কাগজের প্লেটের ব্যবসা কিভাবে শুরু করবেন?
বিয়ে বাড়ি হোক বা পিকনিক, রাস্তা ধারের ঝালমুড়ি বা ছোলা, কিংবা ধরুন আপনার কাজের লোক ডুব মেরেছে ধুলো বাড়িময়, এহেন অবস্থায় আপনার ত্রাতা কাগজের প্লেট। কিন্তু ভেবেছেন কি কখনো এই প্লেট বাড়িতে বানিয়ে রোজগার করতে পারার কথা? শুনতে একটু কঠিন লাগলেও সমীক্ষা বলছে বহু আধুনিক নাগরিক এখন পেপার প্লেটের ব্যবসায় প্রচুর রোজগার করছেন।
তাহলে আসুন দেখে নি আমরা এই ব্যবসা শুরুর করার গোড়ার দিক গুলি।
পেপার প্লেট ব্যবসা কি ও কেন এটি লাভজনক?
কাগজের প্লেট সাধারণত ব্যবহার হয়ে দৈনন্দিনের কাঁচ, স্টিল প্রভৃতির পরিবর্তে, শুধু মাত্র বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে ও সময়ে। শ্রেণী বিভাগ করলে দেখা যাবে কাগজের প্লেট ব্যবহার দুই প্রকার;
১.গার্হস্থ
২.বাণিজ্যিক
বাড়িতে কোনোদিন অতিথি বেশি এলে বা বাসন ধোয়ার অসুবিধে থাকলে যেমন ব্যবহার হয়ে এই প্লেটের তেমনি বিয়ে বা যেকোনো সামাজিক বা ধার্মিক অনুষ্ঠানে নির্ভরযোগ্য এই কাগজের প্লেট।
বাণিজ্যিক ব্যবহারে বলতেই হয় স্ট্রিট ফুড বা রাস্তার ধারের খাদ্য বিপণি গুলির কথা। আর এখানেই হয় এই কাগজ প্লেটের সর্বাধিক বিকিকিনি। আবার যদি অনুষ্ঠান এর ক্যাটারিংয়ের প্রসঙ্গে বলা যায় সেখানে কাগজ প্লেট ব্যক্তি ব্যবহারের সীমানা টপকে পৌঁছে যায় বাণিজ্যে।
ভারতে তাই কাগজের প্লেটের চাহিদা অত্যন্ত বেশি। আর যোগানের বাজার যথেষ্ট শক্তিশালী। তাই আপনি যদি নামতে চান এই ব্যবসায়, মনে রাখতে হবে এই ক‘ টি কথা:
মূলধন কিরকম লাগবে:
এই ব্যবসায় মূলধন বেশি লাগেনা কারণ একটি একশো স্কোয়ার ফুটের জমিতেই আপনি শুরু করতে পারেন আপনার ব্যবসা। উৎপাদনের মেশিনের অনেক শ্রেণী আছে তবে আপনাকে দেখে নিতে হবে ঘন্টায় কত গুলি প্লেট তারা প্রজনন করতে পারে। একটি সাধারণ মেশিন কিনতে আপনার পড়বে ৭৫০০০ থেকে ৫০০০০০ টাকা। সরাসরি কাগজ উৎপাদনের থেকে আপনার পক্ষে বাতিল কাগজ জোগাড় করা সহজলভ্য হবে। স্থানীয় বাতিল জিনিসের কারবারীরাই আপনাকে দিতে পারে তা অতি অল্প দামে। আপনার তিনজন শ্রমিক লাগবে উৎপাদন শুরুর সময়।
আর কি কি খেয়াল রাখতে হবে:
আপনার উৎপাদনের জমিতে অবশ্যই থাকতে হবে যথাযত জল ও বিদ্যুৎ সংযোগ এবং সরবরাহ। সরকারি দপ্তরের অনুমতি ও শ্রম, কর প্রভৃতির নথিকরণ ও ছাড়পত্র তৎপরতার সাথে করতে হবে।
কিছু জরুরি পরামর্শ:
বিনিয়োগের মূলধন পেতে পারেন ভারত সরকারের মুদ্রা যোজনার সাহায্যে যা ছোট ব্যবসায়ীদের দিচ্ছে পঞ্চাশ হাজার থেকে দশ হাজার অব্দি অর্থ সাহায্য।
নেটওয়ার্কিং বা পরিচিতি বাড়ান স্থানীয় খাদ্য বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের সাথে। নিজের বাজার তৈরী করুন আপনার প্লেটের আয়তন, গুণগত মান ও ঘন্টায় প্লেটের উৎপাদন সংখ্যার আধারে।
যে কথাটির ব্যাপারে ভুলে গেলে একেবারেই চলবে না তা হলো পরিবহনের খরচ। আপনার উৎপাদন করা প্লেটগুলি ঠিকঠাক ভাবে বাক্সবন্দী করে আপনাকেই তা পৌঁছে দিতে হবে আপনার ক্রেতার দোরগোড়ায়। সে ক্ষেত্রে জ্বালানি ইত্যাদির খরচ অবশ্যই মাথায় রাখবেন।
ব্যবসা শুরু করার আগে আপনাকে ভাবতে হবে আপনার স্কেল অর্থাৎ ব্যাপ্তি সম্পর্কে। আপনি যদি ছোট খাটো রূপে শুরু করতে চান তাহলে আপনার খুব বেশি বিনিয়োগ পড়বে না কিন্তু আপনি যদি শুরু থেকেই কিংবা ব্যবসা একটু গতি বাড়ালে, একটু বেশি স্কেলে উৎপাদন করতে চান তাহলে মনে রাখতে হবে সেইরকম জমি, শ্রমিক , ইত্যাদি আর তার সাথে সাথে বাড়াতে হবে আপনাকে আপনার মেশিনের গুণগত মান। তাহলে বুঝতেই পারছেন আপনার বিনিয়োগ যদি সামান্য হয় শুরুতে আপনার মুনাফা সহজেই আসবে কিন্তু যদি বিনিয়োগ বেশি করতে চান আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে ক্রমঃ উন্নতির অপেক্ষায়।
আচ্ছা ধরুন আপনি ছোট বাজেটে কাজ করবেন ভেবেছেন। আপনি একটি মেশিনে কাজ করেন যেটি আপনাকে ১৬০০০ প্লেট দিচ্ছে ৮ ঘন্টার মধ্যে। আপনি আগামী দিন এই কটি প্লেট বিক্রি করবেন কথা দিয়েছেন আপনার বাঁধা ক্রেতাকে। এমন সময় আপনার মেশিনটি গেলো বিগড়ে। এবার? আপনার ব্যবসার যা ক্ষতি তাতো হলোই উপরন্তু আপনার সুনামটি নষ্ট হলো। হয়তো এবার ক্রেতা পেতেও মুশকিল হবে। তাই একটি অতিরিক্ত মেশিন রেখে দেয়ার কথা রেখে দেবেন আপনার মূলধন হিসেবের চিন্তা ভাবনার অন্তর্গত করে।
প্লেটের মালমশলা নিয়েও ওয়াকিবহাল থাকাটা দরকারি। অনেক জায়গায় প্লাষ্টিক কোটিং বা ল্যামিনেশন সরকারি ভাবে নিষিদ্ধ। অনেক ব্যবসায়ী পছন্দ করে হালকা প্লেট, অনেকে আবার একটু ভারী। আপনার মেশিনের ঘন্টায় প্রতি কতগুলি করে প্লেট তৈরী করার ক্ষমতা আর তাদের নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন নিয়েও খেয়াল রাখতে হবে বৈকি। শুধু ব্যবসায়ীদের পছন্দের কথা ভেবে নয় পরিবহন এর কথা ভেবেও এগুলি খেয়াল রাখবেন।
পরিচিতি গড়ে তোলার জন্য কিছু উদাহরণ স্বরূপ প্লেট অবশ্যই বানাবেন। একদিনের উৎপাদনে প্রথমেই বাজারে গিয়ে গড়ে তুলবেন আপনার পরিচিতি এই উদাহরণ গুলি দেখিয়ে।
অবশ্যই বিক্রি করবেন সরাসরি ভাবে ক্রেতাকে। কখনো পাইকারি বিক্রেতার কাছে আপনার জিনিস নিয়ে যাবেন না। তাতে আপনার মুনাফা অনেকাংশেই কমে যাবে।
আদর্শভাবে আপনার প্রতি দিন ১০০০০ থেকে ৫০০০০ প্লেট বিক্রি হওয়া উচিত। তাহলেই আপনার ব্যবসা সাফল্যের দিকে যাবে।
প্রতিযোগিতা দেখে ভয় পাবেননা। অনেক বড় বড় সংস্থা হয়তো অনেক কম দামে প্লেট বিক্রি করছে কিন্তু আপনি ভাবুন কিভাবে আপনি আপনার প্লেটগুলিকে স্বতন্ত্র করে তুলতে পারেন। সৃজনশীল হন। নতুন নতুন ভাবনা ও আদর্শ যা ছড়িয়ে পড়ছে সারা পৃথিবীতে ইন্টারনেটের সাহায্যে সেগুলির খোঁজখবর রাখুন। চেষ্টা করুন পচনশীল মালমশলা ব্যবহার করতে যা প্রকৃতির ক্ষতি করবে না উপরন্তু আপনার ক্রেতাদের দেবে একটি অভিনব খ্যাতি ও পরিচিতি যা আখেরে আপনারই ব্যবসার জন্য ভালো হবে।
স্বপ্ন দেখতে শিখুন। কোনো ব্যবসায়ী ক্ষুদ্র গন্ডির মধ্যে আজীবন আবদ্ধ থাকে না। মনে রাখবেন একটি ছোট ইঁদুর ছিল আজকের ওয়াল্ট ডিজনির প্রথম ও প্রধান সোপান। কাগজ প্লেটের ব্যবসা তুলনামূলক ভাবে দেখতে গেলে অন্য উৎপাদনকারী ব্যবসার থেকে অনেক বেশি সহজ ও সরল। চেষ্টা করবেন আস্তে আস্তে ব্যবসার পরিধি বাড়াতে। বিভিন্ন আরো পণ্য উৎপাদন করার কথা ভাবুন। আপনার প্রাপ্তিকে আপনার সাফল্যের মাপকাঠি করবেন না। আপনার অনুদানকে আপনার সার্থক সাফল্য ভাবতে শিখুন। আপনি ভবিষ্যতে অনেককে চাকরি দেবেন, ব্যবসা দেবেন, এই স্বপ্ন দেখুন। আপনি নয় আপনার অধস্তন কর্মীরা করবে উৎপাদনের কাজ, আর আপনি যাবেন এ রাজ্য থেকে ও রাজ্য আপনার ব্যবসার কথা বলতে বড় বড় সংস্থার হোমরা চোমরাদের সাথে। এটাই আপনার লক্ষ্য হওয়া উচিত। অল্পতে থেমে যাবেন না। বর্তমান সময়ে যখন চাকরি নিয়ে টানাটানি। উপার্জন অনিশ্চিত তখন হয়তো আপনার মতো আরো অনেকের উদ্যোগে কাটবে এই সমাজের এই আর্থিক অনিশ্চয়তা।
আপনার ব্যবসা নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে কি করবেন:
সব কিছুই বিবর্তনশীল। আপনার ব্যবসাও। তাই সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলা টা দরকারি। বর্তমান অতিমারীর প্রকোপ পড়েছে খাদ্য বাণিজ্যের ওপরেও। কিন্তু খাবার মানুষের প্রাথমিক চাহিদা তাই আপনি যদি যথেষ্ট সুরক্ষা অবলম্বন করে আপনার প্লেট গুলি ছড়িয়ে দিতে পারেন বাজারে, দেরিতে হলেও মুনাফা অবশ্যই আসবে। আর শুধু স্থানীয় বাজারে নয়, পৌঁছে যান ইন্টারনেটের সাহায্যে পৃথিবীর দরজায়। আপনার ব্যবসাকে করে তুলুন আধুনিক ও সময়োপযোগী।
সব শেষে যেটা বলার সেটা হলো এই ব্যবসায় মুনাফা লাভ যথেষ্ট সন্তোষজনক কারণ কাঁচা মাল কেনা সহজ। একটি সাধারণ গুনের মেশিন আপনাকে দেবে দু হাজার প্লেট প্রতি ঘন্টায়। শুধু খেয়াল রাখবেন মেশিন কেনার সময় প্রতারিত হবেননা যেন। অনেক শঠ বিক্রেতার মিথ্যে প্রলোভন দেখিয়ে সন্দেহজনক মেশিন বিক্রি করার প্রবণতা দেখা যায়।