কীভাবে চিংড়ি চাষের ব্যবসা শুরু করবেন
আপনি যদি লাভজনক চিংড়ি চাষের ব্যবসা শুরু করতে চান, তবে এই পোস্টটি আপনার জন্য। আমরা এখানে চিংড়ি চাষের ব্যবসা সংক্রান্ত একটি বিস্তারিত গাইড ও তথ্য দিয়েছি। এছাড়াও, প্রবন্ধটিতে সামুদ্রিক ও মিঠা জলে চিংড়ি চাষ, স্টার্ট আপ ব্যয়, মুনাফা ইত্যাদি সম্পর্কে একটি মোটামুটি ধারণা দেওয়া হয়েছে।
সাধারণভাবে, বাণিজ্যিক দিক দিয়ে চিংড়ি চাষ জলজ চাষের ব্যবসার আওতায় আসে। চিংড়ি পালন করার বিভিন্ন রকম উপায় রয়েছে। এর মধ্যে সামুদ্রিক সংস্কৃতি বা নোনা জলে চাষ, মিঠা জলে চাষ এবং গৃহমধ্যস্থ বা ইন্ডোর খামার তৈরি করে চাষ।
যদি আপনার কাছে জলাশয় না থেকে থাকে তবে আপনি বড় ট্যাঙ্কে এই চাষ শুরু করতে পারেন। তবে ট্যাঙ্কগুলি রাখার জন্য আপনার কাছে অবশ্যই পর্যাপ্ত জায়গা থাকতে হবে। তাজা ও প্রক্রিয়াজাত চিংড়ির বাজারে ভালো চাহিদা আছে। তাছাড়াও, এর বিশ্বব্যাপী ভালো রফতানির সুযোগ রয়েছে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র হল এর বৃহৎ ভোক্তা।
বর্তমানে সাদা রঙের পা যুক্ত চিংড়ির চাহিদা বাজারে সর্বাধিক বেশি। চিংড়ির চাহিদা বিগত কয়েক বছরে ৫ পার্সেন্ট হারে বেড়ে চলেছে। সারা বিশ্বজুড়ে মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যকর খাদ্য পণ্য গ্রহণের দিকে তাদের খাদ্যাভ্যাসটি সরিয়ে নিচ্ছেন, এর ফলে মানুষের মধ্যে সামুদ্রিক খাবার গ্রহণের প্রবণতা বাড়ছে। যা চিংড়ি উৎপাদনকারীদের চিংড়ি পালন করতে উৎসাহিত করবে।
উন্নয়নশীল অঞ্চলের শহরের জনসংখ্যা বাড়ার ফলে তাদের সামুদ্রিক খাবারের চাহিদা বাড়তে থাকে। মানুষের সামুদ্রিক খাবারের উপর তাদের ব্যয়বৃদ্ধির প্রবণতা বিভিন্ন ধরনের প্রজাতির চিংড়ি পালনে উৎসাহিত করবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
তাজা এবং হিমায়িত সামুদ্রিক খাবারের চাহিদা গোটা বিশ্ব বাজারে বৃদ্ধি পাওয়া চিংড়ি বাজার বৃদ্ধির জন্য অন্যতম প্রধান কারণ। সুতরাং জলজ পালন প্রকল্প শুরু করতে চান এমন উদ্যোক্তাদের জন্য চিংড়ি চাষের ব্যবসা শুরু করা অত্যন্ত লাভজনক।
যে সব দিকে খেয়াল রাখবেন
প্রথমত
যেকোনো চাষের মত চিংড়ি চাষ শুরু করার আগেও আপনার মূলধন বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়। এর পরিমাণ প্রয়োজনও খামারের আকার ও উৎপাদন কেমন হবে উপর নির্ভর করে। সুতরাং সে পরিমাণ বিনিয়োগের জন্য আপনাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে।
দ্বিতীয়ত
চিংড়ি চাষে ও বিভিন্নতা লক্ষ্য করা যায় ও বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ি চাষ হয়। এবং এই ভিন্ন প্রজাতির চিংড়ি চাষের উপর আপনার লভ্যাংশের পরিমানও নির্ভর করে। তাই সঠিক প্রজাতির চিংড়ি চাষ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তৃতীয়ত
যদিও ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে কোনরকম শিক্ষাগত যোগ্যতা দরকার হয়না কিন্তু আপনাকে অবশ্যই এই সম্পর্কে কিছু জ্ঞান ও দক্ষতা আহরণ করতে হবে। কমপক্ষে আপনাকে অবশ্যই এক বছরের জন্য ফার্ম হ্যান্ডলিংয়ের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
চতুর্থত
আপনি যে জায়গায় বসবাস করছেন সেই জায়গার অনুসারে আপনাকে ফার্ম টেকনোলজি ব্যবহার করতে হবে। যদি আপনি উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাস করেন তবে সামুদ্রিক চিংড়ি চাষ আপনার জন্য একটি লাভজনক বিকল্প হতে পারে। অন্যথায় আপনি পুকুর ও ইনডোর চিংড়ি চাষের বিকল্প বেছে নিতে পারেন।
চিংড়ি চাষের প্রযুক্তিগুলো কেমন
সামুদ্রিক চিংড়ি চাষ
সামুদ্রিক চিংড়ি চাষ লবণাক্ত জলের চিংড়ি চাষ হিসেবে জনপ্রিয়। এটি চিংড়ি ফার্মিং এর একটি ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি। আজকাল আপনি ফার্মিং এর জন্য অনেক আধুনিক কৌশল পেয়ে যাবেন যাতে ফলন অনেক বেশি ও ভালো হয়।
মিষ্টি জলের চিংড়ি চাষ
আপনার এলাকার পরিবেশ উষ্ণ জলবায়ুর অন্তর্ভুক্ত হলে মিষ্টি জলের চিংড়ি চাষ আপনার জন্য উপযুক্ত। মিষ্টি জলের চিংড়ি চাষের প্রক্রিয়া গুলির মধ্যে আপনার কিশোর চিংড়িগুলি প্রাপ্তবয়স্ক রূপে তাদের বাড়ানো এবং বিক্রি করা এই কাজের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও আপনি ট্যাংক গুলিতে চিংড়িগুলো বাড়িয়ে তুলতে পারেন।
ইনডোর চিংড়ি চাষ
এমনকি আপনার কাছে যে জলাশয় না থাকে তাও আপনি চিংড়ি চাষ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে বড় বড় ট্যাংক কিনতে হবে এবং তার মধ্যে আপনি চিহ্নগুলি বাড়িয়ে তুলতে পারেন। এভাবে চাষের জন্য আয়তক্ষেত্র কার এবং বৃহৎ বৃত্তাকার ট্যাংক উভয়ই ব্যবহার করতে পারেন।
চিংড়ি চাষের ব্যবসা যেভাবে করবেন
জায়গা নির্বাচন
চিংড়ি চাষে ব্যবসায় সাফল্য তার পুকুরের মানের উপর নির্ভর করে।সাধারণত নতুন জলাশয় গুলি চাষের উপযোগী থাকে না তার কারণ পুকুরগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার পাওয়া যায় না। প্রধানত চিংড়ি গুলি পোকামাকড়ের লার্ভা এবং শেওলা গুলি খেতে পছন্দ করে যা নতুন পুকুরে খুঁজে পাওয়া যায় না। একটি প্রাকৃতিক পুকুর বাণিজ্যিক চিংড়ি চাষের জন্য সেরা উৎপাদন দেয়।
চিংড়ি হ্যাচারি
সাধারণত হ্যাচারি গুলো বিভিন্ন ধরনের হয়। ছোট আকারের হ্যাচারি গুলি খুব সাধারন। এই হ্যাচারি গুলি ছোট ট্যাংক যা ১০ টনেরও কম ক্যাপাসিটি মূলক হয় এবং এর মধ্যে জীব লালন-পালনের ঘনত্ব খুবই কম হয়।
গ্রীন ওয়াটার হিটার গুলি হল মাঝারি আকারের হ্যাকার। এগুলো আরেকটু বড় হয় কিন্তু এখানেও জীবের ঘনত্ব কম রাখা হয়। চিংড়ির লার্ভা খাওয়ানোর জন্য এবং বড় করার জন্য এই ট্যাংক গুলি ব্যবহার করা হয় এখানে বেঁচে থাকার হার প্রায় ৪০ পার্সেন্ট।সাধারণত বৃহত্তর শিল্পের জন্য ব্যবহৃত হ্যাচারি গুলি একটি বড় এবং শক্ত ভাবে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে পরিচালিত করা হয়। এখানে ট্যাংকগুলি খুব বড় হয়(১৫-৩০ টন) এবং চিংড়ির প্রজনন করানো হয়।
পোনা চিংড়ি সংগ্রহ
বৃদ্ধি সময়কালে চিংড়ি তাদের বেশিরভাগ সময় পুকুরের তলদেশে ব্যয় করে তাই সাইটের নির্বাচনের ক্ষেত্রে মাটির প্রকারটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত ৯০ শতাংশের বেশি মৃত্তিকা এবং ৬.৫ -৮.৫ এর মধ্যে পিএইচ যুক্ত কাদামাটি বা দোঁভিত্তিক পছন্দনীয় । এবং প্রকৃতির কারণে আপনাকে বেলে বা রেশমি মাটি যুক্ত সাইটগুলি গুলি এড়াতে হবে। সুতরাং স্টক সংগ্রহের আগে আপনাকে অবশ্যই মাটি পরীক্ষা করাতে হবে। একর প্রতি ১২০০০-১৬০০০ হারে স্টক নিতে হবে। এর নিচে স্টক নিলে স্তরের ঘনত্ব অনুসারে আপনার চিংড়ির আকার বাড়িয়ে তুলবে কিন্তু ফলনের মোট পাউন্ডেজ হ্রাস পাবে।
চিংড়ি চাষের সরঞ্জাম
চিংড়ির বাণিজ্যিক চাষের জন্য সরঞ্জামগুলির নির্দিষ্ট ব্যবহার জানতে হবে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম তালিকার মধ্যে রয়েছে অ্যারেটর, পি এল কাউন্টার এবং পাম্পিং সিস্টেম ইত্যাদি।
দেখাশোনা কিভাবে হবে
সাধারণত চিংড়ি গুলি সবুজ শ্যাওলা খেয়ে বেঁচে থাকে। চিংড়ি পাঁচগ্রাম বা তার বেশি আকারের ছাড়িয়ে গেলে খাওয়ানো শুরু করুন। খাওয়ানোর মাছের আকার এর উপর নির্ভর করে। আপনি বাজার যত আকার অনুসারে চিংড়িগুলো বাড়ানোর পরে আপনাকে এগুলো সংগ্রহ করতে হবে। টাটকা চিংড়ি অত্যন্ত বিনষ্ট যোগ্য। সুতরাং চিংড়িগুলো সংরক্ষণের জন্য আপনাকে অবশ্যই দ্রুত হিমশীতল ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় চিংড়ি সংগ্রহ করে আপনাকে তাজা চিংড়িগুলো দ্রুত বাজারে পাঠাতে হবে।
এই চিংড়ী চাষ একটি লাভজনক ব্যবসা রাই এই ব্যবসা শুরু করে আপনি খুব সহজেই লাভবান হয়ে সফল উদ্যক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন।