আসুন।ধরে নিলাম আপনার বার্ষিক আয়ের লক্ষ্য ১০ লক্ষ টাকা।আপনি বছরে ২০ থেকে ২৫ জন গ্রাহকের সাথে কাজ করতে চান।তাহলে আপনাকে প্রতি মাসে ২-৩ জন গ্রাহকের সাথে কাজ করতে হবে এবং গ্রাহক প্রতি আপনাকে ৪০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা উপার্জন করতে হবে।এবার তাহলে আপনার লক্ষ্য হওয়া উচিৎ আপনার উপযুক্ত পরিসর থেকে এইরকম গ্রাহকের সন্ধান করা।
২। শেখার অভ্যেস গড়ে তুলুনঃ
শেখার কোন শেষ নেই।।পৃথিবীর প্রায় অনেক সফল ব্যাক্তিরা প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু শিখতে থাকেন। ঠিক সেভাবেই আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কিত জ্ঞানবৃদ্ধির অভ্যেস গড়ে তুলুন। আর এর মাধ্যমেই আপনি এই জগতকে আরো ভালো করে বুঝতে পারবেন। নিজের জ্ঞানের পরিসর বাড়ানোর জন্য উপযুক্ত অর্থ আর সময় ব্যয় করতে কখনো পিছিয়ে আসবেন না।
- পি পি সি (পে-পার-ক্লিক মার্কেটিং)
- এস ই ও
- ইমেল মার্কেটিং ক্যাম্পেন
- গ্রাফিক ডিজাইন
- বিষয়বস্তুর বিপণন (কন্টেন্ট মার্কেটিং)
উপরের বিষয় গুলি সম্পর্কে একটি সম্যক ধারণা হলে আপনি খুব সহজেই আপনার উপযুক্ত ক্ষেত্রটি খুঁজে পাবেন।
৩। আপনার উপযুক্ত ক্ষেত্রটি চিনুনঃ
আপনার জন্য উপযুক্ত ক্ষেত্র টি বেছে নিয়ে নিজেকে বাকিদের থেকে আলাদা করে তুলুন। কেবল মাত্র সেই ক্ষেত্রের গ্রাহকদের মুল চাহিদা গুলি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হন।
৪। নিজের প্রতিযোগীদের চিনুনঃ
আপনি যখন এখন একটা ধারণা করতে পেরেছেন আপনার ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি কিভাবে শুরু করবেন এবং কোন ক্ষেত্র থেকে আপনার সম্ভাব্য গ্রাহকরা আসবে,এবার পরবর্তী ধাপ হল নিজের প্রতিযোগীদের চেনা।আপনি যত ভালো করে আপনার প্রতিযোগীদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন তত ভালো আপনি তাদেরকে চিনতে পারবেন।এবং ব্যবসায় তাদের দুর্বল জায়গা খুঁজে নিজেকে আর ভালো করে প্রস্তুত করতে পারবেন এবং অনায়াসে তাদেরকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যেতে পারবেন।
আপনি আপনার প্রতিযোগীদের থেকে তারা তাদের ব্যবসাকে কিভাবে নগদিকরন করেছে সেটাও লক্ষ্য করতে পারবেন।
সাধারণত নিম্নলিখিত কয়েকটি উপায়ে আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সিকে নগদিকরন করতে পারবেন
- অনুদান,বিনিয়োগ এবং শেখানোর মাধ্যমে
- ডিজিটাল বা সরাসরি কোন পন্য বিক্রি করার মাধ্যমে
- বিজ্ঞাপন এবং অনুমোদিত (এফিলিয়েট) লিঙ্কের মাধ্যমে
৫। নিজের ওয়েবসাইট খুলুনঃ
ওয়েবসাইট খোলার আগে বিষয়বস্তুর এবং আপনার প্রতিযোগীদের সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা থাকা খুব ই প্রয়োজন। এর পর আপনি আপনার পছন্দ মত ডোমেন নাম খুঁজে নিয়ে আপনার ওয়েবসাইট চালু করতে পারেন।
৬। পোর্টফোলিও গড়ে তুলুনঃ
যখন আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং এর ব্যবসা শুরু করতে চাইছেন এবং নিজের নাম চারিদিকে ছড়াতে চাইছেন, তখন আপনাকে বিনামূল্যে আপনার গ্রাহকদের কিছু পরিষেবা দিতে হতে পারে। একবার আপনি আপনার গ্রাহকদের ভরসা লাভ করতে পারলে খুব সহজেই সম্ভাব্য অনেক গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে পারবেন। দেখে নেওয়া যাক একটি ভালো পোর্টফলিও গড়ে তোলার কৌশল।
- বিষয়বস্তুর ওপর গভীর অনুশীলন
- গ্রাহক প্রশংসা পত্র
- গ্রাহকদের জন্য ভবিষ্যত পরিকল্পনা
একটি সুন্দর পোর্টফোলিওই সম্ভাব্য গ্রাহকদের আপনার প্রতি বিশ্বাস গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।এর মধ্যে দিয়েই আপনি সম্ভাব্য গ্রাহকদের দেখাতে পারবেন যে আপনি কি কি ধরণের পরিষেবা দিয়ে থাকেন এবং থাকবেন।
৭। ব্যবসার মডেল গড়ে তুলুনঃ
বিভিন্ন উপায়ে আপনি আপনার পারিশ্রমিক ধার্য করতে পারেন। অল্প সময়ের কাজের জন্য আপনি প্রতি ঘণ্টা পিছু পারিশ্রমিক ধার্য করতে পারেন। অপর ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি কাজের জন্য আপনি মাসিক পারিশ্রমিক নিতে পারেন, তবে সে ক্ষেত্রে প্রযোজ্য শর্তাবলী সম্পর্কে গ্রাহকদের পূর্বেই অবগত করে দিন।
৮। সামাজিক মাধ্যমে নিজের উপস্থিতি গড়ে তুলুনঃ
আপনার ব্যবসাকে জনসাধারণের মাঝে তুলে ধরার জন্য সামাজিক মাধ্যমের ভূমিকা অনস্বীকার্য।এই সময়ে দাঁড়িয়ে আমাদের যেকোনো বিষয়েই কোন তথ্যের প্রয়োজন হলে আমরা সামাজিক মাধ্যমেই আগে তার খোঁজ করি।আর যেহেতু বিনামুল্যেই সামাজিক মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খোলা যায় তাই তার সুবিধা নেওয়াই যেতে পারে।এর মাধ্যমে আপনি সম্ভাব্য অনেক গ্রাহকদের খুঁজে পাবেন এবং বিশ্বব্যাপী আপনার এজেন্সির নাম ছড়াতে পারবেন।
৯।লিড তৈরি করুনঃ
লিড তৈরি করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে।যদিও প্রথম দিকে তা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য হতে পারে।তবে হাল না ছেড়ে দিয়ে আপনি কোন গ্রাহকদের লক্ষ্য করতে চান আগে তা স্থির করুন।আপনি আপনার ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সির নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলতে পারেন।সেই চ্যানেলে আপনার কাজ সম্পর্কিত বিষয়বস্তু যেমন আপনার আগের কোন কেসের অনুশীলনের ব্যাপারে,পূর্ববর্তী গ্রাহকদের আপনার এজেন্সি সম্পর্কে বলা কিছু বক্তব্য,আপনি গ্রাহকদের কি কি পরিষেবা দিয়ে থাকেন ইত্যাদি ব্যাপারে নিয়মিত ভিডিও দিতে পারেন।আপনার ভিডিও দেখে সম্ভাব্য গ্রাহকরা আপনার এজেন্সির ব্যাপারে আর স্পষ্ট ধারনা লাভ করতে পারবে।
এছাড়াও আর একটি উপায় হল অনুমোদিত বিপণন(এফিলিয়েট মার্কেটিং)।আপনি যখন কোন কোম্পানির সাথে যুক্ত হন আপনি নিজের ব্যবসার পরিসরকে কিছুটা বড় করে তোলেন।
কোন কোম্পানির কাছে যাওয়ার আগে খুব ভালো করে তাদের ব্যাপারে অনুশীলন করুন এবং তাদের চাহিদাটা ঠিক কি সেটা সঠিকভাবে বোঝার চেষ্টা করুন।আর সেইভাবেই মেইলে তাদের সাথে যোগাযোগ করুন।এজেন্সির শুরুর দিকে যখন টাকার পরিমান অনেকটাই কম থাকে তখন এই উপায়ে লিড তৈরি করায় সবথেকে ভালো।
আপনাকে একটা কথা খেয়াল রাখতে হবে যে আপনাকে কিন্তু নিজের গ্রাহকদের জন্যও লিড তৈরি করতে হবে।তাই আপনি যদি সেই কাজটি আগে নিজের জন্য করতে পারেন তাহলে সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে খুব সহজেই আপনি আপনার সম্ভাব্য গ্রাহকদের লিড তৈরি করতে পারবেন।
আপনি কি ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি শুরু করার জন্য প্রস্তুত?
নতুন কিছু শুরু করার আগে আমাদের অনেক উন্মাদনা থাকে।কিন্তু ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি শুরু করার ক্ষেত্রে আপনাকে আপনার প্রতিটা পদক্ষেপ সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল থাকতে হবে।আর এই অনুচ্ছেদকে আপনার এজেন্সি তৈরির পথপ্রদর্শক হিসেবে আপনার সাথে রাখতে পারেন।কিন্তু সবশেষে সঠিক অধ্যায়ন,স্পষ্ট পরিকল্পনা আর অভিজ্ঞতাই পারবে আপনার ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সিকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিতে।