অর্গানিক ফার্মিং সম্পর্কে আপনার কি কি জানা প্রয়োজন?
বিংশ শতকের শুরু থেকেই এক নতুন ধরনের কৃষিকাজের পন্থা যা বিংশ শতকের শুরুর দিকে খুবই বিখ্যাত হয়েছিল। এই পন্থার উদ্ভব হয়ে কৃষিকাজের প্রক্রিয়ায় দ্রুত পরিবর্তনের ফলে। এই পন্থাকেই অর্গানিক ফার্মিং বলা হয়। বর্তমানে সারা বিস্বে ৭০ মিলিওন হেচতর জমিতে অর্গানিক ফার্মিং হয়। আর এই ধরনের কৃষিকাজে যে দেশ সবছেয়ে বেশি এগিয়ে সে হল অস্ট্রেলিয়া। কারন এই ৭০ মিলিওন হেচতর জমির মধ্যে অর্ধেকের বেশি অরট্রেলিয়ায় অবসস্থান করে। সারা বিস্বজুরে অসঙ্খ্য ব্যাক্তি ও সংস্থা নিজেরদের অর্গানিক ফার্মিং এর পন্থা বিকাসে অব্যাহত রয়েছে। তাই এই ধরনের কাজে বিকাশের সুযোগও প্রচুর। সেই কারনে এই ধরনের ক্রিসিকাজকে বর্তমানে বহু মানুষ নিজের জিবিকা অর্জনের উপায় হিসেবে বেছে নিচ্ছে।
তবে বেছে নিতে গেলে আমাদের এই অর্গানিক ফার্মিং বা জৈব কৃষিকাজ সম্পর্কে আগে বিস্তারিত জ্ঞান অর্জন করতে হবে। কারন সেই জ্ঞানের ভিত্তিতে আপনি যদি এই ধরনের কৃষিকাজ শুরু করেন তবেই আপনি এই কাজে সাফল্য লাভ করতে পারবেন। তাই আজ আমারা এই প্রবন্ধে অর্গানিক ফার্মিং সংক্রান্ত বেশ কিছু বিশয়ে বিশেষ আলোচোনা করব। তাই আসুন আর দেরি না করে মূল বিষয়গুলি নিয়ে আলোচোনা শুরু করা যাক এবং জেনে নেওয়া যাক অর্গানিক ফার্মিং সংক্রান্ত কিছু তথ্য।
অর্গানিক ফার্মিং এর প্রকারভেদ
অর্গানিক ফারমিং সাধারনত একাধিক প্রকৃতির হয়ে থাকে। আর এই সকল প্রকৃতির অর্গানিক ফার্মিং সম্পর্কে আমরা যদি না জেনে থাকি, তবে অর্গানিক ফার্মিং সংক্রান্ত বিষয়বস্তু জানা কখনই আমাদের সম্পূর্ণ হবে না। তাই আসুন আমরা আগে এই বিভিন্ন প্রকারের অর্গানিক ফার্মিং সম্পর্কে জেনে নিই।
১)শস্য বৈচিত্র-
অর্গানিক ফার্মিং এর প্রাথমিক স্তরের কার্জকলাপে অন্যতম হল শস্য বৈচিত্র। তার কারন হল কৃষিবিজ্ঞানিদের মতে একই স্থানে একাধিক প্রক্রিতির শস্য উতপাদন করলে সেই অংসের জমির উর্বরতা প্রচণ্ড পরিমানে বৃদ্ধি পায়। এছাড়া একাধিক ধরনের শস্য রোপণ করা হলে সেই শস্য গুলির জন্য যে সমস্ত উপকারি পোকামাকড় এবং জিবানু মাটিতে বাসা বাধে,তারা প্রত্যেকেই মাতির উর্বরতে ব্রিদ্ধিতে বিশেষ সহায়তা করে। এছাড়া শস্য বৈচিত্র পরিবেশের জন্যও উপকারি। কারন একাধিক ধরনের পন্য একই স্থানে উৎপাদন করা হলে জীব বইত্র ও বজায় থাকে এবং বহু প্রজাতি, যারা বিলুপ্তপ্রায়, তাদের সংরক্ষন করা যায়।
২)মাটির ব্যাবস্থাপনা-
অর্গানিক ফার্মিং দ্বারা চাষ করার সময় কৃষিকাজ শুরু করার পূর্বে মাটির জন্য বিশেষ কিছু ব্যাবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে। এই ব্যাবস্থা গুলির মধ্যে অন্যতম হল সবুজ সার এবং কম্পস্টিং সার ব্যাবহার করে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করা।
৩)আগাছা নিধন-
কৃষিকাজের সময় জমিতে কখনো কখনো বেশ কিছু আগাছা জন্মাতে দেখা যায়। এই আগাছাগুলি অধিকাংশক্ষেত্রেই জমির উর্বরতা শক্তি খর্ব করে। তাই অর্গানিক ফার্মিং এর গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল সঠিক সময়ে এই আগাছাগুলিকে নিধন করা।
৪)গবাদি পশু- মাংস, দুধ এবং দিমের জন্য গবাদি পশু পালন করা খুবই সাধারণ একটি ব্যাপার। তবে এই বিষয়ে আরও বেশি গুরুত্ব দিয়ে কৃষিবিজ্ঞানীরা এই কাজকে বিশেষ জনপ্রিয় করে তুলেছে। তারা জানিয়েছেন যে গবাদি পশুকে যদি খাদ্য হিসেবে প্রাক্রিতিক খাদ্য সরবরাহ করা যায় তবে তাদের স্বাস্থ্যে বিশেষ উন্নতি হবে এবং তারা আরও বেশি পরিমানে মাংস দুগ্ধ ও দিম প্রদান করতে পারবে।
অর্গানিক ফার্মিংএর সুবিধা ও অসুবিধা
কোন ধরনের কাজ শুরু করার আগে জেনে নেওয়া ভাল যে যে কাজে আমরা কি কি সুবিধা পাব এবং কি কি অসুবিধার সম্মুখীন হব। তাই আপনি যদি অর্গানিক ফার্মিং শুরু করার কথা ভেবে থাকেন তাহলে আগে জেনে নিন যে এই ব্যাবসার সুবিধা ও অসুবিধা কি কি।
সুবিধা
১)অর্গানিক ফার্মিং দ্বারা জথাসম্ভব কম ক্রিত্তিম সার ব্যাবহার করে সর্বাধিক পন্য উৎপাদন করা যায়। আর সেই কারনে জৈব কৃষিকাজে ভিসন উর্বর প্রক্রিতির মাটি খুব সহজেই প্রস্তুত করা যায়।
২)অর্গানিক ফার্মিং থেকে প্রাপ্ত সকল প্রকারের শস্যের ক্ষেত্রে কোনরকম জেনেটিক মডিফিকেসন করা কোন খাদ্য থাকার সম্ভাবনা থাকে না। তার কারন এই কৃষিপ্রক্রিয়ায় সকল সার জৈব হয়ে থাকে।
৩)অর্গানিক ফার্মিং এর কাজ করার সময়ে আপনাকে আলাদা করে সারের জন্য অতিরিক্ত খরচ করতে হয়না কারন জৈব বর্জ্য ব্যাবহার করে আপনি আপনার কৃষিক্ষেত্রের আসেপাসেই নিজের সার উতপাদনের ব্যাবস্থা করতে পারেন।
অসুবিধা
১)অর্গানিক ফার্মের ব্যাবসা শুরু করলে তাতে অনেক ক্ষেত্রেই বিভিন্ন ভাতা থেকে বঞ্চিত হতে হয় যা অন্যান ব্যাবসায় পাওয়া যায়।
২)কোন পন্যের উতপাদনের সূচনা থেকে উতপাদন শেষ করে বাজারে পন্য প্রেরন করা অবধি কাজাএর প্রক্রিয়াটি এই ব্যাবসায় খুবই বড়। তাই এই কাজ সম্পাদন করতে অনেক বেশি সময় ধরে আপনাকে কাজ করতে হয় খুব অল্প পরিমাণ শস্যের জন্য।
৩)বাজারের বেশ কিছু ক্ষেত্রে এমন কিছু সমস্যা দেখা দেয় যা শুধু অর্গানিক ফার্মগুলিকেই বহন করতে হয়। তাই এই সমস্যাগুলির কথা না জেনে ব্যাবসায় নামলে আপনাকে বাজারে নিজের পন্য বিক্রয় করতে গিয়ে খুব জতিল কোন পরিস্থিতিতে পরতে হতে পারে।
ভারতে কিভাবে অর্গানিক ফার্মিং করা যায়
এতরকম ভাল তথ্য জানার পর আপনি যদি নিজে অর্গানিক ফার্মিং শুরু করার কথা ভাবতে শুরু করে থাকেন, তবে তা খুবই স্বাভাবিক। তবে এই ব্যাবসা শুরু করার আগে আপনাকে জানতে হএ ভারতে এই ব্যাবসা শুরু করার জন্য প্রাথমিক পদক্ষেপ গুল কি কি। তাই আমরা সেই বিশয়েই এবার আলোচোনা করব।
১)জমি-
অর্গানিক ফার্মিং এর ব্যাবসার প্রথম ও সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপুর্ন কাজ হল জমি সংরক্ষন। কারন আপনি যদি কোন জমির ব্যাবস্থা না করতে পারেন, তবে আপনি কনভাবেই অর্গানিক ফার্মিং করতে পারবেন না।
২)অর্গানিক সার-
এরপর আপনাকে অর্গানিক ম্যানিউর বা জৈব সার প্রস্তুতির কথা ভাবতে হবে। যেহেতু এই সারই আপনার এই কৃষিকাজের প্রক্রিয়ায় সমস্ত ক্ষেত্রে ব্যাবহার হবে, তাই জমি সগ্রক্ষনের পর যত তারাতারি সম্ভিব আপনাকে অর্গানিক সার বানানর প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবগত হয়ে সেই সার উতপাদন শুরু করতে হবে
৩)সার প্রদান এবং বীজ বপন-
আপনি নিজের সার প্রস্তুত করা শুরু করতে পারলে আপনি খুব সহজেই এর পরবর্তী পদক্ষেপে অগ্রসর হতে পারবেন। ার এই পদক্ষেপ হল জমিতে সার প্রদান করে জমিকে উর্বর করে সেখানে বীজ বপন করা।
এই তিনটি পদক্ষেপকে যদি আপনি সঠিকভাবে অনুসরন করতে পারেন, তবে আপনি খুব সহজেই ভারতে অর্গানিক ফার্মিং করতে পারবেন। তবে এরপরে আরও একটা কাজ বাকি থেকে যায় যেটা না করলে এই সমস্ত খাটনি বৃথা হয়ে যেতে পারে। তা হল বিক্রয়ের ব্যাবস্থা। আপনি যদি আপনার পন্য সঠিক দামে বিক্রয় করতে পারেন, তবেই আপনার সেই পন্য উতপাদন করা সার্থক। তাই ব্যাবসা শুরু করার সময়ে দেখে নেওয়া বাঞ্ছনিয় যে আপনি এই ব্যাবস্থা করতে পারবেন কিনা।
এতক্ষন আমরা অর্গানিক ফার্মিং নিয়ে নানারকম আলোচোনা করলাম। আমরা জানলাম অর্গানিক ফার্মিং কি, তা কি কি প্রকারে দেখা যায়, তার সুবিধা এবং অসুবিধা কি কি এবং ভারতে অর্গানিক ফার্মিং করার জন্য কি করতে হবে। এই তথ্যগুলি আপনাদের ব্যাপক আকারে সাহাজ্য করবে যদি আপনি নিজে অর্গানিক ফার্মিং শুরু করতে ইচ্ছুক থাকেন। সেই কারনে এই তথ্যগুলি খুবই ভাল করে জেনে নেওয়া দরকার। যাতে প্রয়োজনে আপনি এই তথ্যগুলিকে সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করে নিজের অর্গানিক ফার্মের কাজে নতুন কোন পদক্ষেপ নিতে পারবেন এবং পুরন ত্রুটি সংশোধন করতে পারবেন যা আপনার ফার্মিংএর মান কে উন্নত করবে।