কীভাবে সহজ পদক্ষেপে ট্র্যাভেল এজেন্সি ব্যবসা শুরু করবে
বাঙালি ভ্রমণ পিপাসু জাতি হিসেবেই পরিচিত, এছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতি বছর ভারতে বেড়াতে আসেন প্রচুর মানুষ। তবে আজকের ব্যস্ততার যুগে অনেকের পক্ষেই নিজেদের বেড়ানোর যাবতীয় বন্দোবস্ত নিজেরা করা সম্ভব হয়না। বিশেষত বয়স্ক মানুষ অথবা যারা পরিবার নিয়ে ঘুরতে যান তাদের তো একদমই সময় হয় না। তাই তাঁরা সব সময়ই চান আগে থেকেই বেড়ানো সংক্রান্ত সমস্ত ব্যবস্থা করে রাখতে যাতে বেড়াতে গিয়ে কোনও সমস্যায় পড়তে না হয়। মূলত ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসার লাভের ফসল আসে এখান থেকেই।
অত্যন্ত কম বা বিনা পুঁজিতে ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা শুরু করা সম্ভব। বেড়ানোর প্যাশন, খুঁটিনাটির প্রতি নজর, মানুষের সঙ্গে সংযোগ ও সম্পর্ক তৈরি করা ও ভাল সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষমতা। এই কয়েকটি জিনিসকে পুঁজি করেই শুরু করতে পারো তোমার পর্যটন সংস্থা বা ট্যুরিজম ব্যবসা। এমনকি এই আধুনি সময়ে ঘরে বসেই ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা করা সম্ভব।
কিভাবে শুরু করবে?
কাজের ও পরিষেবার ভিত্তিতে নানা ধরনের ট্রাভেল এজেন্সি শুরু করা যেতে পারে, আবার একটি ট্রাভেল এজেন্সিই সব ধরনের পরিষেবা দিতে পারে। ট্রাভেল এজেন্সির কাজ হতে পারে ট্রেন ও প্লেন–এর টিকিট কেটে দেওয়া, হোটেল বুকিং, ট্রাভেল প্যাকেজ বিক্রি অথবা নিজেরাই ট্যুর অর্গানাইজ করা।
ছোট ট্রাভেল এজেন্সিগুলো সাধারণত কোনও এক বা দুটি পরিষেবা দিয়েই ব্যবসা শুরু করে। যেমন কোনও ট্রাভেল এজেন্ট শুধুমাত্র বাস, ট্রেন ও প্লেন–এর টিকিটের এজেন্সি নিয়ে সেই টিকিট বিক্রি করেই ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা চালাতে পারে, পাশাপাশি হোটেল বুকিংও করতে পারে।
কোনও ট্রাভেল এজেন্সি আবার ট্রাভেল প্যাকেজ তৈরি করে বেচতে পারে। অর্থাৎ একটি বেড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় ব্যবস্থা করে দেবেন ওই সংস্থার কর্মীরা। টিকিটের ব্যবস্থা, হোটেল, খাওয়া দাওয়া, স্থানীয় যাতায়াত সহ সব কিছুর ব্যবস্থা করা থাকবে, গ্রাহক পুরো প্যাকেজের জন্য একটি মূল্য দেবেন। এক্ষেত্রে ট্রাভেল এজেন্সির কর্মীকে অতিথিকে সঙ্গ দিতে নাও হতে পারে।
আবার একটি ট্রাভেল এজেন্সি এমন ট্যুর প্যাকেজ তৈরি করতে পারে যেখানে তাদের কর্মীরাই গ্রাহকদের সঙ্গে গন্তব্যস্থলে পৌঁছবে ও গ্রাহকদের বেড়ানো সংক্রান্ত যাবতীয় প্রয়োজনীয়তার দায়িত্ব নেবে। এক্ষেত্রে সাধারণত একাধিক পরিবার ও দলকে নিয়ে একটি বড় ট্যুর করানো হয়। এই প্রতিটি ধরনের পরিষেবারই নিজস্ব ক্রেতা রয়েছে।
তোমাকে ব্যবসা শুরু আগে স্থির করে নিতে হবে তুমি এর মধ্যে কোনটি করতে চাও বা কোন কোন পরিষেবা তুমি তোমার ক্রেতাদের দিতে চাও। প্রতিটি ব্যবসারই যেমন কিছু সুবিধা রয়েছে, তেমনই কিছু ঝুকিও।
ট্রাভেল পরিকল্পনা কি ভাবে করবে?
যে কোনও ব্যবসাতেই বিজনেস প্ল্যান বা ব্যবসার পরিকল্পনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমেই ঠিক করে নাও তোমার গ্রাহকদের কোন কোন জায়গায় নিয়ে যাবে। সেই জায়গাটি সম্পর্কে তোমার ভাল মতো জানা বোঝা থাকা প্রয়োজন। ব্যবসা শুরুর আগে তোমার নিজেকে সেই জায়গাটিতে অন্তত এক বার পৌঁছে যেতে হবে।
সেই জায়গার হোটেল মালিকদের সঙ্গে মৌখিক চুক্তির ভিত্তিতে ঠিক করে নিতে হবে তুমি সেখানে গ্রাহকদের পাঠালে অথবা গ্রাহকদের নিয়ে গেলে তারা কী কী সুযোগ সুবিধা দিতে পারবে। এবং তোমার সংস্থাকে কত শতাংশ ট্রাভেল এজেন্ট কমিশন দেবে। সাধারণত বুকিংয়ের ১০ থেকে ২০ শতাংশ টাকা ট্রাভেল এজেন্ট পেয়ে থাকেন। এছাড়াও স্থানীয় পরিবহণ কোম্পানির সঙ্গে কথা বলে গাড়ির ব্যবস্থাও জেনে নিতে হবে।
এক বার একটি গন্তব্য সম্পর্কে জানা বোঝা স্পষ্ট হয়ে গেলে সেই অনুযায়ী আপনাকে আইটেনারি সাজাতে হবে ও সেটা ক্রেতার কাছে সঠিক মূল্যে বিক্রি করতে হবে।
এই ব্যবসা করতে হলে তোমাকে সব সময়ই নতুন নতুন জায়গার খোঁজ চালিয়ে যেতে হবে ও নতুন নতুন বেড়ানোর আইডিয়া নিয়ে আসতে হবে, যাতে তুমি তোমার ব্যবসায়িক প্রতিযোগিদের থেকে কয়েক ধাপ এগিয়ে থাকতে পারো।
ওয়েবসাইট থাকা কি জরুরী?
এই ব্যবসার জন্য তোমার নিজস্ব একটি ওয়েবসাইট থাকা বাঞ্ছনীয়। শুরুতে একটি ফ্রি ওয়েবসাইটও তৈরি করে নিতে পারো। যেখানে তোমার সংস্থার যাবতীয় পরিষেবা সম্পর্কে গ্রাহককে জানাতে হবে। তোমাদের যে যে ট্যুর প্যাকেজ রয়েছে সে বিষয়ও বিবরণ দিতে হবে। এবং সেই পরিষেবার জন্য তুমি কত মূল্য ধার্য করেছো তা লিখতে হবে। ট্রাভেল এজেন্সির ওয়েবসাইটকে আকর্ষণীয় করে তোলার সবথেকে ভাল উপায় হল উচ্চমানের ও প্রচুর সংখ্যক ছবি ব্যবহার করা। যাতে সেই ছবি দেখেই গ্রাহক তোমার ট্যুর প্যাকেজ কিনতে আগ্রহী হন।
শুধু ওয়েসবাইট নয় তারসাথে আরও আধিক মানুষকে তোমার পরিসেবা সম্পর্কে জানাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবসার নামে একাউন্টও খোলা যেতে পারে। ইউটিউবেও তোমার বেরানোর ভিডিও গুলো আপলোড দিলে মানুষের সহজেই নজর কারতে সুবিধা হবে। আর এভাবেই তোমার ব্যবসা অল্প সময়ে অধিক বড় হবে।
ট্রাভেল এজেন্সি খোলার নিয়ম কি?
অন্য যে কোনও ব্যবসার মতোই ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা খোলার জন্যও কয়েকটি নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। তবে বর্তমানে ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা শুরু করার নিয়মগুলোকে খুবই সহজ করে দেওয়া হয়েছে।
১. কোম্পানির ধরন স্থির করা
প্রথমেই ঠিক করতে হবে তোমার কোম্পানির ধরন কী হবে? বেশিরভাগ ট্রাভেল এজেন্সি কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি গঠন করে। প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি নানা সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে। এছাড়া অনলাইনে পরিষেবা দেওয়ার জন্যও প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি প্রয়োজন।
তবে ছোট আকারে শুরু করতে চাইলে লিমিটেড লায়াবিলিটি পার্টনারশিপ বা ওয়ান পার্সন কোম্পানি হিসেবে শুরু করাই ভাল। তাছাড়া তুমি যদি চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা শুরু করতে চাও বা ধীরে ধীরে ব্যবসা শুরু করে বাড়াতে চাও তাহলে একা শুরু করে ওয়ান পার্সন কোম্পানি গঠন করো, তোমার সঙ্গে আরও দু–এক জন থাকলে গঠন করতে পারো লিমিটেড লায়াবিলিটি পার্টনারশিপ কোম্পানি।
কোম্পানির গঠন ঠিক হয়ে গেলে স্থানীয় প্রশাসনের থেকে ট্রেড লাইসেন্স করাতে হবে। এই লাইসেন্স নেওয়ার আগে তোমার কোম্পানির নাম ঠিক করে নিতে হবে এবং একটি অফিসের ঠিকানা দিতে হবে।
৩. ব্যাঙ্কে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলা
ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসায়িক লাইসেন্স পেয়ে গেলে ব্যংকে তোমাকে একটি কারেন্ট অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে যার মাধ্যমে তোমার যাবতীয় ব্যবসায়িক লেনদেন সম্পন্ন হবে। সরকারি বা বেসরকারি যেকোনও ব্যাঙ্কেই এই অ্যাকাউন্ট খোলা যেতে পারে।
৪. ব্যবসার রেজিস্ট্রেশন
কলকাতায় রেজিস্ট্রার অফ কোম্পানির অফিস রয়েছে নিজাম প্যালেস বিল্ডিংয়ে। তবে সাধারণভাবে কোনও চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের সাহায্যে ব্যবসার রেজিস্ট্রেশন করানো সহজ। সেক্ষেত্রে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টই যাবতীয় নিয়ম কানুন ও কাগজ পত্র তৈরি করা দায়িত্ব নেবে। বর্তমানে অনেক সংস্থাই অনলাইনেই এই পরিষেবা দিয়ে থাকে।
৫. জিএসটি রেজিস্ট্রেশন
অন্য সব ব্যবসার মতোই ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসাও জিএসটি-র আওতায় পড়ে। ফলে নির্দিষ্ট পরিমাণের ওপর ব্যবসা করলে জিএসটি রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। তবে ব্যবসার একদম শুরুতেই জিএসটি রেজিস্ট্রেশন না করালেও চলবে। ব্যবসার বার্ষিক টার্নওভার ৪০ লক্ষ টাকা ছাড়ালে তবেই জিএসটি রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
কেমন লাভ হয়?
আজকাল এই ব্যবসায় মুনাফার পরিমাণ অত্যাধিক। পরিচিত বাস মালিক, হোটেল বা থাকার জায়গায় ভালো ডিস্কাউন্ট করাতে পারলে আর সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকলে যে কেউ এ ব্যবসায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত লাভ করতে পারে।
তাই তুমিও চাইলে একদম বিনা পুঁজিতেই বা খুব স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে এ ব্যবসায় অধিক মুনাফা অর্জন করতে পারো। আর খুব সহজেই একজন প্রতিষ্ঠিত উদ্যক্তা বনে যাতে পারো।