কীভাবে ভারতে একটি চুড়ির ব্যবসা শুরু করবে
বাঙালি মেয়েদের উৎসব মানেই শাড়ি, কপালে টিপ আর হাত ভর্তি চুড়ি। এই আধুনিক সময়েও কম বেশী সব মেয়ের হাত ভরে চুড়ি পরার আগ্রহের কমতি নেই। শাড়ি ছাড়াও সালোয়ার কামিজ, টপস এবং কুর্তির সঙ্গে মানিয়ে চুড়ি পরে থাকে অনেকেই। আমাদের বাঙালীদের যেকোনো উৎসবে কাচের চুড়ির জনপ্রিয়তা বরাবরই বেশি। এর পাশাপাশি প্লাস্টিক, কাঠ, মাটি, পুঁতি ও সুতার তৈরি চুড়িও ইদানিং বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। শুধু তাই নয় আজকাল তো চুড়ি দেশে–বিদেশেও রপ্তানী করা হচ্ছে। তাই তুমি চাইলে মেয়েদের সবথেকে পছন্দের এই পণ্যটাকে কেন্দ্র করে একজন সফল উদ্যক্তা বনে যেতে পারো।
কিভাবে ব্যবসা শুরু করবেন?
চুরির ব্যবসা বড় শহর, ছোট শহর বা গ্রামে খুব সহজেই শুরু করা যেতে পারে। আমাদের হিন্দু বিবাহিতা মেয়েদের তো চুরু পড়তেই হয়। এছাড়াও বিভিন্ন উৎসবে, ঘোরোয়া অনুষ্ঠানে সব মেয়েই কিন্তু কম বেশী চুড়ি পরে। আজকাল উৎসব ভেদে চরড়ির কালার, ডিজাইন ভিন্ন ভিন্ন হয়। তাই সারা বছর এই শৌখিন গহনাটির চাহিদা ব্যপক। আমাদের দেশে রাজ্য হিসেবে চুড়ির বৈশিষ্ট আলাদা হয়ে থাকে। তাই তুমি যদি আমাদের বাংলায় চুড়ি ব্যবসার কথা ভেবে থাকো তবে বাংলার স্বতন্ত্র বৈশিষ্টের দিকে তোমাকে খেয়াল রাখতে হবে।
চুড়ির দোকান শুরু করার জন্য তেমন কোন কারিগরি জ্ঞান বা শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন নেই। তবে নতুন নতুন ডিজাইনের চুড়ি ও বাজারে কেমন চুড়ির চাহিদা রয়েছে এসব বিষয়ে প্রতিনিয়তোই খোজ রাখলে এ ব্যবসায় ভালো করা যায়।
লাইসেন্স দরকার আছে কি না?
তুমি যে দোকান শুরু করতে যাও না কেনো লাইসেন্স দরকার হবেই। তাই, ব্যবসা শুরু করার আগে রাজ্য সরকার দ্বারা নির্দিষ্ট মধ্যে তোমার নতুন চুড়ি ব্যবসার জন্য দোকান করার লাইসেন্স প্রয়োজন। এছাড়াও তোমার আঁধার কার্ড দিয়েও তুমি প্রথমিকভাবে কাজ চলাতে পারো তবে একটা সময় লাইসেন্স করতেই হবে। তোমার চুড়ির ব্যবসা যদি বড় হয় তবে জিএসটি করে নেওয়াও অবশ্যক। অন্যদিকে বিদেশে রপ্তানি করতে চাইলে রপ্তানি করার লাইসেন্সও করে নিতে হবে।
কোথায় থেকে চুড়ি কিনবে?
চুড়ি কেনার জন্য তোমার আশেপাশে একই ধরনের দোকানীদের সাথে যোগাযোগ করে একটা পরামর্শ নিয়ে নিতে পারো। তোমার নিকটস্থ চুড়ির পাইকেরী দোকান থেকেও তুমি বিক্রির জন্য চুড়ি কিনতে পারো। এছাড়াও দিল্লির চাঁদনী চক, জয়পুরের জোরিবাজার, হায়দ্রাবাদের লট মার্কেট এবং কোলকাতায়ও কিছু পাইকেরী দোকান আছে যেখান থেকে তুমি চুড়ি কিনতে পারো।
তোমার চুড়ির দোকানের জন্য কেমন লোকেশন নির্ধারণ করবে?
মেয়েদের চুড়ি নিয়ে ব্যবসা করার জন্য তোমাকে অবশ্যই একটি ভালো লোকেশন ঠিক করতে হবে। যদি দোকানটি ভালো পয়েন্টে না হয় তাহলে পণ্যের ক্রেতা কমে যাবে। তাই দোকানের স্থান নির্বাচনে বিশেষ নজর দিতেই হবে। অর্থাৎ যেসব রাস্তায় লোকজন বেশি চলাচল করে এমন স্থান দোকানের জন্য নির্বাচন করলে ভালো হয়। এতে করে ক্রেতার সংখ্যা বাড়বে। অন্যদিকে তুমি ইচ্ছে করলে মেয়েদের স্কুল কলেজের সামনে বা মন্দিরের সামনেও এরকম দোকান খুলে বিসতে পারো এতে করে তোমারই লাভ হবে।
এছাড়াও তউমি বাড়িতে বসেই অনলাইনে একটি ওয়েবসাইট করে বা আমাজানের মতন অয়েবসাইটেও চুড়ির ব্যবসা শুরু করতে পারো। ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোমার চূরির ব্যপক প্রচার প্রচারণা করে হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা রেখেও তুমি ঘরে বসে দোকান ভাড়া না নিয়েই ব্যবসাটি শুরু করে দিতে পারো।
দোকানের আয়তন কেমন হওয়া উচিত?
দোকানের আয়তন কেমন হবে তা সব সময় নির্ভর করবে তোমার পুঁজির উপর। অর্থাৎ পুঁজি যদি বেশি হয় তাহলে দোকানের আয়তন বড় নির্ধারণ করতে হবে। আর পুঁজি যদি কম হয় তাহলে ছোট দোকান নির্ধারণ করা উপযুক্ত হবে। তোমার দোকান যেমনই হোক না কেনো চুড়ির ডিসপ্লে ভালো হলে বিক্রিও ভালো হবে। একেবারে সোজা ভাষায় বলতে গেলে তোমার দোকানের পণ্যের মান ভালো হলে দোকান ছোট বা বড় সেটা কোন বিষয় না। আজকাল তো কিছু মানুষ ফেরী করেও এসব পণ্য সামগ্রী পাড়া মহল্লায় বিক্রি করে ভালো রোজগাড় করছে।
ডেকারেশন কেমন হবে?
মেয়েদের চুড়ি নিয়ে ব্যবসার ক্ষেত্রে তোমার পণ্যের ডিসপ্লে প্রদর্শন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দোকান কিভাবে সাজাবে তা কি ধরেনের পণ্য নিয়ে বিক্রি শুরু করছো তার নির্ভর করবে। বিক্রি বাড়াতে দোকানের ডিসপ্লে প্রতি ১৫ থেকে ২০ দিন পর পর পরিবর্তন করা উচিত। এতে নতুন গ্রাহক আকৃষ্ট হতে পারে। তোমার গ্রাহকেরা যেন দোকানটিতে কেমন পণ্য রেখছো তা বাহির থেকেই দেখতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। সেজন্য ভালো মানের পণ্য দিয়ে দোকানে সাজিয়ে রাখতে হবে যেন সহজেই গ্রাহকের চোখে পড়ে।
বিশেষ করে তোমার দোকান সাজাতে আকর্ষণীও রং ও বড় সাইজের আয়নার ব্যবস্থা রাখতে হবে। এতে করে দোকানটি দেখতে যেমন সুন্দর লাগবে তেমনি গ্রাহকদের আকৃষ্ট করবে। এছাড়া ডেকোরেশনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো দোকানের সাইনবোর্ড যা দোকান কে গ্রাহকদের কাছে পরিচিত করতে সহায়তা করবে। তাই এসব দিক লক্ষ্য রাখে এই দোকানের ডেকোরেশন করা উচিত।
দোকানর প্রচার প্রচারণা ও ব্যবসার কৌশল কেমন হবে?
যে কোন ব্যবসার শুরুতে ক্রেতা আক্রষ্ট করতে মূল্য ছাড়ের ব্যবস্থা রাখতে হয়। তাছাড়া ব্যবসার ক্ষেত্রে ভালো ক্রেতার সাথে সু সম্পর্ক গড়ে তোলাই মূলত ব্যবসার প্রসারের মূল মন্ত্র। তুমি চ্চাইলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোমার ব্যবসার বিজ্ঞাপণ প্রচার করে এলাকার সবাইকে জানিয়ে দিতে পারো। এলাকার গুরুতবপূর্ণ মোড়, মন্দিরের সামনে বা মেয়েদের স্ককুল কলেজের সামনে ব্যনার দিয়েও সবাইকে আকৃষ্ট করা যেতে পারে।
কেমন পুঁজি বিনিয়োগ করতে হবে?
চুড়ির ব্যবসা করার জন্য চুড়ির কোয়ালিটির উপড়ে তোমার দাম নির্ভর করে। তুমি কেমন চুড়ি নিয়ে ব্যবসা করতে চাচ্ছ সেটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যাইহোক, তোমার নিজস্ব দোকান থাকলে তো দোকান ভাড়াটা বেঁচে গেলে অন্যথায় দোকানের ভাড়া দরকার পরবে। অন্যদিকে দোকান ডেকোরেশন করারও দরকার আছে। এসব বাদ দিয়ে প্রাথমিকভাবে একটি মঝারি ধরনের ভালো চুড়ির ব্যবসা শুরু করার জন্য তোমাকে ৫ থেকে ১২ হাজার রুপি বিনিয়োগ করার দরকার হবে। যদি আরও বড় করে দোকান শুরু করতে চাও তবে চুড়ির জন্য ৫০ হাজার রুপি বিনিয়োগ করলেই চলবে।
কেমন লাভ হবে?
চুড়ি বিক্রির ব্যবসা শুরু করে তুমি খুব আলো আয় করতে পারো। চুড়ির মান, ডিজাইন, মারকেটে চুড়ির চাহিদা অনুযায়ী তুমি বিক্রি করতে পারো। কিছু চুড়িতো অনেক ভালো দামে বিক্রি হয়। ২ রুপির চুড়ি ২০ রুপিতে, আবার ২০ রুপির চুড়ি কখনো ২০০ রুপিতে বিক্রি হয়। এখন তুমি নিজেই হিসেব করে দেখতে পারো চুরুর ব্যবসায় কেমন লআভ হয় আর এই লাভের হিসেবে তুমি কেমন টাকা আয় করতে পারো।
বর্তমান সময়ে মেয়েদের আইটেম নিয়ে ব্যবসা করা সবথেকে লাভজনক। খুব স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে অধিক আয় করা যায় বলে চুড়ির ব্যবসায় লস নেই বললেই চলে। তাই তুমিও চাইলে এই ব্যবসায়িক কৌশল কাজে লাগিয়ে একটা চুড়ির দোকানের মালিক হয়ে যেতে পারো।